‘সন্ত্রাসবাদ’ নিয়ে ঐক্যমত্যের অভাবে যৌথ বিবৃতিতে ভারতের অস্বীকৃতি
Published: 27th, June 2025 GMT
সন্ত্রাসবাদ’ নিয়ে ঐক্যমত্যের অভাবে চীনে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে যৌথ বিবৃতিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ভারত।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসসিও বৈঠকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা ‘সন্ত্রাসবাদ’ নিয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। তাই যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়নি। খবর রয়টার্সের
বুধবার চীনের পূর্বাঞ্চলীয় শানডং প্রদেশের বন্দরনগরী কুইংদাওতে এসসিও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও ইরানসহ সংস্থাটির ১০ সদস্য অংশ নেয়। সদস্য দেশসমূহের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছু সদস্য, সদস্য দেশ, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি এবং তাই আমাদের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতিটি চূড়ান্ত করা যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম, যে নথিতে সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে উদ্বেগ প্রতিফলিত হোক, যা একটি নির্দিষ্ট দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না, তাই বিবৃতিটি গৃহীত হয়নি। তবে তিনি দেশটির নাম উল্লেখ করেননি।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর হামলা করে ২৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এটি এসইও সম্মেলনের নথি থেকে বাদ দেওয়া হয়। তাই নয়াদিল্লি নথিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। পরে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ আক্রমণ করে। এই হামলার ফলে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে পাকিস্তান বলছে, ভারত যে লক্ষ্যবস্তুগুলোতে আঘাত হেনেছে। এসব স্থাপনা ‘সন্ত্রাসবাদের’ সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। সেগুলো বেসামরিক স্থাপনা ছিল।
তবে ভারতের বিবৃতির বিষয়ে চীন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়। তারা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
এর আগে বৃহস্পতিবার যৌথ বিবৃতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বিস্তারিত কিছু না বলেই বলেন বৈঠকটি ‘সফল হয়েছে’।
গত মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের সংঘর্ষের পর এটিই প্রথমবারের মতো উভয় দেশের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা একই মঞ্চে উপস্থিত হন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস