করোনা পরীক্ষার কিটের সংকট কেটেছে, স্বাস্থ্য বিভাগের নানা প্রস্তুতি
Published: 20th, June 2025 GMT
যশোরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক দিনে দুজনের মৃত্যুতে জনমনে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জেলায় করোনা পরিস্থিতি এখনো খারাপ নয়। মারা যাওয়া দুজন অন্য শারীরিক সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সংকটের মধ্যে করোনা পরীক্ষার জন্য কিছু কিট পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যে জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার সকালে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যু হয় শেখ আমির হোসেন (৬৮) নামের এক ব্যক্তির। বুধবার রাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মনিরামপুর উপজেলার মাহমুদকাঠি গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ হোসেন (৪২)। তিনিও যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজন রোগী এই হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৬ জুন পেটের ব্যথা নিয়ে আমির হোসেন হাসপাতালে ভর্তি হন। শ্বাসকষ্ট হওয়ায় গত মঙ্গলবার তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হয়। তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। বুধবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ইউসুফ হোসেন শ্বাসকষ্ট ও কিডনির সমস্যা নিয়ে ১৩ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁকে মেডিকেল ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছিল। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১৪ জুন হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। কিন্তু রোগীর শরীরে অক্সিজেন লেভেল কমতে শুরু করলে চিকিৎসকেরা র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার পরামর্শ দেন। বুধবার দুপুরে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। রাতে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে রোগীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। চিকিৎসকেরা করোনার চিকিৎসা শুরু করার আগেই রাতে তিনি মারা যান।
আরও পড়ুনযশোরে করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, কিটের ঘাটতিতে পরীক্ষা বন্ধ১৯ জুন ২০২৫নতুন করে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর যশোর জেনারেল হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীরা রেড জোনে ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের ইয়েলো জোনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে (রেড জোন) তিনটি কেবিন প্রস্তুত করে রাখা রয়েছে। যেখানে ছয়জন রোগী একসঙ্গে থাকতে পারবেন। এ ছাড়া ১০ শয্যার আইসিইউ খালি করা হয়েছে। হাসপাতালের ৩০টি শয্যার আইসোলেশন ইউনিটের (ইয়েলো জোন) ১৫টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, মারা যাওয়া ওই দুজনই হাসপাতালে সাধারণ রোগী হিসেবে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। তাঁদের একজনের পেটের ব্যথা তীব্র ব্যথা ও সঙ্গে শ্বাসকষ্ট এবং অন্যজনের শ্বাসকষ্ট ও কিডনির সমস্যা ছিল।
জেলায় করোনা পরীক্ষার কিটের ঘাটতি থাকায় সন্দেহভাজন রোগীদের এতোত বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা ওপর নির্ভর করতে হচ্ছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বৃহস্পতিবার করোনা পরীক্ষার দুই হাজার কিট পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হুসাইন শাফায়েত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন থেকে হাসপাতালে হাসপাতালে কোভিড পরীক্ষা হবে। হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তিনটি কেবিন প্রস্তুত করে রাখা রয়েছে। এ ছাড়া ১০ শয্যার আইসিইউ খালি করা হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সগুলোতেও নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যশোরের সিভিল সার্জন মো.
জেলার করোনা পরিস্থিতি খারাপ না, দাবি করে সিভিল সার্জন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যে দুইজন মারা গেছেন, তাঁদের অন্য শারীরিক সমস্যা ছিল। তাঁরা যে করোনায় মারা গেছেন, এটা বলা যাবে না।’
আরও পড়ুনযশোরে তিন বছর পর করোনায় একজনের মৃত্যু১৮ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ব সকষ ট পর স থ ত পর ক ষ র একজন র র জন য কর ন য় র কর ন উপজ ল র আইস সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫