লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে হজরত আলী গাজী (৭৫) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় তার ছেলে মামুনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

সোমবার (৩০ জুন) র‍্যাব-১১ নোয়াখালী ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে, গত রাতে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে, গত ১১ জনু রাতে হজরত আলী গাজীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই নুর হোসেন গাজী বাদী হয়ে মামুনকে আসামি করে রায়পুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

আরো পড়ুন:

রামুতে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা

জমি নিয়ে বিরোধে সংঘর্ষ, কৃষক নিহত

র‍্যাব-১১ নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মিঠুন কুমার কুণ্ডু জানান, মামুন মাদকসেবী। মাদকের টাকার জন্য প্রায়ই তিনি তার বাবার সঙ্গে ঝগড়া করতেন। ঘটনার রাতে মামুন তার বাবার কাছে মাদক কেনার টাকা চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। এর জেরে হজরত আলী গাজী কুপিয়ে পালিয়ে যান মামুন। স্থানীয়রা আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। রবিবার রাতে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সামনে থেকে মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তাকে রায়পুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঢাকা/জাহাঙ্গীর/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য

এছাড়াও পড়ুন:

যেভাবে ডুবল দেশের প্রথম ‘ডিজিটাল দ্বীপ’

রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে দেশের প্রথম ডিজিটাল দ্বীপ (ডিজিটাল আইল্যান্ড) ঘোষণা করা হয়েছিল কক্সবাজারের মহেশখালীকে। দ্বীপের প্রায় চার লাখ বাসিন্দার জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষা ও ব্যবসার প্রসার, অনিরাপদ অভিবাসন রোধে ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ প্রকল্প চালু হয়েছিল ২০১৭ সালে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএমের আর্থিক সহায়তায় কোরিয়া টেলিকম, বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল যৌথভাবে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন করে। খরচ হয় ২২ কোটি ৩৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা। তবে এখন এই প্রকল্পের কার্যক্রম থমকে আছে। পড়ে থেকে নষ্ট হয়েছে প্রকল্পের মূল্যবান ডিজিটাল সামগ্রীও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম আড়াই বছর ঠিকঠাকমতো চললেও এরপর থমকে যায় ডিজিটাল আইল্যান্ড প্রকল্পের কার্যক্রম। অযত্ন অবহেলায় পড়ে থেকে নষ্ট হয়েছে ল্যাপটপ-কম্পিউটারসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি। চুরি হয়ে গেছে ইন্টারনেট সংযোগের ১৯ কিলোমিটারের অপটিক্যাল ফাইবার। তাতে বন্ধ হয়ে গেছে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে শিশুশিক্ষার্থীর দূর-শিক্ষা, রোগীদের টেলিমেডিসিন সেবা ও কৃষক-ব্যবসায়ীদের ই-কমার্সসহ নানা কার্যক্রম।

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুশিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শ্রেণিকক্ষে প্রজেক্টর স্থাপনের মাধ্যমে ঢাকার শিক্ষকদের দিয়ে পাঠদান শুরু হয়েছিল প্রকল্পের আওতায়। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। এ ছাড়া হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগীরা প্রজেক্টরের সামনে বসে শহরের চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতেন। উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা কাজে লাগিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে সমুদ্রে অভিযান চালিয়ে মানবপাচার, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান ঠেকানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। পাশাপাশি দ্বীপে উৎপাদিত শুঁটকি ও মিষ্টি পান বিক্রির জন্য খোলা হয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।

কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষক, চিকিৎসক ও জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য, তদারকের অভাবেই ডিজিটাল আইল্যান্ড প্রকল্পটি গতি হারিয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সমাজসেবা অধিদপ্তরে হস্তান্তর করা হলেও তারা প্রকল্পটি চালু রাখতে পারেনি। সেই জনবলও নেই সমাজসেবা অধিদপ্তরের। মহেশখালীর সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মরত আছেন মাত্র দুজন কর্মকর্তা।

যেভাবে শুরু ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ প্রকল্প

দক্ষিণ কোরিয়ার গিগা আইল্যান্ড নামের একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মানুষকে নানা সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ডিজিটাল কার্যক্রম হাতে নিয়েছিল সে দেশের সরকার। দ্বীপের জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে ব্যাপক সফলতাও এসেছিল। মহেশখালীর ডিজিটাল আইল্যান্ড প্রকল্পটি সাজানো হয় কোরিয়ার ওই দ্বীপের আদলে।

মহেশখালী দ্বীপেও উচ্চগতির ইন্টারনেট প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানব পাচার রোধ, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, সরকারি দপ্তরে দ্রুত যোগাযোগ, শুঁটকি ও মিষ্টি পানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতসহ জীবনমানের উন্নয়নের কথা ভাবা হয়েছিল। কথা ছিল সুফল পাওয়া গেলে পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় উপজেলায়ও চালু হবে ডিজিটাল আইল্যান্ড প্রকল্প।

করোনা মহামারির সময় পুরো প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এখন প্রকল্পটি নতুন করে চালু করতে গেলে অপটিক্যাল ফাইবারসহ সবকিছু নতুন করে স্থাপন করতে হবে। তার জন্য মোটা অঙ্কের বাজেট দরকার। সেটা সমাজসেবা অধিদপ্তরের নেই। আপাতত আমরা ট্রেনিং সেন্টারটি চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি। মহাপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করি কিছুদিনের মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া যাবে।মো. সফি উদ্দিন, সহকারী পরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর, কক্সবাজার কার্যালয়

প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীর একটি পৌরসভা ও দুটি ইউনিয়নে (ছোট মহেশখালী ও বড় মহেশখালী) উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছানোর জন্য ১৯ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার লাইন টানা হয়। এরপর ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি মাদ্রাসা, একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চারটি কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ সরকারি ২৫টি দপ্তর ও ভবনে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়।

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুশিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শ্রেণিকক্ষে প্রজেক্টর স্থাপনের মাধ্যমে ঢাকার শিক্ষকদের দিয়ে পাঠদান শুরু হয়েছিল প্রকল্পের আওতায়। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। এ ছাড়া হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগীরা প্রজেক্টরের সামনে বসে শহরের চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতেন। উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা কাজে লাগিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে সমুদ্রে অভিযান চালিয়ে মানবপাচার, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান ঠেকানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। পাশাপাশি দ্বীপে উৎপাদিত শুঁটকি ও মিষ্টি পান বিক্রির জন্য খোলা হয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।

মহেশখালী জলবায়ু আন্দোলনকর্মী ও কলেজশিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, উপজেলায় মা ও শিশুমৃত্যুর হার বেশি। দ্বীপটিতে ভালো চিকিৎসক যেতে চান না। ভালো মানের শিক্ষকও নেই। লবণাক্ততার কারণে কৃষিপণ্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে। অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে দ্বীপে উৎপাদিত মিষ্টিপান ও শুঁটকির ন্যায্যমূল্য থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছিল। ডিজিটাল আইল্যান্ড প্রকল্প চালুর পর শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে উন্নতি ঘটছিল। সরকারি দপ্তরগুলোতেও নাগরিক সেবা বাড়তে থাকে। তবে প্রকল্প কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আবারও আগের অবস্থা ফিরেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রকল্প চালুর উদ্যোগও নেই।

ডিজিটাল আইল্যান্ড প্রকল্পের আওতায় শ্রেণিকক্ষে স্থাপন করা হয়েছিল প্রজেক্টর, দেওয়া হয়েছিল উচ্চগতির ইন্টারনেট। এর মাধ্যমে ঢাকা থেকে শিক্ষকেরা নিয়মিত দ্বীপের শিশুদের পাঠদান করতেন। তবে এখন এই কার্যক্রম বন্ধ। নষ্ট যন্ত্রপাতি, প্রজেক্টর। বন্ধ ইন্টারনেটও। মহেশখালী পৌরসভার মহেশখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ