বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জুন-জুলাইতেই শনাক্ত হয়েছে অর্ধশতাধিক রোগী। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশা নিধনে করপোরেশন তিন থেকে পাঁচ মাসের একটি ক্রাশ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে এই কর্মসূচি চলছে চট্টগ্রাম নগরে মশার প্রজননের ওপর পুরোনো জরিপ ধরে। অর্থাৎ কোন এলাকায় মশার প্রজনন বেশি, তা নিয়ে নতুন করে কোনো জরিপ নেই।

প্রতিবছর জুন থেকে অক্টোবর–নভেম্বর পর্যন্ত সময়কে ডেঙ্গুর প্রধান মৌসুম ধরে স্বাস্থ্য বিভাগ। সারা বছর ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলেও এই সময়টাতে রোগী বেড়ে যায়। বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন হয়। সে হিসেবে বর্ষার শুরু থেকে এবারও ডেঙ্গু রোগী ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। একই মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া রোগও হয়। এবার চিকুনগুনিয়াও ভালোভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে।

২০২৩-২৪ সালে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), সিটি করপোরেশন ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সমন্বয়ে একটি জরিপকাজ চলে। এতে চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে পাঁচটি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হলো কোতোয়ালি, বাকলিয়া, বায়েজিদ, চকবাজার ও বন্দর এলাকা। ওই জরিপ ধরেই বর্তমানে মশকনিধন কার্যক্রম চলছে। নতুন কোনো গবেষণা এখন আর হয়নি।

চলতি মাসের প্রথম পাঁচ দিনে মোট ডেঙ্গু রোগী মিলেছে ৫০ জন। জুন মাসে মোট ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায় ১৭৬ জন। চলতি বছর চট্টগ্রামের মোট রোগী ৪৯৫ জন ডেঙ্গু রোগীর প্রায় অর্ধেকই জুন থেকে এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। চলতি বছর মারা গেছে দুজন। ডেঙ্গু বাড়ার আরও বড় প্রমাণ পাওয়া যায় হাসপাতালের ভর্তি তালিকা থেকে। গতকাল শনিবার মোট ৪৩ জন রোগী ভর্তি ছিল বিভিন্ন হাসপাতালে। অথচ ১৪ জুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল মাত্র ২২ জন।

সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করেছে। নগর এবং উপজেলাগুলোতেও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। সামনের কয়েক মাস এই রোগ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতা তৈরিসহ নানাভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি।’

পুরোনো জরিপে ওষুধ ছিটানো

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। ২৮ জুন থেকে শুরু হওয়া ক্রাশ কর্মসূচি অনুযায়ী করপোরেশন প্রতিদিন প্রজননপ্রবণ তিনটি স্থানে মশকনিধনে প্রায় ৭০ জন কর্মী সচেষ্ট থাকেন। এ ছাড়া সাধারণভাবে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় সকালে লার্ভিসাইট ওষুধ ছিটাচ্ছে এবং বিকেলে ফগিং করা হয় বলে জানান সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো.

শরফুল ইসলাম।

২০২৩-২৪ সালে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), সিটি করপোরেশন ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সমন্বয়ে একটি জরিপ কাজ চলে। এতে চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে পাঁচটি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হলো কোতোয়ালি, বাকলিয়া, বায়েজিদ, চকবাজার ও বন্দর এলাকা। ওই জরিপ ধরেই বর্তমানে মশকনিধন কার্যক্রম চলছে। নতুন কোনো গবেষণা এখন আর হয়নি।

মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম বলেন, সারা বছর স্প্রে ও ফগিং কার্যক্রম চলে। ক্রাশ কর্মসূচি হটস্পট ধরে করা হচ্ছে। আগের জরিপ অনুযায়ী এটা করা হচ্ছে। সেই হটস্পটগুলো এখনো বিদ্যমান রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। নতুন জরিপ কাজ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চলবে।

সিটি করপোরেশন মশা নিধনে তিন মাস আগে বাকলিয়া এলাকায় একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। ওই প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণাভিত্তিক নতুন মশা নিধন সমাধান বায়োলজিক্যাল লার্ভিসাইড ‘বিটিআই’ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছে। এতে ফল ভালো পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন মেয়র শাহাদাত হোসেন।

তবে গত ফেব্রুয়ারিতে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি দল জরিপ করে গেছে। সেই জরিপটির ফলাফল এখনো করপোরেশন হাতে পায়নি। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে জরিপকাজ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ফেব্রুয়ারি মাসে এডিস মশার বিস্তার ততটা থাকে না, যতটা বর্ষার এই সময়টাতে বিদ্যমান। ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামে মোট ডেঙ্গু রোগী ছিল ২৮ জন।

সিটি করপোরেশন এবং সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে নতুন করে জরিপকাজ চালানোর জন্য আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত কীটতত্ত্ববিদ মো. মইনুদ্দিন বলেন, ফেব্রুয়ারিতে একটি জরিপকাজ করে গিয়েছে আইইডিসিআর। কিন্তু তখন মশার বিস্তার কম ছিল। নতুন একটি জরিপের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে। এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি কবে নাগাদ হতে পারে।

এদিকে সিটি করপোরেশন মশা নিধনে তিন মাস আগে বাকলিয়া এলাকায় একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। ওই প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণাভিত্তিক নতুন মশা নিধন সমাধান বায়োলজিক্যাল লার্ভিসাইড ‘বিটিআই’ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছে। এতে ফল ভালো পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। লার্ভিসাইড বিটিআই সব এলাকায় ব্যবহারের চিন্তাভাবনাও করপোরেশনের রয়েছে বলে শরফুল ইসলাম জানান।

সচেতনতায় জোর

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতায় জোর দিয়ে চলেছে দুই সংস্থা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রচারপত্র বিতরণসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এই প্রচারপত্রে ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার রাখা, জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াসহ নানা সচেতনতামূলক বার্তা রয়েছে।

এ ছাড়া সিটি করপোরেশন জনসচেতনতা বাড়াতে এলাকাভিত্তিক প্রচারণা শুরু করেছে। নির্মাণাধীন ভবন, পরিত্যক্ত অবকাঠামো বা পণ্য এবং পানি জমে থাকে—এমন সরঞ্জাম অপসারণে এনফোর্সমেন্ট অভিযানও শুরু করবে বলে করপোরেশন সূত্র জানায়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান মেয়র শাহাদাত হোসেন।

এ ছাড়া সিটি করপোরেশন নগরের আলকরণে সদরঘাট জেনারেল হাসপাতালে বিনা মূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইমাম হোসেন বলেন, ডেঙ্গু আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। এ ছাড়া বিনা মূল্যে এনএস ১ অর্থাৎ ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া কোভিড-১৯–এর অ্যান্টিজেন পরীক্ষাও করপোরেশনের জেনারেল হাসপাতালে বিনা মূল্যে করা হয়েছে।

জ্বর ছাড়ছে না কিছুতেই। হাসপাতালের বিছানায় বসে সন্তানের মাথায় জলপট্টি তিচ্ছেন এক মা। আজ দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা এলাকায় অবস্থিত জেনারেল হাসপাতালে। গতকাল বেলা ৩টায়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ ম প রকল প এল ক য় নত ন ক ব কল য়

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ