নির্বাচন সামনে রেখে বহু ষড়যন্ত্রের কথা শুনতে পাচ্ছি: শফিকুর রহমান
Published: 4th, July 2025 GMT
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আমরা বহু ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা শুনতে পাচ্ছি, বহু ধরনের কথা ময়দানে শুনতে পাচ্ছি। বহু ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আলামত বুঝতে পারছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিই, শেখ হাসিনার হাতে সব বাহিনী ছিল। দোর্দণ্ড প্রতাপ ছিল, জায়গায় জায়গায় নিজের লোক বসিয়েছিল। ক্যাডার মাস্তানদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিল। কিন্তু যখন জনগণের জাগরণ ও বিস্ফোরণ হয়েছে, তখন কি তাকে কেউ রক্ষা করতে পেরেছে?’
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর জেলা স্কুলমাঠে জামায়াতে ইসলামীর বিভাগীয় জনসভায় শফিকুর রহমান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, যে জনগণ এত মূল্য দিয়ে একটা পরিবর্তন এনেছে, সেই জনগণ আরেকটা ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে দেবে না।
জামায়াতের রংপুর মহানগর ও জেলা শাখা আয়োজিত এই জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলের আমির শফিকুর রহমান।
লালমনিরহাটের পাটগ্রামে থানায় হামলাও ভাঙচুরের কথা উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, শুধু পাটগ্রাম নয়, আজকে সারা দেশকে পাটগ্রাম বানিয়ে ফেলেছে একদল লোক। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনের কল্পনাও করা যায় না। তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। আমরা সেই সংস্কারগুলোর কথা বলেছি। আমরা ওই সংস্কারও আদায় করে ছাড়ব। সুষ্ঠু নির্বাচনও আমরা ইনশা আল্লাহ আদায় করে ছাড়ব।’
সব দেশপ্রেমিক ও ইসলামিক দলে একসঙ্গে মিলিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আমলের নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে থাকেন, তাঁদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। কোনো প্রশাসনিক ক্যু করতে দেওয়া হবে না। ভোটকেন্দ্রে কোনো মাস্তানতন্ত্র চলবে না। কালোটাকার কোনো খেলা সহ্য করা হবে না।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা কথা দিচ্ছি ফ্যাসিবাদবিরোধী এই লড়াই তত দিন চলবে, যত দিন দেশে ফ্যাসিবাদের সামান্য চিহ্নও থাকবে। ফ্যাসিবাদকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত আমাদের লড়াই কেউ থামাতে পারবে না।’
বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না, আক্রমণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলি, অতীতে যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁদের ব্যাপারে রাষ্ট্র দেখবে। এখন যাঁরা দায়িত্ব আছেন, আপনারা দায়িত্ব পালন করুন। আপনারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। জনগণ আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে আপনাদের শক্তি জোগাবে। অতএব অন্যায়কারীদের পক্ষ নেবেন না। ফ্যাসিস্টদের পক্ষ নেবেন না।’
জামায়াতের এই জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন সদ্য কারামুক্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমার মুক্তির প্রথম সোপান হচ্ছে আবু সাঈদ। যিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে যে গণ-অভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল, যার পরিসমাপ্তি হয়েছিল ৫ আগস্ট, ২০২৪। ৫ আগস্ট না হলে আপনারা আমার জানাজা পড়তেন।’ তিনি বলেন, আবু সাঈদের হত্যাকারীদের বিচারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দ্রুতগতিতে বিচার করে তাঁদের সমুচিত শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
রংপুর মহানগর জামায়াতের আমির এ টি এম আজম খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, আব্দুল হালিম, ঢাকা নগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মমতাজ উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান বেলাল, কেন্দ্রীয় শিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
১৭ বছর পর জামায়াতে ইসলামী রংপুরে এই বিভাগীয় জনসভা করল। বিকেল তিনটায় জনসভা শুরু হলেও সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলের নেতা-কর্মী, সমর্থকেরা জেলা স্কুলমাঠে আসতে শুরু করেন। জুমার নামাজের পর মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকায় জমায়েত ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুনএই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কিসের, কী নির্বাচন হবে: জামায়াত আমির২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনবিএনপির পাল্টা শক্তি হতে তৎপর ইসলামি দলগুলো ১০ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ম য় ত র আম র ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
রংপুরে জামায়াতের জনসভাস্থলে জমতে শুরু করেছে কর্মী-সমার্থক
দীর্ঘ ১৭ বছর পর রংপুরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর বিভাগীয় জনসভা। শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকেল ৩টায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল থেকেই দলে দলে কর্মী-সমর্থকরা ছুটে আসছেন রংপুর নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে সভায় আগত লোকজনের সুবিধা এবং যানযট নিরসনে নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীর দায়িত্বও যেন ছিল চোখে পড়ার মতো।
জনসভাকে ঘিরে চারদিকে ইসলামী স্লোগান, রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার আর রাজনৈতিক উজ্জীবনের ছাপ। জনসভাস্থলকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ যেন বিরাজ করছে।
দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, বিপ্লব পরবর্তী এটি হবে উত্তরাঞ্চলের ইসলামী রাজনীতির এক ঐতিহাসিক রূপান্তরের মুহূর্ত।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার সুষ্ঠু বিচার, তিস্তা মহা পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন, প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি এই জনসভার মূল দাবি।
স্থানীয় দলীয় সূত্র জানায়, গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেই জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান শুরু করেন উত্তরাঞ্চল সফর। সেই ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত রংপুর বিভাগে তিনি সম্পন্ন করেছেন ১০টি সাংগঠনিক সফর। আজকের এই জনসভা তার একাদশ (১১তম) সফর বলেও জানান তিনি।
জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন কারাবন্দী থেকে সদ্য মুক্ত হওয়া জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও রংপুরের কৃতি সন্তান এটিএম আজহারুল ইসলাম থাকছেন প্রধান বক্তা হিসেবে।
এছাড়াও রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে দলীয়ভাবে মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থীরাও মঞ্চে থাকবেন বলে জানা গেছে। জনসভাকে ঘিরে গঠিত হয়েছে হাজারের অধিক স্বেচ্ছাসেবক সদস্য। যারা সভাস্থলসহ পুরো নগরীকে নিরাপত্তা, সুশৃঙ্খলতা ও ব্যবস্থাপনায় কাছ করছেন সকাল থেকেই।
জনসভা বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান রংপুর মহানগর জামায়াতের আমির এটিএম আজম খান জানান, প্রস্তুতি সম্পন্ন। জনসভায় দুই লাখেরও বেশি মানুষের উপস্থিতির আশা করা হচ্ছে। রংপুরের মাটি থেকে যে আওয়াজ উঠেছে, তা ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েবে উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় বলে দাবি তার।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, এই জনসভা কেবল একটি সমাবেশ নয় বরং এটি হতে যাচ্ছে এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার ঘোষণা।
রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, রংপুর জেলা স্কুল মাঠে জামাতের বিভাগীয় জনসভা থেকে ঘিরে পুলিশের যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেন এই জনসভায় ঘিরে কোন পক্ষ কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেদিকেও সজাগ রয়েছে মহানগর পুলিশ।
ঢাকা/আমিরুল/এস