চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক ড. কুশল বরণ চক্রবর্ত্তীর পদোন্নতির জন্য গঠিত বোর্ড বাতিল ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত শুক্রবার বোর্ড বাতিল করা হয়।

এ দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়ানো সেই শিক্ষার্থীরা দুঃখ প্রকাশ করেছে। ফলে তাদের ক্ষমা করে দিয়েছে প্রশাসন ও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। গতকাল শনিবার বাগবিতণ্ডায় জড়ানো শিক্ষার্থীদের আপাতত ‘ক্ষমা’ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড.

কামাল উদ্দিন।

শুক্রবার বিকেলে উপাচার্যের কার্যালয়ে ড. কুশল বরণের পদোন্নতির সাক্ষাৎকারের আগে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সেখানে গিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে গঠিত পদন্নোতির বোর্ড বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামিম উদ্দীন খান সমকালকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতি ও সার্বিক পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে আমরা ড. কুশল বরণ চক্রবর্ত্তীর পদোন্নতির বোর্ড প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেহেতু এটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পরবর্তীতে বোর্ড বসবে।’

ঘটনার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ‘আপনাকে আমরা বসিয়েছি’ বলে উপাচার্যের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়েছে সাবেক ছাত্রঅধিকার পরিষদের নেতা তাহসীন হাবিব। তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে চাইনি। ঘটনাটা আবেগের বশবর্তী হয়ে হয়েছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।’

উপাচার্যের কক্ষে কাজগপত্র দেখিয়ে চরম উত্তেজিত হতে যায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের অফিস সম্পাদক হাবিবুল্লাহ খালেদকে। তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল কুশল বরণ চক্রবর্ত্তীর পদোন্নতির বিরোধিতা করা। সেই প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, আমরা অন্যায় করিনি। আমরা বলেছি, জুলাইয়ের বিপ্লবী প্রশাসন কীভাবে ফ্যাসীবাদী শিক্ষককে পদোন্নতি দেই। আমাদের প্রতিবাদ ছিল, সেখানে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাচার্যের অফিসে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, সেটি অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। তাই আপাতত তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি থাকবে। প্রয়োজনে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নতুন নির্দেশনাও জারি করা হতে পারে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপ চ র য র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’

ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।

এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’

ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।

কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?

কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।

ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’

ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ