অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম বাজেট প্রস্তাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বহাল রাখলেও তা এখন বাতিল করতে পারে। ২২ জুন প্রস্তাবিত এ বাজেট পাস করা হবে। সেখানে কালোটাকা সাদা করার সুযোগটি না–ও রাখা হতে পারে।

দেশে আগে থেকেই আয়কর আইনের তফসিলের মাধ্যমে এত দিন কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত টাকায় ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ ছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে করহার কয়েক গুণ বাড়িয়ে সুবিধাটি বহাল রাখার প্রস্তাব করেন। এর পর থেকেই তা নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়। ফলে সরকার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার অবস্থান থেকে সরে আসতে শুরু করেছে। সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব নেতাদের এক আবাসন খাতে কালোটাকা সাদা করার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়।

অর্থ উপদেষ্টা ২ জুন নতুন বাজেট উপস্থাপন করেন। এতে তিনি অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনার পাশাপাশি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখেন। তবে আগের চেয়ে করের পরিমাণ বাড়িয়েছেন তিনি। সে অনুযায়ী এলাকাভেদে আয়তন অনুসারে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিলেই টাকার উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, এমনটা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ধরে নেবে বলে উল্লেখ করা হয়।

অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার ক্ষেত্রে দুটি শর্তও দেওয়া হয়। যদি আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের অধীন কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম থেকে উদ্ভূত হয় এবং কোনো বৈধ উৎস থেকে উদ্ভূত না হয়, তাহলে কালোটাকা সাদা করা যাবে না।

রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও পৌর এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুটে ১০০ থেকে ২ হাজার টাকা কর প্রস্তাব করেন অর্থ উপদেষ্টা। এ ছাড়া একই সুবিধা পেতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুটে ৫০ থেকে ৯০০ টাকা কর নির্ধারণের প্রস্তাব দেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা এসে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বাতিল করেছিল। কিন্তু এই সরকারের অর্থ উপদেষ্টা প্রথম বাজেটেই নতুন করে করহার বাড়িয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বহাল রাখার প্রস্তাব করেন।

সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের দেওয়া চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেটে এক বছরের জন্য নগদ টাকার পাশাপাশি জমি, ফ্ল্যাট-প্লটসহ স্থাবর সম্পদ কেনার মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সর্বোচ্চ করহারের চেয়ে কম কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার এ সুবিধার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই তীব্র সমালোচনা ছিল। এ সুযোগকে অনৈতিক ও সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায় হিসেবে বর্ণনা করেন বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক।

অবশেষে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কালোটাকা সাদা করার বিধান বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু আয়কর আইনের তফসিলে রাখা কালোটাকা সাদা করার সুবিধা বহাল থাকে।

প্রায় সব সরকারের আমলেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর এ সুযোগ দেওয়া হলেও অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থসম্পদ বৈধ করায় কখনোই তেমন সাড়া মেলেনি।

এনবিআরের সূত্রগুলো বলছে, এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে অপ্রদর্শিত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঘোষণায় এসেছে, অর্থাৎ সাদা করা হয়েছে। বিএনপি সরকারের ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ ছিল না।

সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হলেও কেউ সুযোগটি নেননি। এর এক বছর পরই আবারও কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ দেওয়া হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর র স য গ র প রস ত ব সরক র র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি 

সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (গভর্নেন্স পারফরমেন্স মনিটরিং সিস্টেম- জিপিএমএস)’ বাস্তবায়নে অর্থ উপদেষ্টা  সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে তিন সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করেছে সরকার। 

সম্প্রতি এই কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

কমিটিতে বাকি দুই সদস্য হলেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি কাজের জবাবদিহিতা, দক্ষতা ও জনকল্যাণ নিশ্চিতে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) পরিবর্তে নতুন সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (জিপিএমএস) চালু করা হয়েছে। এই জিপিএমএস বাস্তবায়নে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার), বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব কমিটিকে সহায়তা করবেন। তাছাড়া, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।

এ কমিটি জিপিএমএস বাস্তবায়নের বিষয়ে সার্বিক দিক-নির্দেশনা দেবে। মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসে সেকশন ১-এর আওতায় প্রস্তুত করা পরিকল্পনা অনুমোদন দেবে এবং অর্থবছর শুরুর আগে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত করবে এ কমিটি।

এছাড়া, প্রতি অর্থবছর শেষে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসের সার্বিক মূল্যায়ন পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেবে। জিপিএমএস বিষয়ে সরকারের দেওয়া অন্য যেকোনো দায়িত্ব পালন করবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেসরকারি ঋণ তলানিতে, তবে ঋণপত্র খোলায় গতি
  • টানা দুই মাস আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে
  • তিন মাসে গৃহকর আদায় কমেছে ৩০ কোটি টাকা
  • জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া, কোনো অর্থ দেয়নি চীন
  • সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি 
  • ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর
  • ২৯ দিনে প্রবাসী আয় ২৪৩ কোটি ডলার