সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হোক
Published: 5th, July 2025 GMT
রাজধানীর বনশ্রী ও আফতাবনগর এলাকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও, দেড় দশকের বেশি সময় ধরে তাঁদের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা চারটি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। নগর-পরিকল্পনার এক চরম ব্যর্থতাই বলতে হয় একে। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি, বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও অসুস্থদের দুর্দশা আমাদের নগর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
প্রথম আলোর এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে মেরাদিয়া পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার জুড়ে থাকা এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। বনশ্রী ও আফতাবনগরে অর্ধশত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্তত ২০টি হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে। যেহেতু বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল বনশ্রীতে অবস্থিত, তাই আফতাবনগরের বাসিন্দাদের এই সাঁকোগুলো ব্যবহার করে এপারে আসতে হয়। কিন্তু এই নড়বড়ে সাঁকোতে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। ঝড়-বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে ওঠে। সাঁকো ভেঙে গেলে বাঁশের কাঠামোর ওপর কাঠের নৌকা সাজিয়ে পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়, তখন প্রতিবার পাঁচ টাকা করে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়।
ভাবা যায়, ঢাকার মতো একটি আধুনিক শহরের প্রাণকেন্দ্রে মানুষ এখনো বাঁশের সাঁকোর ওপর নির্ভরশীল! আফতাবনগরের কোনো বাসিন্দাকে বনশ্রী আসতে চাইলে রামপুরা সেতু ঘুরে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিতে হয়। আর বনশ্রীর বাসিন্দাদের আফতাবনগরে যেতে হলে বাড্ডা ইউলুপ ঘুরে আসা মানে দূরত্ব দ্বিগুণ বৃদ্ধি। এই ভোগান্তি শুধু সময় নষ্ট করছে না, অর্থনৈতিক চাপও সৃষ্টি করছে।
স্থানীয় লোকজন দেড় দশক ধরে কংক্রিটের সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। এই দীর্ঘ অপেক্ষার কারণ কী? কেন নগর কর্তৃপক্ষ এত দিন এই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে অবহেলা করে আসছে?
তবে আশার কথা হলো, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুক হাসান মো.
আমরা আশা করব, এবার আর শুধু আশ্বাসে সীমাবদ্ধ থাকবে না, সিটি করপোরেশন দ্রুততার সঙ্গে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তা সম্পন্ন করবে। তবে সেতুগুলো নির্মাণের সময় খাল সুরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে। সেতু করতে গিয়ে খাল সংকুচিত হয়ে না পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে, সেটিই কাম্য।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাঁকো মাড়িয়ে চলে লাখো মানুষ
রাজধানীর বনশ্রী ও আফতাবনগরকে দুই ভাগ করে বয়ে গেছে রামপুরা খাল। সময়ের সঙ্গে খালটির দুই পাশে নগরজীবনের বড় পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু নির্বিঘ্ন যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বনশ্রী ও আফতাবনগরের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন চারটি বাঁশের সাঁকো।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে মেরাদিয়া পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে চারটি বাঁশের সাঁকো রয়েছে। এসব সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ দুই পাশে যাতায়াত করে। বনশ্রী ও আফতাবনগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য অনেক শিক্ষার্থী এই সাঁকো ব্যবহার করেন।
আফতাবনগরের কোনো বাসিন্দা যদি বনশ্রী আসতে চান, তাহলে তাঁকে রামপুরা সেতু ঘুরে আসতে হয়। এতে অন্তত চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। জাহিদুজ্জামান, বনশ্রীর বাসিন্দাস্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বনশ্রী ও আফতাবনগরে ছোট–বড়ো মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া অন্তত ২০টি ছোট–বড় হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে। বনশ্রীতে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল থাকায় আফতাবনগরের বাসিন্দাদের এপারে আসতে হয়।
এদিকে, সাঁকোগুলো নড়বড়ে হওয়ায় প্রায়ই ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। সঙ্গে কিছুদিন পরপর সাঁকো মেরামতের কাজ হলে কিংবা ঝড়বৃষ্টিতে দুই পাশের মানুষের যাতায়াতে নেমে আসে অসহনীয় ভোগান্তি। যদিও দেড় দশক ধরে এসব সাঁকোর পরিবর্তে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে বনশ্রী ও আফতাবনগরের মানুষ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সিটি করপোরেশন কিংবা সরকারের অন্য কোনো পক্ষ থেকে এর আগে কখনো সাঁকোগুলো মেরামত বা নির্মাণের কাজ হয়নি। সাঁকো ভেঙে গেলে বা মেরামতের প্রয়োজন হলে তা আফতাবনগর জহুরুল ইসলাম সোসাইটির উদ্যোগে করা হয়।
একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বললে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আফতাবনগরের বাসিন্দারা কেউ গাড়ি বা রিকশা নিয়ে বনশ্রীর দিকে যেতে চাইলে রামপুরা ব্রিজ ঘুরে যেতে হয়। বাঁশের সাঁকোতে মানুষ হাঁটলেও সেটি নড়তে থাকে। বেশি আতঙ্কে থাকে শিশু ও বৃদ্ধরা। যদিও বাসিন্দারা দেড় দশক ধরে বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে কংক্রিটের সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন।
বনশ্রীর ইনটেলিজেন্টসিয়া স্কুলের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি প্রতিদিন আফতাবনগর থেকে বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে এই ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে আসেন।
যাতায়াতে দুর্ভোগের কথা জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অসংখ্য মানুষের ভোগান্তি। যাতায়াত সবচেয়ে কঠিন হয় যখন বৃষ্টি হয় কিংবা সাঁকোগুলো ভেঙে যায়। খালের ওপর কয়েকটি কাঠের নৌকা পরপর লাগিয়ে মানুষ পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়। তখন এপাশ থেকে ওপাশে যেতে পাঁচ টাকা করে দিতে হয়।
মঙ্গলবার বনশ্রী জি ব্লকের সামনের বাঁশের সাঁকো পার হওয়ার সময় কথা হয় আফতাবনগরের আরেক বাসিন্দা দিপা রানীর সঙ্গে। তিন বছর ধরে তিনি আফতাবনগর থেকে এই পথে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করেন।
দিপা রানী বলেন, ‘সাঁকো অনেকটা নড়বড়ে। কিন্তু কিছু করার নেই। বাচ্চার স্কুলের জন্য প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। কিছুদিন পরপর যখন সাঁকো মেরামতের কাজ করা হয়, তখন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ি। তার ওপর শীত মৌসুমে খালে পানি কম থাকলে উৎকট গন্ধে ভোগান্তি আরও বাড়ে।’
বনশ্রীর বাসিন্দা জাহিদুজ্জামান বললেন, আফতাবনগরের কোনো বাসিন্দা যদি বনশ্রী আসতে চান, তাহলে তাঁকে রামপুরা সেতু ঘুরে আসতে হয়। এতে অন্তত চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। তবে বিড়ম্বনার বিষয় হলো, বনশ্রীর কোনো বাসিন্দা যদি আফতাবনগরে যেতে চান, তাহলে বাড্ডা ইউলোপ ঘুরে আসতে হয়। এতে দূরত্ব দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
আফতাবনগর জহুরুল ইসলাম সোসাইটির সহসভাপতি হাশেম ভুঁইয়া জানান, এই ভোগান্তি লাঘবের জন্য তাঁরা বিভিন্ন সময় সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তবে শিগগিরই এই এলাকায় বাঁশের সাঁকোর স্থলে একাধিক পাকা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে কয়েক মাসের মধ্যে সেতুগুলোর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা।
একই রকম কথা বললেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের কষ্ট দূর করতে সিটি করপোরেশন থেকে তিনটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি হবে সেতু। যেগুলোয় গাড়ি চলাচলের পাশাপাশি ফুটপাতে মানুষ হাঁটতে পারবে। একটি ফুটওভার ব্রিজও (পদচারী সেতু) হবে। তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এগুলোর কাজ শুরু হওয়ার কথা।