ময়মনসিংহ নগরীতে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও খুনের মতো ঘটনা প্রকট আকার ধারণ করেছে। নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে নগরীর গাঙ্গিনারপাড় এলাকার ব্যস্ততম শপিংমল অলকা নদী বাংলা কমপ্লেক্সের দ্বিতীয়তলার মোবাইল ফোন মার্কেটে চুরির ঘটনা ঘটে। জিরো পয়েন্ট মোবাইল শপ নামে দোকানের তালা ভেঙে মালপত্র লুট করে অজ্ঞাতপরিচয় ৫-৬ জন যুবক।

দোকানটির মালিক হৃদয় খানের ভাষ্য, তাঁর দোকানে ২৮০টির মতো মোবাইল ফোন ছিল। দুর্বৃত্তরা আনুমানিক ২৫০টি মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। এ ছাড়া তাঁর ক্যাশ বাক্স ভেঙে প্রায় ১০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে চোরচক্রটি। 

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সিআইডির বিশেষজ্ঞ টিম ঘটনাটি তদন্ত করছে। পুলিশের পরিদর্শনকারী দলের নেতৃত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা করবেন তারা। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত সময়ের ভেতর আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি বলেন, প্রতিটি এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। যেখানে ৭০ লাখ নাগরিকের বসবাস সেখানে ২ হাজার পুলিশ দিয়ে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তবুও যেসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে সেগুলোকে চিহ্নিত করছেন তারা।

এর আগে মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে নগরীর জিলা স্কুল মোড়ে ‘চাচার হোটেল’ নামক রেস্তোরাঁর মালিককে নিজ বাড়িতে আটকে রেখে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন রেস্তোরাঁ মালিকের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে অজ্ঞাতপরিচয় ২-৩ জন ব্যক্তি জিলা স্কুলের মোড় সংলগ্ন বাসভবনে প্রবেশ করে। এরপর সাবিনা ইয়াসমিনের স্বামী মোসা খন্দকারকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে নগদ ২৩ লাখ টাকা এবং আনুমানিক দুই লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি ফিরোজ জানান, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করছে পুলিশ। তাঁর আশা দ্রুতই রহস্য উদ্ঘাটন করা যাবে।

গত ১৬ জুন নগরীর ক্লিনিক মালিক সমিতি চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। তারা অভিযোগ করেন, স্থানীয় কিছু চক্র ক্লিনিকগুলোতে নিয়মিত চাঁদা দাবি করছে এবং চাঁদা না দিলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছে। 

এদিকে গত মঙ্গলবার নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃ্তরা। ভুক্তভোগী মনিরুল হক জানান, তিনি আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ময়মনসিংহ শাখা থেকে অটোরিকশায় করে বাসায় ফিরছিলেন। মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছামাত্র কয়েকজন যুবক তাঁর পথরোধ করে। ঘটনার পরপরই অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়েছে।

একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নগরীর সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তারা প্রশ্ন তুলছেন, দিনের পর দিন এভাবে অপরাধ চলতে থাকলে তাদের নিরাপত্তা কোথায়। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, সম্প্রতি নগরীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে চুরি, ছিনতাই, খুনের ঘটনা ঘটছে। সরকার পতনের পর পুলিশের অবস্থা নড়বড়ে হওয়ায় এমন হচ্ছে। রাজনৈতিক মধ্যস্থতায় তারা নিজেদের ব্যস্ত রাখায় সামাজিক শৃঙ্খলা ফিরছে না। 

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি বা অবনতি নির্ধারণের কোনো মানদণ্ড নেই উল্লেখ করে পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম জানান, প্রতিনিয়ত চোর ও ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করে আলাদতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হচ্ছে। গত ৩-৪ মাসে ১৩১ জন ছিনতাইকারীকে ধরা হয়েছে। তারা আবার জামিনে বের হয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ ছ নত ই নগর র অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে: মামুনুল হক

খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের গণভোট বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা মনে করি, জুলাই সনদের ফসল ঘরে তুলতে না পারলে বাংলার মানুষ অর্জিত স্বাধীনতা আবার হাতছাড়া করবে। পরিষ্কার ভাষায় আমরা বলে দিতে চাই, জুলাই সনদ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান করতে হবে।’

আজ শনিবার বেলা একটার দিকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার সরকারি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে খেলাফত মজলিস আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মামুনুল হক বলেন, ‘বৃষ্টির মধ্যে আপনাদের উপস্থিতি প্রমাণ করে হালুয়াঘাটের মাটি ইসলামের ঘাঁটি। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, এ দেশের আলেম সমাজ ও ইসলামপন্থীরা ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। খেলাফত মজলিসের নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনার জুলুম ও নির্যাতনের টার্গেটে পরিণত হয়েছিল। আমরা ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে জীবন দিয়েছি। ২০২১ সালে আন্দোলনে জালিমের বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছি, জালিমের রক্তচক্ষুর সামনে মাথা নোয়াইনি।’

শেখ হাসিনার সমালোচনা করে মামুনুল হক বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের অন্যায়ভাবে বছরের পর বছর বন্দী রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা নির্যাতন সহ্য করেছি, তবু দেশ ও ইসলামের প্রশ্নে আমরা মাথা নত করি নাই। দেশ, স্বাধীনতা ও ইসলামের প্রশ্নে আমরা কোনো অপশক্তির সামনে মাথা নত করব না ইনশা আল্লাহ। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে, এ দেশের তামাম ছাত্র-জনতার রক্তের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী, বিদেশি আধিপত্যবাদ–বিরোধী বিপ্লবের প্রতিটি অর্জন ঘরে তোলার জন্য খেলাফত মজলিস সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।’

সমাবেশে খেলাফত মজলিসের হালুয়াঘাট উপজেলা সভাপতি ও ময়মনসিংহ-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা তাইজুল ইসলাম আকন্দের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি হেদায়াতুল্লাহ হাদী, কেন্দ্রীয় বায়তুল মাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান প্রমুখ।

পরে বেলা আড়াইটার দিকে জেলার ফুলপুর সরকারি কলেজ মাঠে পাঁচ দফা দাবিতে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মামুনুল হক। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যহীন, ইনসাফের বাংলাদেশ গড়তে হলে আল্লাহ প্রদত্ত খেলাফত ছাড়া কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। যেখানে রয়েছে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের জন্য একই ব্যবস্থা। জুলাই বিপ্লব ইসলামি বিপ্লবের পূর্বাভাস ছিল। আগামীর বাংলাদেশ ইসলাম ও খেলাফতের বাংলাদেশ।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাহিদুল-মজিদের সেঞ্চুরির দিনে মুমিনুলের ৮ রানের আক্ষেপ
  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • দেশজুড়ে বৃষ্টি ও তাপমাত্রা কমার পূর্বাভাস
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
  • জুলাই সনদ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে: মামুনুল হক
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
  • অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
  • কথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল