জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ গঠনের বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। পাশাপাশি কোনো ব্যক্তি যেন দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন, সে বিষয়েও অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আজকের আলোচনা শেষে এ কথা বলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, বৃহস্পতিবার সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ও নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও গতকাল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা অসমাপ্ত থাকায় এ বিষয়ে আবার আলোচনা হয়।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটার নির্ধারণের জন্য জাতীয় সংসদের ধরন নিয়ে প্রশ্ন থাকায় আজ এ বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যেহেতু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সংসদের ধরন নির্ধারণ হওয়া জরুরি, তাই এ বিষয়ে আগে নির্ধারণ হতে হবে। এ প্রসঙ্গে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত যে সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হতে পারে।’

আলোচনা হলেও বৃহস্পতিবার কোনো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করতে চাই, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের পক্ষে মত দিয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। কোনো ব্যক্তির দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারার বিধান রাখার কথা বলেছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। তবে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হলে আরও আলোচনার প্রয়োজন আছে। আগামী সপ্তাহে অসমাপ্ত বিষয়গুলো নিয়ে আবার আলোচনা হবে।’

আলী রীয়াজ বলেন, ‘যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো আমরা জাতীয় সনদে স্বচ্ছতার সঙ্গে উল্লেখ করব। আমরা জানি, সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না। হলে ভালো হতো। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ঐকমত্য গঠনে সর্বাত্মক সহযোগিতা রয়েছে।’

রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্ন ভিন্ন মত দিলেও আলোচনা সৌহার্দ্যপূর্ণ হচ্ছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতে কেউ দ্বিধান্বিত নয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র য় জ বল ঐকমত য

এছাড়াও পড়ুন:

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে হবে

অর্থনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় নির্বাচন যে জরুরি হয়ে পড়েছে, সে ব্যাপারে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ঘোষিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যেকোনো বাধা দূর করা তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর এখনো মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারাটা সংগত কারণেই গভীর উদ্বেগের। এই প্রশ্নে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি—তিন দল তিন অবস্থানে রয়েছে। আমরা মনে করি, অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ৩০টি রাজনৈতিক দল যখন দীর্ঘ আলোচনা প্রক্রিয়ায় অভূতপূর্বভাবে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছে, তখন জুলাই সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে একটা সর্বসম্মত অবস্থানে পৌঁছানো মোটেই কঠিন কোনো বিষয় নয়।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর রোববারের সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও ঐকমত্যের পথে রাজনৈতিক দলগুলো যে অর্জন করেছে, সেটাকে বিশ্বের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন। চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান প্রকৃতপক্ষেই বাংলাদেশের সামনে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও পরিবর্তনের বড় একটা সুযোগ এনে দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার কারণে সেই সুযোগ যদি হারিয়ে যায়, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা একটি জাতির জন্য আর কী হতে পারে। বাস্তবতা হলো ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যেমন বিকল্প নেই, আবার মতভিন্নতা কাটিয়ে উঠতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।

শনিবার প্রথম আলো আয়োজিত ‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের শক্ত ভূমিকা নেওয়ার কথা বলেছেন। তাঁরা সতর্ক করেছেন যে ঘোষিত সময়ে নির্বাচন না হলে, দেশে অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কাও আছে।

রাজনৈতিক দলগুলোকে সবার আগে এই বাস্তবতাকে উপলব্ধি করা জরুরি। বর্তমান অনিশ্চয়তা শুধু রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তার গভীর নেতিবাচক প্রভাব সমাজ ও অর্থনীতির ওপরও পড়ছে। দারিদ্র্য, বেকারত্ব বাড়ছে এবং অর্থনৈতিক-সামাজিক ও জীবিকায় দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত তৈরি হচ্ছে। সবার আগে এই অনিশ্চয়তা কাটানো প্রয়োজন। একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে যাত্রাই এর একমাত্র পথ বলে মনে করি।

আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, চাপিয়ে দিয়ে সংস্কার হয় না। আবার পরিবর্তনের অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় যাওয়ার পর তার বাস্তবায়নও হয় না। এই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটা বাস্তবসম্মত পথ খুঁজে বের করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়াচ্ছে। আমরা আশা করি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর যে মতভিন্নতা, তা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই একটা সমঝোতায় পৌঁছাবে। তবে এরই মধ্যে আমরা দেখলাম যে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামী নতুন এক কর্মসূচি দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে আবারও স্পষ্টভাবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের কথা বলছেন। আগামী নির্বাচনকে তিনি ‘জাতির সত্যিকারের নবজন্ম’ হিসেবে দেখছেন। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে যদি নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তাহলে এত মানুষের আত্মত্যাগ এবং সংস্কার নিয়ে এত আলাপ-আলোচনা সবকিছুই বৃথা হবে। তাতে দেশও গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতায় জনগণ কেন ভুক্তভোগী হবে?

নির্বাচনের একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষের সব রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই তাদের ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থের বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন ‘এক নেতা এক পদ’ নীতির বাস্তবায়ন দাবি এক নেতার
  • সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের সুপারিশ, একমত নয় দলগুলো
  • ‘সংবিধান আদেশ’ জারির সুপারিশ করতে পারে কমিশন: আলী রীয়াজ
  • কমিটি গঠন, প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত 
  • বর্ধিত মেয়াদের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ
  • বিএনপি নির্বাচনমুখী কর্মসূচিতে যাবে
  • ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গসংগঠনের ১২ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
  • দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে হবে