বাংলাদেশে ‘সাংবাদিকদের নির্যাতন ও বাক্স্বাধীনতা হরণের’ নিন্দা
Published: 2nd, July 2025 GMT
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের নির্যাতন ও বাক্স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে অভিযোগ করে এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের বাইরে অবস্থান করা ৮৮ জন সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, গবেষক, সংস্কৃতি ও অধিকারকর্মী। আজ বুধবার গণমাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠান তাঁরা।
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, গত ৫ আগস্টের পর থেকে দেশের সাংবাদিকদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন নেমে এসেছে। একই সঙ্গে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও মতপ্রকাশের নানা রকম লিখিত ও অলিখিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে বাক্স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও ঘৃণ্য পদক্ষেপ।
অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ মাসে বিভিন্ন পর্যায় ও প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকভাবে সাংবাদিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এ সময়ে অন্তত ৪১২ জন সাংবাদিককে হত্যা মামলাসহ হয়রানিমূলক মামলায় আসামি করা হয়েছে। ৩৯ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শতাধিক সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তিন শতাধিক সাংবাদিককে। হেনস্তামূলক মামলা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। এ ছাড়া ঢাকাসহ সারা দেশের সহস্রাধিক সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি, ১৬৮ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন প্রেসক্লাবে ১০১ জনের সদস্যপদ স্থগিত, বাতিল, বহিষ্কার এবং মিডিয়া দখলের মতো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে।
বিবৃতে আরও বলা হয়, পত্রিকা অফিসের সামনে ‘মব’ সৃষ্টি করে জেয়াফতের মতো ঘটনাও দেখেছে দেশবাসী, যা গোটা বিশ্বে বিরল ঘটনা।
এসব ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃবিতে বলা হয়, ঢালাও মামলা, চাকরিচ্যুতিসহ অন্যান্য নির্যাতনের ঘটনায় সরকারের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি, উল্টোটাও দেখা গেছে।
উল্লিখিত বিষয়গুলোর পক্ষে তথ্যপ্রমাণ বিবৃতিদাতাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন সৈয়দ বদরুল আহসান, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মুকিদ চৌধুরী, সাংবাদিক সুজাত মনসুর, আশেকুন নবী, সৈয়দ আনাস পাশা, মোহাম্মদ মকিস মনসুর, সৈয়দ এনামুল ইসলাম, টি এম আহমদ কায়সার, জেসমিন চৌধুরী ও সফিয়া জাহির।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস