এনবিআর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে আইএমএফ
Published: 29th, June 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার ঘিরে কর্মকর্তাদের আন্দোলন এবং সার্বিক রাজস্ব সংস্কার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ। এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধিদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের অনুকূলে ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের পর রোববার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশের জন্য আইএমএফের মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। ডেপুটি মিশন প্রধান আইভো ক্রিজনার এবং বাংলাদেশে আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দে সংবাদ সম্মেলনে সংযুক্ত ছিলেন।
রাজস্ব নীতি এবং ব্যবস্থাপনা আলাদা করতে আইএমএফের পরামর্শ রয়েছে। সরকার এ দুটি কার্য্রক্রম আলাদা করতে যে অধ্যাদেশ জারি করেছিল, তার বিরোধিতা করে এবং এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে সারাদেশে কর কর্মকর্তাদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি চলছে। এতে রাজস্ব আদায় কার্য্রক্রম চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এ অবস্থায় আইএমএফের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে আইএমএফ মিশন প্রধান বলেন, ‘আমরা যেসব সংস্কারের তাগিদ দিচ্ছি, তা নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আমাদেরকে হালনাগাদ পরিস্থিতি জানাচ্ছেন। জনগণকে এটি স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন যে, সরকার যেসব প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা দরকার।’
বাংলাদেশে নির্বাচন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য এখনকার সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থনীতিতে অনেক চ্যালেঞ্জিং উপাদান রয়েছে। বাংলাদেশ এখন নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে এবং ভূ-রাজনৈতিক, স্থানীয় ইস্যুতে নানা অনিশ্চয়তা রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নই। তবে আমরা মনে করি, নির্বাচনের সময় নির্ধারণে বিনিয়োগের স্পর্শকাতরতার সম্পর্ক রয়েছে, যা বাংলাদেশের ওপর কান্ট্রি রিপোর্টে আইএমএফ উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশে নির্বাচনের সময় নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। নির্বাচনের সময় ঘোষণা করা হয়েছে। এখন আমরা প্রত্যাশা করি অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। নির্বাচনের সময় স্থির হওয়ায় আমরা মনে করি, বিদেশি বিনিয়োগ আসা শুরু হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ অনেক কম। আমরা মনে করি, নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইএমএফ এনব আর আইএমএফ র পর স থ ত
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।