সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত যশোরের চৌগাছা। খরচের সঙ্গে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় উপজেলার কৃষকরা সবজি ছেড়ে ঝুঁকে পড়েন ফল চাষে। বাণিজ্যিকভাবে আম, পেয়ারা, কলা, বরই দিয়ে শুরু হলেও এখন করছেন বিদেশি ফলের আবাদ। স্বল্প খরচে পর্যাপ্ত ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় উপজেলায় বাড়ছে বিদেশি ফল চাষের পরিসর।

শুধু চৌগাছা নয়; দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে প্রায় ৫৩ হাজার ৭৭৮ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ফল। এর মধ্যে ২ হাজার ৬৫৬ হেক্টর জমিতে কমলা, মাল্টা, লটকন, অরবরই, স্ট্রবেরি, ড্রাগন, কাজুবাদাম, রাম্বুটান, আঙুর, অ্যাভোকাডোসহ ১০ ধরনের বিদেশি ফল চাষ হচ্ছে, যার বার্ষিক উৎপাদন ৬০ হাজার ৯০৫ টন।

যশোরের মনিরামপুরের মুজগুন্নি গ্রামের আবদুল করিম ইউটিউব দেখে এক যুগ আগে উৎসাহী হন মাল্টা চাষে। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে চারা এনে ২০ শতক জমিতে রোপণ করেন। এখন ২৫ বিঘা জমির বাণিজ্যিক কৃষি খামারের মালিক। খামারের পাঁচ-ছয় বিঘাজুড়ে রয়েছে মাল্টা ও চায়না কমলার বাগান।
আবদুল করিম জানান, তাঁর খামারে কমলা, মাল্টার পাশাপাশি থাই কুল, থাই পেঁপে, সৌদি খেজুর, লটকন চাষ হচ্ছে। চাহিদা থাকায় বেচাবিক্রি নিয়ে চিন্তা নেই; লাভও ভালো। বছরে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার বিদেশি ফল বিক্রি করছেন তিনি। 

কৃষি বিভাগের তথ্য, যশোর অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে চাষ হয় ভিয়েতনামের জাতীয় ফল ড্রাগন। দ্বিতীয় মাল্টা ও কমলা– ৮২০ হেক্টরে। তৃতীয় অ্যাভোকাডো ও স্ট্রবেরি ১০ হেক্টর জমিতে। দেশীয় নানা জাতের সঙ্গে বিদেশি ফল চাষ ও উৎপাদনে শীর্ষে ঝিনাইদহ। এর পর দ্বিতীয় যশোর ও চুয়াডাঙ্গার অবস্থান তৃতীয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আলমগীর বিশ্বাস বলেন, প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে বিদেশি ফল চাষ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চারা সরবরাহ করা হচ্ছে। অনেকেই প্রদর্শনী প্লটের সফলতা দেখে চাষাবাদে এগিয়ে আসছেন। এ অঞ্চলে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বিদেশি ফল উৎপাদন হচ্ছে।

এক দশকে সহস্রাধিক উদ্যোক্তা

যশোর অঞ্চলে এক দশকে এক হাজারের বেশি তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। তাদের একজন যশোর চৌগাছার তিলকপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন জানান, নতুন কিছু করার চিন্তায় ইন্টারনেটে ড্রাগন চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন। ২০১৫ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারা এনে দুই বিঘা জমিতে চাষ করেন। বর্তমানে ১০ বিঘা জমিতে ড্রাগন করছেন।

ইসমাইল বলেন, বছরের সাত মাস ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। একবার চারা লাগালে ৩০ থেকে ৪০ বছর একইভাবে ফল হয়। লোকসানের সুযোগ নেই বললেই চলে।

যশোরের ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এস এম সাইফুল ইসলাম লিটন বলেন, দেশে বিদেশি ফল উৎপাদন হওয়ায় আমদানি কমেছে। বছর চারেক আগেও থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে ড্রাগন ফল আমদানি করতে হতো। এখন চাহিদার ৯০ শতাংশ দেশে হয়। লিচু, আম, আনারসের চাহিদার পুরোটাই দেশে হয়। তবে বিপুল পরিমাণ খেজুর, আঙুর, কমলা, নাশপাতি ও আপেল আমদানি করতে হয়।

উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে বাড়ছে ফলন

আগাম ফুল পেতে বাগানজুড়ে বিশেষ বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে ড্রাগন গাছকে বোঝানো হচ্ছে দিন বড় হচ্ছে। সন্ধ্যার পর গাছ তার সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বন্ধ করে। কিন্তু দিন বড় থাকলে গাছ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চালু রাখে। গাছ যত বেশি খাদ্য গ্রহণ করে, তত বেশি বেড়ে ওঠে। ফুলও ফোটে তাড়াতাড়ি। এ কৌশল প্রয়োগে ড্রাগনের উৎপাদন ভালো হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফল ফল চ ষ

এছাড়াও পড়ুন:

৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা 

সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ