চট্টগ্রামে ডেঙ্গু বাড়ছে, মশা নিধনে পুরোনো তথ্যেই ভরসা
Published: 6th, July 2025 GMT
বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জুন-জুলাইতেই শনাক্ত হয়েছে অর্ধশতাধিক রোগী। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশা নিধনে করপোরেশন তিন থেকে পাঁচ মাসের একটি ক্রাশ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে এই কর্মসূচি চলছে চট্টগ্রাম নগরে মশার প্রজননের ওপর পুরোনো জরিপ ধরে। অর্থাৎ কোন এলাকায় মশার প্রজনন বেশি, তা নিয়ে নতুন করে কোনো জরিপ নেই।
প্রতিবছর জুন থেকে অক্টোবর–নভেম্বর পর্যন্ত সময়কে ডেঙ্গুর প্রধান মৌসুম ধরে স্বাস্থ্য বিভাগ। সারা বছর ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলেও এই সময়টাতে রোগী বেড়ে যায়। বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন হয়। সে হিসেবে বর্ষার শুরু থেকে এবারও ডেঙ্গু রোগী ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। একই মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া রোগও হয়। এবার চিকুনগুনিয়াও ভালোভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে।
২০২৩-২৪ সালে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), সিটি করপোরেশন ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সমন্বয়ে একটি জরিপকাজ চলে। এতে চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে পাঁচটি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হলো কোতোয়ালি, বাকলিয়া, বায়েজিদ, চকবাজার ও বন্দর এলাকা। ওই জরিপ ধরেই বর্তমানে মশকনিধন কার্যক্রম চলছে। নতুন কোনো গবেষণা এখন আর হয়নি।চলতি মাসের প্রথম পাঁচ দিনে মোট ডেঙ্গু রোগী মিলেছে ৫০ জন। জুন মাসে মোট ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায় ১৭৬ জন। চলতি বছর চট্টগ্রামের মোট রোগী ৪৯৫ জন ডেঙ্গু রোগীর প্রায় অর্ধেকই জুন থেকে এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। চলতি বছর মারা গেছে দুজন। ডেঙ্গু বাড়ার আরও বড় প্রমাণ পাওয়া যায় হাসপাতালের ভর্তি তালিকা থেকে। গতকাল শনিবার মোট ৪৩ জন রোগী ভর্তি ছিল বিভিন্ন হাসপাতালে। অথচ ১৪ জুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল মাত্র ২২ জন।
সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করেছে। নগর এবং উপজেলাগুলোতেও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। সামনের কয়েক মাস এই রোগ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতা তৈরিসহ নানাভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি।’
পুরোনো জরিপে ওষুধ ছিটানোডেঙ্গু মোকাবিলায় সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। ২৮ জুন থেকে শুরু হওয়া ক্রাশ কর্মসূচি অনুযায়ী করপোরেশন প্রতিদিন প্রজননপ্রবণ তিনটি স্থানে মশকনিধনে প্রায় ৭০ জন কর্মী সচেষ্ট থাকেন। এ ছাড়া সাধারণভাবে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় সকালে লার্ভিসাইট ওষুধ ছিটাচ্ছে এবং বিকেলে ফগিং করা হয় বলে জানান সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো.
২০২৩-২৪ সালে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), সিটি করপোরেশন ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সমন্বয়ে একটি জরিপ কাজ চলে। এতে চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে পাঁচটি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হলো কোতোয়ালি, বাকলিয়া, বায়েজিদ, চকবাজার ও বন্দর এলাকা। ওই জরিপ ধরেই বর্তমানে মশকনিধন কার্যক্রম চলছে। নতুন কোনো গবেষণা এখন আর হয়নি।
মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম বলেন, সারা বছর স্প্রে ও ফগিং কার্যক্রম চলে। ক্রাশ কর্মসূচি হটস্পট ধরে করা হচ্ছে। আগের জরিপ অনুযায়ী এটা করা হচ্ছে। সেই হটস্পটগুলো এখনো বিদ্যমান রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। নতুন জরিপ কাজ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চলবে।
সিটি করপোরেশন মশা নিধনে তিন মাস আগে বাকলিয়া এলাকায় একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। ওই প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণাভিত্তিক নতুন মশা নিধন সমাধান বায়োলজিক্যাল লার্ভিসাইড ‘বিটিআই’ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছে। এতে ফল ভালো পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন মেয়র শাহাদাত হোসেন।তবে গত ফেব্রুয়ারিতে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি দল জরিপ করে গেছে। সেই জরিপটির ফলাফল এখনো করপোরেশন হাতে পায়নি। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে জরিপকাজ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ফেব্রুয়ারি মাসে এডিস মশার বিস্তার ততটা থাকে না, যতটা বর্ষার এই সময়টাতে বিদ্যমান। ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামে মোট ডেঙ্গু রোগী ছিল ২৮ জন।
সিটি করপোরেশন এবং সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে নতুন করে জরিপকাজ চালানোর জন্য আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত কীটতত্ত্ববিদ মো. মইনুদ্দিন বলেন, ফেব্রুয়ারিতে একটি জরিপকাজ করে গিয়েছে আইইডিসিআর। কিন্তু তখন মশার বিস্তার কম ছিল। নতুন একটি জরিপের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে। এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি কবে নাগাদ হতে পারে।
এদিকে সিটি করপোরেশন মশা নিধনে তিন মাস আগে বাকলিয়া এলাকায় একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। ওই প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণাভিত্তিক নতুন মশা নিধন সমাধান বায়োলজিক্যাল লার্ভিসাইড ‘বিটিআই’ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছে। এতে ফল ভালো পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। লার্ভিসাইড বিটিআই সব এলাকায় ব্যবহারের চিন্তাভাবনাও করপোরেশনের রয়েছে বলে শরফুল ইসলাম জানান।
সচেতনতায় জোরডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতায় জোর দিয়ে চলেছে দুই সংস্থা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রচারপত্র বিতরণসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এই প্রচারপত্রে ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার রাখা, জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াসহ নানা সচেতনতামূলক বার্তা রয়েছে।
এ ছাড়া সিটি করপোরেশন জনসচেতনতা বাড়াতে এলাকাভিত্তিক প্রচারণা শুরু করেছে। নির্মাণাধীন ভবন, পরিত্যক্ত অবকাঠামো বা পণ্য এবং পানি জমে থাকে—এমন সরঞ্জাম অপসারণে এনফোর্সমেন্ট অভিযানও শুরু করবে বলে করপোরেশন সূত্র জানায়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান মেয়র শাহাদাত হোসেন।
এ ছাড়া সিটি করপোরেশন নগরের আলকরণে সদরঘাট জেনারেল হাসপাতালে বিনা মূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইমাম হোসেন বলেন, ডেঙ্গু আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। এ ছাড়া বিনা মূল্যে এনএস ১ অর্থাৎ ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া কোভিড-১৯–এর অ্যান্টিজেন পরীক্ষাও করপোরেশনের জেনারেল হাসপাতালে বিনা মূল্যে করা হয়েছে।
জ্বর ছাড়ছে না কিছুতেই। হাসপাতালের বিছানায় বসে সন্তানের মাথায় জলপট্টি তিচ্ছেন এক মা। আজ দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা এলাকায় অবস্থিত জেনারেল হাসপাতালে। গতকাল বেলা ৩টায়উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ ম প রকল প এল ক য় নত ন ক ব কল য়
এছাড়াও পড়ুন:
আরো ৩ ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দিল হামাস
ইসরায়েলের কাছে আরো তিন জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। গতকাল রবিবার রাতে মরদেহগুলো রেডক্রসের হাতে তুলে দেয় তারা।
আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
আরো পড়ুন:
যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় হামলা, ৭৫ শতাংশ ত্রাণ প্রবেশে বাধা
পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, “রেডক্রসের মাধ্যমে ইসরায়েল তিন মৃত জিম্মির কফিন গ্রহণ করেছে। যেগুলো গাজায় থাকা প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা শিনবেতের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিচয় শনাক্তে মরদেহগুলো শনাক্ত কেন্দ্রে পাঠানো হবে।”
যদি এই জিম্মির পরিচয় শনাক্ত হয় তাহলে যুদ্ধবিরতির পর হামাসের হস্তান্তর করা মরদেহের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছাবে। গত মাসে যখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় তখন তাদের কাছে ২৮ জিম্মির মরদেহ ছিল।
ইসরায়েলের অভিযোগ, হামাস ইচ্ছাকৃতভাবে মরদেহগুলো ফেরত দিতে দেরি করছে। কিন্তু সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বলেছে, মরদেহগুলো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ায় এগুলো উদ্ধার করতে তাদের সময় লাগছে।
হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড জানায়, রবিবার সকালে দক্ষিণ গাজার একটি সুড়ঙ্গ থেকে তারা মরদেহগুলো উদ্ধার করেছে।
পরে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে বলা হয়, “সব জিম্মিদের পরিবারকে সেই অনুযায়ী আপডেট করা হয়েছে এবং এই কঠিন সময়ে আমাদের হৃদয় তাদের সাথে রয়েছে। আমাদের জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং শেষ জিম্মিটি ফিরে না আসা পর্যন্ত থামবে না।”
হোস্টেজ এবং মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম গাজা থেকে বাকি সব মৃত জিম্মিকে উদ্ধারের জন্য নেতানিয়াহুকে জরুরিভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।
হামাস ও ইসরায়েল একে অপরকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।
হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, রবিবার উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা তাদের সৈন্যদের জন্য হুমকিস্বরূপ এক সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে।
গত ১৩ অক্টোবর যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে গাজা থেকে জীবিত সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস।
ঢাকা/ফিরোজ