ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে রাশিয়ার ‘সবচেয়ে বড়’ ড্রোন হামলা, নিহত ৩
Published: 7th, June 2025 GMT
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলায় অন্তত ৩ জন নিহত এবং আরও ২১ জন আহত হয়েছেন। শহরটির মেয়র ইহর তেরেখভ এ তথ্য জানান। আহত মানুষদের মধ্যে দেড় মাসের একটি শিশু ও ১৪ বছরের এক কিশোরী রয়েছে।
মেয়র ইহর তেরেখভ জানান, খারকিভ শহরের দিকে গতকাল শুক্রবার রাতে ৪৮টি ড্রোন, ২টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৪টি গ্লাইডিং বোমা ছুড়েছে রাশিয়া। প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা গেছে যে এ হামলায় ১৮টি আবাসিক ভবন এবং আরও ১৩টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মেয়র তেরেখভ এ হামলাকে ‘উন্মুক্ত সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে উল্লেখ করে রাতেই টেলিগ্রামে একাধিকবার হালনাগাদ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে শুরুর পর শহরটি এবারই প্রথম ‘সবচেয়ে বড় হামলা’র মুখে পড়েছে।
গতকাল রাতের হামলার বিষয়ে মেয়র তেরেখভ বলেন, দেড় ঘণ্টার মধ্যে ‘কমপক্ষে ৪০টি’ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
নতুন করে হামলার আশঙ্কায় ইউক্রেনের বিমানবাহিনী খারকিভে ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কতা জারি রেখেছে।
ইউক্রেনজুড়ে আগের রাতের রুশ বিমান হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই খারকিভে এ নতুন হামলা চালানো হলো। ওই হামলায় ৬ জন নিহত এবং ৮০ জন আহত হন।
রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনাগুলো এ হামলার লক্ষ্য ছিল। তারা এ হামলাকে ‘কিয়েভ সরকারের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ প্রতিশোধ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এর আগে রাশিয়ার অভ্যন্তরে চারটি সামরিক ঘাঁটিতে কৌশলগত যুদ্ধবিমান লক্ষ্য করে একাধিক ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউর দাবি, ‘অপারেশন স্পাইডারস ওয়েব’ নামের অভিযানে অন্তত ৪০টি রুশ যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলার পাল্টা জবাবে রাশিয়া আক্রমণ আরও জোরদার করেছে।
ইউক্রেনের ওই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।
শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।
পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।
শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।