বাজেটকে সমৃদ্ধ করতে নারীর প্রতি আরও সংবেদনশীল হতে হবে: ফওজিয়া মোসলেম
Published: 17th, June 2025 GMT
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেছেন, জাতীয় বাজেটকে সমৃদ্ধ করতে নারীর প্রতি আরও সংবেদনশীল হতে হবে। বাজেটের বরাদ্দ যদি ঠিক না থাকে তাহলে, কোনখানে বরাদ্দটা বেশি হতে হবে সেই গুরুত্বটা বোঝা যাবে না।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত বাজেট-পরবর্তী আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি এসব কথা বলেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ফওজিয়া মোসলেম আরও বলেন, ‘আমাদের সবার লক্ষ্যটা বাজেটে নারীর প্রতি সংবেদনশীলতা কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে এবং এই প্রতিফলনের ফলে নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা দেখা।’
সমাজের অত্যন্ত গভীরে নারীর প্রতি বিদ্বেষ জমা হয়ে আছে উল্লেখ করে মহিলা পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘আমরা বলতেছি যে নারীর প্রতি বৈষম্য কমছে কিন্তু আমরা গত আট–নয় মাসে যেটা দেখলাম, সমাজের অত্যন্ত গভীরে নারীর প্রতি বিদ্বেষ জমা হয়ে আছে। যেটা বিস্ফোরণ ঘটল, এখনো চলছে।’
মহিলা পরিষদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী। তিনি বলেন, ২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বরাদ্দের তুলনায় ২০২৬ অর্থবছরে লিঙ্গ-সম্পর্কিত বরাদ্দ ৪ শতাংশ কমেছে। ২০২৫ অর্থবছরে ২ লাখ ৭১ হাজার ৮৬৪ দশমিক ৯ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ২০২৬ অর্থবছরে ২ লাখ ৬০ হাজার ৭৬৬ দশমিক ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) মনজুর হোসেন বলেন, জেন্ডার বাজেটিং আগে একসময় ছিল না, এখন এগুলো শুরু হয়েছে এবং সে ক্ষেত্রে মহিলা পরিষদের একটা বড় ভূমিকা ছিল। একটা অস্থির পরিবেশের মধ্য দিয়ে এই সরকার যাচ্ছে, সেটা সবাই জানে। এ কারণে খুব বেশি প্রত্যাশা করাটা হয়তো ঠিক হবে না।
সভার শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। বৈশ্বিক এবং জাতীয় পর্যায়ে অনেক নীতিমালা গৃহীত হয়েছে, অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে কিন্তু আমরা জানি যে সেখানে বিনিয়োগটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তবায়ন পর্যায়ে এবারের জাতীয় বাজেটে কতটুকু ‘‘জেন্ডার সৃজনশীল প্রতিফলন’’ হয়েছে, সেটা আমরা আসলে দেখতে চাই।’
মহিলা পরিষদের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুনের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সানেমের ডেপুটি ডিরেক্টর ইশরাত শারমিন, ইউএনডিপির জেন্ডার টিম লিডার শারমিন ইসলাম, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক উম্মে মারজান, বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, দলিত নারী ফোরামের প্রকল্প কর্মকর্তা তামান্না সিং বড়াইক প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর দ দ
এছাড়াও পড়ুন:
সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বাণিজ্য-বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে: ঢাকা চেম্বার
বাংলাদেশ ব্যাংকের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি করতে পারে বলে মন্তব্য করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। সংস্থাটি বলছে, কড়াকড়ি মুদ্রানীতির প্রভাবে ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ডিসিসিআই জানায়, ২০২৫ সালের জুনের শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে ৬.৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ ধারা অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক। চেম্বার মনে করে, ব্যবসায়িক পরিবেশে অনিশ্চয়তা, আইন-শৃঙ্খলার চ্যালেঞ্জ, জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি এবং কঠোর মুদ্রানীতির কারণে ঋণ প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী ধারা আরো তীব্র হচ্ছে।
ডিসিসিআই আরো জানায়, ঋণ প্রবাহ সংকুচিত হওয়ার ফলে খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকায়, যা ব্যাংকিং খাতে মোট বকেয়া ঋণের প্রায় ২৭.০৯ শতাংশ। এ পরিস্থিতি আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ব্যবসায়িক আস্থা হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিসূদ হার ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রেখেছে-যা ক্ষুদ্র, কুটির, ছোট ও মাঝারি শিল্পসহ উৎপাদনমুখী খাতগুলোর জন্য বড় চাপ তৈরি করছে বলে মনে করে ডিসিসিআই। সংস্থাটির ভাষ্য, দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ সুদের হার উৎপাদন ও বিনিয়োগ খাতে ঋণের ভার বাড়াচ্ছে, ফলে সামগ্রিক অর্থনীতির গতিশীলতা ব্যাহত হচ্ছে।
চলতি মুদ্রানীতিতে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২৫) বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আরো কমিয়ে ৭.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে আগের ছয় মাসে তা ছিল ৯.৮ শতাংশ। বিপরীতে সরকার খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ২০.৪ শতাংশ করা হয়েছে। ঢাকা চেম্বারের মতে, এ ব্যবস্থায় সরকারি খাতের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বেসরকারি খাতের জন্য আর্থিক খরচ ও প্রতিযোগিতা উভয়ই বেড়ে যাবে।
এ অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে নীতিসূদ হার হ্রাস এবং ঋণ গ্রহণের শর্তাবলি সহজ করার আহ্বান জানিয়েছে ডিসিসিআই। তারা সৎ ঋণগ্রহীতাদের রক্ষায় সহায়তা এবং তাৎক্ষণিক খেলাপি শ্রেণিতে পড়া এড়াতে ঋণ শ্রেণিবিন্যাসে সময়সীমা ছয় মাস বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
সংস্থাটি মনে করে, টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে হলে আর্থিক খাতে কাঠামোগত সংস্কার, ঋণ বরাদ্দে স্বচ্ছতা এবং বাজারে তারল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে।
চূড়ান্তভাবে ডিসিসিআই বলছে, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা, বেসরকারি খাতে আস্থা পুনরুদ্ধার ও বিনিয়োগ বাড়াতে আরো নমনীয়, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও খাতভিত্তিক প্রতিক্রিয়াশীল মুদ্রানীতির বিকল্প নেই।
ঢাকা/নাজমুল/সাইফ