তুলা আমদানির ওপর আরোপিত ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ। তারা বলেছে, অগ্রিম আয়কর আরোপ সরকারের রাজস্ব সংগ্রহের জন্য সুবিধাজনক মনে হলেও সিদ্ধান্তটি আত্মঘাতী। এতে বস্ত্র খাত বড় ধরনের সংকটে পড়বে। চলতি মূলধন সংকুচিত হতে হতে একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যাবে অনেক বস্ত্রকল।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানকে দেওয়া এক চিঠিতে এমনটাই উল্লেখ করেছেন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। গতকাল বৃহস্পতিবার এই চিঠি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছেও পাঠানো হয়েছে।

২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার ছাড়াও দেশি বস্ত্রকলে উৎপাদিত তুলার সুতা ও কৃত্রিম আঁশ এবং অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি সুতার ওপর উৎপাদন পর্যায়ে কেজিপ্রতি সুনির্দিষ্ট কর ৫ টাকা অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করেছে বিটিএমএ।

বিটিএমএর তথ্যানুযায়ী, সংগঠনটির ১ হাজার ৮৫৮টি সুতাকল, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং বস্ত্রকল রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাকশিল্পের সুতা ও কাপড়ের ৭০ শতাংশের জোগানদাতা হচ্ছে বস্ত্র খাত। ফলে বস্ত্রশিল্পের যেকোনো সমস্যা তৈরি হলে তা পোশাকশিল্পেও এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

— বর্তমানে ১,৮৫৮টি সুতাকল, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং বস্ত্রকল বিটিএমএর সদস্য।
— এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার।
— দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাকশিল্পের ৭০% সুতা ও কাপড়ের জোগান দেয় বস্ত্র খাত।

বিটিএমএ সভাপতি চিঠিতে বলেন, ‘তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করায় বস্ত্রকলগুলোর উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বাড়বে, যা আমাদের সক্ষমতাকে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় পিছিয়ে দেবে। ফলে কোনো অবস্থাতেই দেশি বস্ত্রকলগুলো আগামী দিনে টিকে থাকতে পারবে না। আমদানি করা তুলা খালাসে প্রতিবার ২ শতাংশ হারে এআইটি পরিশোধ করতে হলে বছর শেষে করভার বেড়ে গিয়ে ২৯ শতাংশে উঠবে। এতে চলতি মূলধন ধারাবাহিকভাবে সংকুচিত হবে, যা বস্ত্র খাতের মতো আমদানি পরিপূরক শিল্পের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠবে। এভাবে চক্রবৃদ্ধি হারে এআইটি পরিশোধ করতে হলে তিন বছরের মধ্যে চলতি মূলধন শূন্য হয়ে যাবে। ফলে দেশি বস্ত্রকলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং প্রতিযোগী দেশগুলো থেকে আমাদের দেশে সুতা আমদানি বেড়ে যাবে। তাতে পণ্য রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন কমবে। সে জন্য ২ শতাংশ এআইটি প্রত্যাহার করা জরুরি।’

দেশি কারখানায় উৎপাদিত সুতার ওপর সুনির্দিষ্ট কর প্রত্যাহারের দাবির সপক্ষে বিটিএমএ সভাপতির যুক্তি হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের সুতার ওপর উৎপাদন পর্যায়ে কেজি প্রতি সুনির্দিষ্ট কর ৩ টাকা বাড়িয়ে ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে দেশি স্পিনিং খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। তার কারণ সুতার বিক্রয়মূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং ক্রেতা প্রতিষ্ঠান দেশি সুতা কিনতে নিরুৎসাহিত হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক বস্ত্রকল বন্ধ হয়ে যাবে।

শওকত আজিজ আরও দাবি করেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

বিটিএমএ জানিয়েছে, বর্তমানে তীব্র জ্বালানিসংকট, শ্রমিকের মজুরি, বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটজনিত কারণে বস্ত্র খাতের উৎপাদন ব্যয় ১৫-২০ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে জ্বালানিসংকটের কারণে উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে দেশি বস্ত্রকল, বিশেষ করে সুতার কলগুলো সংকটে পড়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বস ত র খ ত ব ট এমএ আমদ ন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

আয়কর রিটার্নের পরিবর্তে টিআইএন সনদ দিয়েই ট্রেড লাইসেন্স, ক্রেডিট কার্ডসহ ১২টি সেবা পাওয়া যাবে

সরকারি–বেসরকারি নানা ধরনের সেবা নিতে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হয়। আবার কিছু সেবা নিতে আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র লাগে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরের (টিআইএন) সনদ দেখালেই হবে। অবশ্য নাম ও টিআইএনসংবলিত সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র জমা করতে হবে।

চলতি অর্থবছর থেকে ১২টি সেবা নিতে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের পরিবর্তে টিআইএন সনদ দিলেই হবে। এনবিআর বলছে, করদাতাদের জন্য সেবা সহজ করা ও টিআইএনধারী বাড়ানোই এ উদ্যোগের লক্ষ্য। অনেক সেবা গ্রহণকারীর এখনো নিয়মিত রিটার্ন জমা দেওয়ার অভ্যাস নেই। টিআইএন সনদ থাকলেই প্রাথমিক কর শনাক্তকরণ সম্ভব।

এবার দেখা যাক, ওই ১২ সেবা কী কী

১. ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া

সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ব্যবসার জন্য লাইসেন্স নিতে রিটার্ন লাগবে না। টিআইএন থাকলেই হবে।

২. সমবায় সমিতি নিবন্ধন

নতুন সমবায় সমিতি গঠনের সময় শুধু টিআইএন সনদ জমা দিলেই হবে।

৩. বিমা সার্ভেয়ারের লাইসেন্স

সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার হতে চাইলে টিআইএনই যথেষ্ট।

৪. ক্রেডিট কার্ড নেওয়া ও নবায়ন

ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নতুন কার্ড নিতে বা নবায়ন করতে রিটার্ন নয়, টিআইএন দেখাই হবে।

৫. পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ

চিকিৎসক, আইনজীবী, সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ারসহ অন্যান্য স্বীকৃত পেশায় সদস্য হতে রিটার্ন নয়, টিআইএন সনদই চলবে।

৬. পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব

পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে রিটার্ন লাগবে না।

৭. সরকারি বেতন-ভাতা গ্রহণ

মান্থলি পেমেন্ট অর্ডারের (এমপিও) মাধ্যমে দশম গ্রেড বা তার ঊর্ধ্বের কর্মচারীদের বেতন পেতে টিআইএন থাকলেই হবে।

৮. মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে আয়

বিকাশ, নগদ, রকেটসহ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কমিশন বা ফি পেলে শুধু টিআইএন দেখাতে হবে।

৯. দলিল লেখক ও স্ট্যাম্প বিক্রেতার লাইসেন্স

স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি বা কার্টিজ পেপার ভেন্ডর এবং দলিল লেখক হিসেবে নিবন্ধনে রিটার্ন নয়, টিআইএন দেখাই হবে।

১০. অটোরিকশা বা ত্রিচক্রযান নিবন্ধন

ত্রিচক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নের সময় টিআইএনই যথেষ্ট।

১১. ই-কমার্স ব্যবসার লাইসেন্স

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ই-কমার্স ব্যবসা করতে লাইসেন্স নিতে টিআইএন দেখালেই চলবে।

১২. প্রাতিষ্ঠানিক নিবন্ধন বা গঠন

কোনো কোম্পানি, ট্রাস্ট বা সমিতি গঠনের বছর বা পরের বছরে নিবন্ধনের সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর পরিবর্তে টিআইএন সনদ দেখাতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আয়কর রিটার্নের পরিবর্তে টিআইএন সনদ দিয়েই ট্রেড লাইসেন্স, ক্রেডিট কার্ডসহ ১২টি সেবা পাওয়া যাবে