বৃষ্টি মহান আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। আর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণের সঙ্গে আল্লাহ অনেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকেন। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের রিজিক উৎপন্ন হয়ে থাকে। আল্লাহতায়ালা সুরা শুরার ২৮ আয়াতে এরশাদ করেন, মানুষ নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তাঁর রহমত ছড়িয়ে দেন। তিনিই সব গুণে প্রশংসিত প্রকৃত অভিভাবক। 
বৃষ্টির পানি আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত ও রিজিক নিয়ে আসে। বৃষ্টির পানিতে মৃত ভূমি সজীব হয়। ফল-ফসল উদ্‌গত হয়।

আল্লাহতায়ালা সুরা কাফের-এর ৯ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘আমি আকাশ থেকে বর্ষণ করি কল্যাণকর বৃষ্টি, আর তা দিয়ে সৃষ্টি করি বাগবাগিচা ও কর্তনযোগ্য শস্যদানা।’ 
সুরা নাহলের ৬৫ আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং তা দিয়ে তিনি ভূমিকে তাঁর মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য, যারা কথা শোনে।’

হাদিস শরিফে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.

) বৃষ্টির সময় এই দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা সায়্যিবান নাফিআহ।’ ‘হে আল্লাহ! তুমি এ বৃষ্টিকে প্রবহমান ও উপকারী করে দাও।’ (সহিহ বুখারি) 
বৃষ্টি আল্লাহর রহমত ও করুণা বর্ষণের সময়। তাই এটি দোয়া কবুলেরও উপযুক্ত সময়।
অপর হাদিসে বর্ণিত, হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুটি সময়ে দোয়া প্রত্যাখ্যান করা হয় না। আজানের সময়ের দোয়া এবং বৃষ্টির সময়ের দোয়া।’ (মুস্তাদরাক, তাবারানি, সহিহুল জামে) 
বৃষ্টি শেষ হয়ে এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে এ দোয়া পড়ার তাগিদ দিয়েছেন, ‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রাহমাতিহ।’ ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।’ (সহিহ বুখারি)

হজরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত– তিনি বলেন, ‘আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম; তখন বৃষ্টি এলো। রাসুল (সা.) তখন তাঁর গায়ের পোশাকের কিছু অংশ সরিয়ে নিলেন, যাতে গায়ে বৃষ্টির ছাঁট লাগে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কেন এমনটি করলেন?’ তিনি বললেন, ‘কারণ বৃষ্টি তাঁর প্রতিপালকের কাছ থেকে মাত্রই এসেছে।’ (সহিহ মুসলিম)
দমকা হাওয়া বইতে দেখলে মহানবী (সা.) উদ্বিগ্ন হতেন। বৃষ্টি শুরু হলে তিনি খুশি হয়ে উঠতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমার আশঙ্কা হয়, আমার উম্মতের ওপর কোনো গজব আসে কিনা।’ বৃষ্টি দেখলেই তিনি বলতেন, ‘এটি আল্লাহর রহমত।’ (সহিহ মুসলিম)
হজরত আয়েশার (রা.) বরাতে আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) আকাশে মেঘ দেখলে নফল ইবাদত ছেড়ে দিতেন। তিনি এই বলে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে বৃষ্টির উপকারী দিক কামনা করছি। আর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি।’ (সুনানে আবু দাউদ)
অতিরিক্ত বৃষ্টিতে নবীজি (সা.) এই দোয়া করতেন– ‘আল্লাহুম্মা হাওয়া-লাইনা, ওয়ালা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আ-কাম ওয়াজ জিরাব ওয়া বুতুনিল আওদিয়া; ওয়া মানাবিতিস শাজার।’ (বুখারি) 
অর্থ ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন, আমাদের ওপরে নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়-টিলা, খাল-নালা এবং উদ্ভিদ গজানোর স্থানগুলোয় বৃষ্টি দিন।’


ড. মো. শাহজাহান কবীর: চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র আল ল হ র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে বাবা খুন

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় মাদকাসক্ত ছেলের হাতে খুন হয়েছেন বাবা। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরের উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রশীদ সর্দার ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম হজরত আলী দেওয়ান (৭৫)।

রায়পুর থানা–পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে হজরত আলীকে তাঁর ছেলে মো. মামুন (৩৫) ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

জানা যায়, মাদকাসক্তির কারণে মামুনের সঙ্গে তাঁর বাবা হযরত আলীর প্রায়ই বাগ্‌বিতণ্ডা হতো। বুধবার রাতেও দুজনের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। এর জের ধরেই এমন ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর রক্তাক্ত অবস্থায় হজরত আলী দেওয়ানের দেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। এরপর পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনার পর থেকেই মো. মামুন পলাতক।

হজরত আলীর প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় বাবা-ছেলের সম্পর্ক বেশ মধুর ছিল। হজরত আলী একজন পরিশ্রমী দিনমজুর ছিলেন। অভাব-অনটনের মধ্যেও ছেলেকে মানুষ করার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু মামুন ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়েন মাদকের সঙ্গে। বাবার নিষেধ আর শাসনের কারণে মামুন একসময় প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠেন।

প্রতিবেশী আবুল হোসেন বলেন, ‘নিজে না খেয়ে ছেলেকে মানুষ করেছেন হজরত আলী। বিশ্বাস করতে পারছি না, সেই ছেলের হাতেই আজ খুন হতে হলো তাঁকে। সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু যখন সেই সন্তানই হয়ে উঠল তাঁর মৃত্যুর কারণ।’

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত মামুন পালিয়ে গেছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ওসি আরও জানান, মামুনকে মাদকের মামলায় গত ৫ মে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। ওই মামলায় ৪ জুন জামিনে বের হন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মদিনায় রয়েছে বেহেশতের বাগান
  • লক্ষ্মীপুরে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে বাবা খুন