দক্ষিণ ভারতের কেরালায় পাহাড়ঘেরা সবুজ ভূখণ্ড থেকে শুরু হয়েছিল এক ক্ষুদ্র দানার অসাধারণ যাত্রা। রেইনফরেস্টে জন্ম নেওয়া এই সবুজ দানার নাম এলাচ। কালের বিবর্তনে রাজদরবার থেকে দাওয়াখানা হয়ে আজকের রান্নাঘর—দুনিয়ার সবখানেই জায়গা করে নিয়েছে এই মসলা। মুঘল হেঁশেলের সুগন্ধি পোলাও কিংবা প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রে দাওয়াই—সবখানেই এলাচ হয়ে উঠেছে অপরিহার্য নাম। কয়েক হাজার বছর আগে উৎপাদন হওয়া এই সবুজ দানা নিজ দেশ পেরিয়ে মহাদেশ ছুঁয়ে পৌঁছে গেছে সারা বিশ্বের রসুইঘরে।

এলাচের ইউরোপ যাত্রা

এলাচের ইতিহাস প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ অ্যান্ড্রু ডলবি তাঁর ‘ডেঞ্জারাস টেস্টস: দ্য স্টোরি অব স্পাইসেস’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, প্রাচীনকালে এক মুঠো এলাচি দিয়ে একজন দাস কেনা যেত। এ থেকে বোঝা যায়, সে সময় থেকেই এলাচ কতটা মূল্যবান মসলা ছিল।

দক্ষিণ ভারতের বর্তমান কেরালার পশ্চিম ঘাটে পাহাড়ি অঞ্চলে প্রথম এলাচের চাষ হয়। এখানে ‘এলাচ পর্বত’ নামে একটি পর্বত আছে। এ অঞ্চলের অনুকূল আবহাওয়া, নিয়মিত বৃষ্টি ও উষ্ণ তাপমাত্রা এলাচ উৎপাদনের জন্য আদর্শ আবহাওয়া। এলাচকে বলা হয় ‘মসলার রানি’।

মধ্যযুগে মসলার সন্ধানে আরব বণিকদের যাতায়াত ছিল এ অঞ্চলে। তাঁদের হাত ধরে অন্যান্য মসলার সঙ্গে এলাচও ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপে। সে সময় মসলাজাতীয় পণ্য ছিল প্রাচুর্য আর শৌখিনতার পরিচায়ক।

দক্ষিণ ভারতের বর্তমান কেরালার পশ্চিম ঘাটে পাহাড়ি অঞ্চলে প্রথম এলাচের চাষ হয়। এখানে ‘এলাচ পর্বত’ নামে একটি পর্বত আছে। এ অঞ্চলের অনুকূল আবহাওয়া, নিয়মিত বৃষ্টি ও উষ্ণ তাপমাত্রা এলাচ উৎপাদনের জন্য আদর্শ আবহাওয়া। এলাচকে বলা হয় ‘মসলার রানি’।

ভাস্কো দা গামা ও মসলা বাণিজ্যে পরিবর্তন

ভাস্কো দা গামা ১৪৯৮ সালে প্রথমবারের মতো ভারতের মালাক্কা উপকূলের কালিকট বন্দরে পৌঁছান। তিনিই প্রথম ইউরোপীয়দের সাগর পাড়ি দিয়ে ভারতে আসার পথ দেখান। তিনি কালিকট এলাকায় অবতরণের পর আরব বণিকদের হটিয়ে মসলা বাণিজ্যের সামুদ্রিক পথ ডাচদের নিয়ন্ত্রণে নেন। এরপর থেকে মসলা ইউরোপের নাগরিকদের ক্রয় সীমার মধ্যে চলে আসে। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে চাহিদাও।

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান (নরওয়ে, সুইডেন ও ডেনমার্ক) দেশগুলোর রন্ধনশিল্পের প্রাচীন গল্পে এলাচের প্রথম ব্যবহারের খবর যাওয়া ভাস্কো দা গামার ভারত আসার ৪৮ বছর আগে অর্থাৎ ১৪৫০ সালে। তবে বৈদিক যুগেও এলাচের ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়, যেখানে এর সংস্কৃত নাম ছিল ‘এলা’।

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান মুসলিমরা খাবারদাবারের ঐতিহ্যে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সুইডেনে এলাচ দিয়ে তৈরি করা কার্ডামম বান জনপ্রিয় একটি পেস্ট্রি। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর রান্নাঘর ও বেকারিতে এলাচের ব্যবহার এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

২০২০ সালে ১ ডিসেম্বর ক্লারা সিট্রন তাঁর ‘কার্ডামম: হাউ অ্যান ইন্ডিয়ান স্পাইস বিকেম সুইডিশ স্টেপল’ লেখায় ইউরোপের রন্ধন পুরাতত্ত্ববিদ (কালিনারি আর্কিওলজিস্ট) ডেনিয়েল সিয়েরাকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, স্ক্যান্ডিনেভিয়ানরা সম্ভবত আরব ও স্প্যানিশ মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে এলাচের সঙ্গে পরিচিত হয়। এরপর ধীরে ধীরে নিজস্ব রন্ধনপ্রণালীর সঙ্গে এলাচের ব্যবহারকে আত্মস্থ করে নেয় সুইডিশরা।

বাসিল টমাস নামের ভারতীয় মসলা বিশেষজ্ঞ তাঁর লেখা ‘দ্য হিস্ট্রি অব কার্ডামম: ফ্রম অ্যানসিয়েন্ট এলিক্সির টু মডার্ন ডিলাইট’ শীর্ষক লেখায় বলেছেন, প্রাচীন মিসরে খাবারের সঙ্গে এলাচের ব্যবহারের পাশাপাশি পরিবেশকে সুরভিত করতে ধূপের সঙ্গেও এলাচ ব্যবহার করা হতো। এ ছাড়া মমি তৈরিতেও এলাচ ছিল অন্যতম উপাদান। ভূমধ্যসাগরের তীরে গড়ে ওঠা গ্রিক ও রোমান সমাজের অভিজাতদের খাবারেও এলাচ ছিল গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

ইউরোপে মসলার শৌখিন সংগ্রাহক ম্যাক্স ডমিন ২০২১ সালে তাঁর ‘কার্ডামম, কুইন অব স্পাইস: ইউজ অ্যান্ড অরিজিন’ শীর্ষক লেখায় বলেছেন, প্রাচীন ভারতে বিশ্বাস ছিল, এলাচের মধ্যে অতিপ্রাকৃত শক্তির উপস্থিতি আছে। এ কারণে পুরানে এলাচকে ‘অ্যাঞ্জেল অব সিড’ (দেবদূত বীজ) হিসেবেও আখ্যায়িত করা হতো। সাপ ও বিছার কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সারিয়ে তোলার কাজেও এলাচের ব্যবহার হতো বলে ম্যাক্স ডমিন এই লেখায় উল্লেখ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভারভিত্তিক ওয়েবসাইট মাইস্পাইসার ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যযুগে অভিজাতরা এলাচের দানা তাদের দাঁত পরিষ্কার ও মুখ সুরভিত রাখার জন্য ব্যবহার করতেন। গ্রিক ও রোমানরা সুগন্ধী ও তেল তৈরিতে এলাচকে একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করত। এলাচের ঔষধি গুণ থাকায় এটিকে পরিপাকতন্ত্রের অসুস্থতা সারিয়ে তুলতেও কাজে লাগাত।

আরও পড়ুনকীভাবে জাফরান বিশ্বের সবচেয়ে দামি মসলা হলো৩১ মার্চ ২০২৫

এলাচ যেখানে হয়

এলাচের উৎপত্তি ভারতের কেরালা থেকে হলেও বর্তমানে গুয়াতেমালা বিশ্বের বৃহত্তম এলাচ উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক দেশ। কিছু অঞ্চলে কফির চেয়েও এলাচকে বেশি মূল্যবান ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গুয়াতেমালা ও ভারত বিশ্বব্যাপী প্রধান এলাচ উৎপাদক। গুয়াতেমালা শুধু ছোট এলাচ উৎপাদন করে। আর ভারত ছোট ও বড় দুই ধরনের এলাচ উৎপাদন করে।

এলাচ উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশগুলো হলো—নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, তানজানিয়া, শ্রীলঙ্কা, লাওস, ভুটান ও মালয়েশিয়া। ইথিওপিয়া কোরেরিমা (ইথিওপীয় এলাচ বা নকল এলাচ) নামে এক ধরনের এলাচ উৎপাদন করে। এই এলাচের বোটানিক্যাল নাম আফ্রামোমাম কর্পোরা; এর বীজ কালো বা বাদামি রঙের হয়।

এলাচ বিশ্বের দামি মসলাগুলোর মধ্যে একটি। এর ওপরে আছে কেবল জাফরান ও ভ্যানিলা।

বাংলাদেশে এলাচের বাজার ও দাম

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের বাজারেও এলাচ বেচাকেনা হয়। বাংলাদেশে গুয়াতেমালা থেকে আসা এলাচ বেশি বিক্রি করা হয়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের এম আর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে দুই ধরনের এলাচ পাওয়া যায়। একটা গুয়াতেমালার ও আরেকটি ভারতের। গুয়াতেমালা থেকে আসা এলাচের দাম বেশি। প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৫ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে।

আবুল কালাম বলেন, ভারত থেকে আসা এলাচের সুগন্ধ ও দানা কম। দামও কম। প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। কালো এলাচের দাম আরও কম। প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৩ হাজার ২০০ টাকায়।

আরও পড়ুনভয় তাড়াবে এলাচি২৭ এপ্রিল ২০২১

‘মসলার বাজার দখলের লড়াইয়ে ২২ দেশ’ শীর্ষক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে ১৭ জাতের এলাচি আছে। দেশে আমদানি হয় অন্তত ১৩ জাতের। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি বা ৯৯ শতাংশই এলাচি আমদানি হয় গুয়াতেমালা থেকে। বাকি এক শতাংশ ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি হয়।

এনবিআরের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে এলাচ আমদানি হয় ৬ হাজার ৬৯৫ টন। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে এলাচ আমদানি হয়েছে ৬ হাজার ৭৩৪ টন।

পাইকারি গরম মসলা সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ভারত ও গুয়াতেমালা থেকে বাংলাদেশে এলাচ আসে। তবে, সেটা সরাসরি আসে না। দুবাই হয়ে আসে। এলাচের দাম নির্ভর করে আবহাওয়া কেমন থাকে তার ওপর। এলাচ উৎপাদনের সময় যখন যে দেশে আবহাওয়া ভালো থাকে তখন সে দেশের এলাচের দাম বেশি হয়।

এনায়েত উল্লাহ আরও বলেন, ‘সরকার ডিউটি (শুল্ক) বাড়ানোর পর থেকে এলাচের আমদানি কমে গেছে। এখন যা আসে তার অধিকাংশই চোরাই পথে আসে।

আরও পড়ুনভরা পেটে এলাচি খেলে এত উপকার১৬ জানুয়ারি ২০২৫

এলাচের যত গুণ

মসলার রানি এলাচ খাবারে অতিরিক্ত স্বাদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হলেও এতে আছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাট, মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটসহ কিছু ঔষধি গুণ। ছোট এই মসলা মানবদেহের অনেক সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। এলাচের মধ্যে কালো এলাচ বেশি কার্যকর।

খাদ্য, পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ আলমগীর আলম এর আগে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলেছিলেন, এলাচ ক্যানসার প্রতিরোধসহ হার্ট ও হার্টের ভাল্‌ভ সুস্থ রাখে, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা ও অস্থিরতা কমায়, পেটের অস্থিরতা ও হজমে সহায়ক ছাড়াও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।

এ ছাড়া যাঁদের হার্টের সমস্যা নেই কিন্তু ভয়জনিত সমস্যা আছে তাঁদের জন্য নিয়মিত প্রতিদিন দুবেলা দুটি করে এলাচ মুখে রেখে আস্তে আস্তে চিবিয়ে খেলে এর উপকারিতা পাওয়া যাবে। মাড়ির রক্তপাত ও দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধে এলাচ কার্যকর একটি ওষুধ। মাথাব্যথা থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি পেতে চাইলে একটি এলাচ চিবিয়ে খেলে কিছুক্ষণের জন্য মাথা ব্যথা সারবে। সেই সঙ্গে এলাচ তেলের ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যায়। এলাচে থাকা ম্যাঙ্গানিজ শরীরে ক্ষতিকর উপাদানগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার এনজাইম তৈরি করে শরীরকে বিষমুক্ত রাখে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এল চ র ব যবহ র ব যবহ র কর এল চ র দ ম প রথম আল ও এল চ উপ দ ন এল চ ব ই এল চ ম এল চ র এল চ র জন য মসল র সমস য আমদ ন ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

লতাগুল্ম কেটে আকাশমণি রোপণ, খাদ্যসংকটে হাতি

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ঈদগড় বাজার থেকে ঈদগড় সড়ক ধরে চার কিলোমিটার এগোলে ভোমরিয়াঘোনা সংরক্ষিত বন। কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় অবস্থিত এই বন এশিয়ান হাতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি চলাচলের ক্ষেত্র (করিডোর)। ২০২৩ সাল পর্যন্ত শতবর্ষী গর্জন, বৈলাম, চাপালিশগাছে ভরপুর বনটিতে ঘন ঝোপঝাড়, লতাগুল্মের প্রাচুর্য ছিল। দেখা যেত হাতির পালের বিচরণ। তবে টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্পের (এসইউএফএএল বা ‘সুফল’) আওতায় বনায়ন করতে গিয়ে ঝোপঝাড়-লতাগুল্ম কেটে ফেলা হয়েছে। এতে বনের এই অংশে হাতির খাদ্য কমে গেছে। ফলে প্রাণীগুলোর বিচরণও কমে গেছে।

১৪ মে ভোমরিয়াঘোনায় গিয়ে ঈদগড় সড়কের পাশেই বন বিভাগের সুফল প্রকল্পের একটি ফলক চোখে পড়ল। তাতে লেখা আছে, এখানে ১০ হেক্টর জায়গায় ১৫ হাজার চারা রোপণ করা হয়েছে। ফলকে এই বনায়নকে এএনআর (অ্যাসিস্টেড ন্যাচারাল রিজেনারেশন) বলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো চারাকে বড় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার জন্য এই বনায়ন। তবে বনের ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল, সম্প্রতি নিষিদ্ধঘোষিত আকাশমণিগাছের চারা। এই প্রতিবেদক বনের আধা কিলোমিটারের মতো ভেতরে যান। পুরো পথে আকাশমণির চারা দেখতে পাওয়া যায়। বনের আন্ডারগ্রোথ অর্থাৎ গাছের নিচে জন্ম নেওয়া নানা ধরনের লতাগুল্ম, ছোট উদ্ভিদ—সেগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।

কোথায় কোন ধরনের বনায়ন করতে হবে, তা বলা আছে সুফল প্রকল্পের ‘বন পুনরুদ্ধার ও বিভিন্ন বনায়ন পদ্ধতির নির্দেশিকা’য়। এতে এএনআর, এফজিএস (ফাস্ট গ্রোয়িং স্পেসিজ বা দ্রুত বর্ধনশীল প্রজাতি), এসজিএস (স্লো গ্রোয়িং স্পেসিজ বা দীর্ঘ মেয়াদে বর্ধনশীল প্রজাতি) চারা রোপণের মতো ৩২ রকমের বনায়নের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি হেক্টরে চারার সংখ্যা কত হবে, তা–ও নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। যেমন এএনআর বনায়ন করতে হবে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো চারাকে সুরক্ষা দিয়ে। অথচ ভোমরিয়াঘোনায় বনের ঈদগড় সড়ক লাগোয়া অংশে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো চারার দেখা পাওয়া গেল না। বন কেটে লাগানো হয়েছে ১৫ প্রজাতির গাছের ১৫ হাজার চারা। নির্দেশিকা অনুযায়ী এএনআর বনায়নে হেক্টরপ্রতি ৫০০ চারা রোপণের কথা; এখানে লাগানো হয়েছে ১ হাজার ৫০০ করে।

প্রাকৃতিক বনে হস্তক্ষেপ করলে হাতি কেন, অন্যান্য বন্য প্রাণীও সংকটে পড়ে যাবে। প্রকৃতিই আসলে নির্ধারণ করবে কে কীভাবে বেঁচে থাকবে। মানুষের হস্তক্ষেপ যত কমানো যায়, তত ভালো। অধ্যাপক এম এ আজিজ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সরেজমিনে দেখা যায়, ভোমরিয়াঘোনার সংরক্ষিত বনের এক পাশে পুরোটাই কেটে নতুন বনায়ন করা হয়েছে। অন্য পাশে রয়ে গেছে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ঘন বন। বন রক্ষার মাঠপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা (ফরেস্টার) নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, প্রচণ্ড রোদে হাতিরা বনের এই অংশের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়। রোদের তেজ কমলে বের হয়ে বনের ডোবায় পানি আর নলখাগড়া খায়।

অথচ সুফল প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে বৃক্ষশূন্য ও অবক্ষয়িত বনাঞ্চলে বনায়নের জন্য। অর্থাৎ বনের যে অংশে গাছপালা নেই এবং যেসব অংশে গাছপালা কমে যাচ্ছে, সেসব অংশে নতুন করে গাছের চারা লাগানো হবে।

প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বনায়নে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সে অনুযায়ী বৃক্ষশূন্য বা অবক্ষয়িত বনাঞ্চল নেই বন বিভাগের অধীনে। তাই বনের গহিনে এসব বনায়ন করেছে কেউ কেউ। তিনটি জেলা থেকে এফজিএস (দ্রুত বর্ধনশীল প্রজাতি) বনায়নের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ভোমরিয়াঘোনা বনের কিছুটা ভেতরে লাগানো আকাশমণিগাছের চারা। ১৪ মে

সম্পর্কিত নিবন্ধ