ব্রিকস সম্মেলনে গাজায় শর্তহীন যুদ্ধবিরতির আহ্বান
Published: 7th, July 2025 GMT
ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে একত্র হয়েছেন উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির দেশগুলোর জোট ব্রিকসের নেতারা। জোটের দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে বেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়েছেন তাঁরা। ব্রিকসের নেতাদের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় ‘শর্তহীন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে। ইরানে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দায়ও সরব হয়েছে ১১ দেশের এই জোট।
গতকাল রোববার ছিল সম্মেলনের প্রথম দিন। এবার জোটের ১৭তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ব্রিকসের ১১ সদস্যদেশের মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিল, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও ইথিওপিয়া। এই দেশগুলোয় বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ বসবাস করে এবং বৈশ্বিক উৎপাদনে ৪০ শতাংশের বেশি অবদান রাখে।
রোববার সম্মেলনের বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় দ্রুত, স্থায়ী ও শর্তহীন একটি যুদ্ধবিরতির জন্য সব পক্ষকে সদিচ্ছার সঙ্গে আরও আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছে সদস্যদেশগুলো। একই সঙ্গে গাজা এবং ফিলিস্তিনের দখল করা অন্য সব এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। কাতারের রাজধানী দোহায় বর্তমানে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা চলছে।
ব্রিকস সম্মেলনে ইরানের প্রতি প্রতীকী সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সামরিক হামলার নিন্দাও জানানো হয়েছে। ১৩ জুন ইরানে হঠাৎ হামলা চালায় ইসরায়েল। এর পর থেকে টানা ১২ দিন দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলে। পরে ২১ জুন রাতে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এর দুই দিন বাদে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়।
শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
বিভিন্ন দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ নিয়েও ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে ব্রিকস। জোটের বিবৃতিতে এই শুল্ককে ‘অবৈধ ও স্বেচ্ছাচারী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। গত এপ্রিলে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে সেই শুল্ক স্থগিত করা হয়। শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য বিভিন্ন দেশকে ১ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছেন ট্রাম্প।
ব্রিকস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক বৈশ্বিক বাণিজ্যের নিয়মকে লঙ্ঘন করেছে। বৈশ্বিক বাণিজ্য আরও হ্রাস পাওয়ার হুমকি সৃষ্টি করেছে। প্রভাবিত করেছে বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনাকে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন শুল্কের কারণে মেক্সিকো থেকে উপসাগরীয় অঞ্চল পর্যন্ত অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে।
এরই মধ্যে ব্রিকসের ‘আমেরিকাবিরোধী নীতির’ সঙ্গে যেসব দেশ নিজেদের জোটটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করবে, তাদের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। রোববার মার্কিন শুল্ক নিয়ে ব্রিকসের প্রতিক্রিয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এ ঘোষণা দেন দিনি। তবে ‘আমেরিকাবিরোধী নীতি’ বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন, তা খোলাসা করেননি ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এই হুমকির পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং আজ সোমবার বলেছেন, ‘শুল্ক আরোপের বিষয়ে চীন বারবার নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে। বেইজিংয়ের অবস্থান হলো বাণিজ্য ও শুল্কের লড়াইয়ে কেউ বিজয়ী হবে না। সংরক্ষণবাদ সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখায় না।’
আরও পড়ুনইরানে হামলার নিন্দা ব্রিকসের, কাদের ওপর অতিরিক্ত ১০% শুল্ক বসানোর হুমকি দিলেন ট্রাম্প৯ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র শ ল ক আর প র আহ ব ন ইসর য় ল র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
জন্মভিটা থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে কবি নজরুলের ব্যবহার সামগ্রী!
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে তাঁর ব্যবহারকৃত সামগ্রী। সোমবার এমন অভিযোগ জানিয়ে চুরুলিয়ায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন কবির ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী আলি রেজা। চুরুলিয়ায় নজরুল একাডেমিকে অন্ধকারে রেখে কবির স্মৃতিচিহ্নগুলো ওই জেলারই আসানসোলে অবস্থিত কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তুলে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আলী রেজার।
নজরুল ইসলামের জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার চুরুলিয়াতেই রয়েছে তাঁর ব্যবহার করা নানা ধরনের স্মৃতিচিহ্ন। কবির জন্মভিটা সেই পুরোনো মাটির বাড়িটি ১৯৫৬ সালে ভেঙে ফেলে ১৯৫৮ সালে সেখানেই তৈরি করা হয় একটি বহুতল ভবন- যা নজরুল একাডেমি নামে পরিচিত।
এই নজরুল একাডেমির নিচ তলায় রয়েছে একটি সংগ্রহশালা। এখানে রয়েছে কবির হাতে লেখা পান্ডুলিপি, প্রথম প্রকাশিত গল্প, কবিতা এবং গানের পত্রিকার কপি, তাঁর ব্যবহৃত পোশাক, বাদ্যযন্ত্র, বিভিন্ন সময়ে পাওয়া সন্মাননা, প্রমিলা দেবীর ব্যবহৃত খাট। আর দেয়ালে রয়েছে কবির বিভিন্ন সময়ের ছবি। ওই সংগ্রহশালায় রয়েছে ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট কবির মৃত্যু ও পরবর্তী শবযাত্রার আলোকচিত্র। সারা বছর তা দেখতে এই একাডেমিতে ভিড় জমান সাধারণ মানুষ। কিন্তু কবির সেসব স্মৃতিচিহ্নগুলো ওই জেলারই আসানসোলে অবস্থিত কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তুলে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
বিষয়টি সামনে আসতেই একদিকে যেমন চুরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দারা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন, তেমনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নজরুল একাডেমি কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, কোনো অবস্থায় সেই সমস্ত জিনিস গ্রামের বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। যদিও বিতর্ক ওঠার পরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মিউজিয়ামকে বিশ্বমানের করে তোলার লক্ষ্যেই সেটি সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে। তাই আপাতত মিউজিয়ামে থাকা কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। সংস্কারের কাজ শেষ হলেই তা পুরনো জায়গায় রেখে আসা হবে।
কাজী আলি রেজা জানান, ‘শুধু ভারতবর্ষ নয়, এমনকি বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর বহু মানুষ এই মিউজিয়াম দেখতে আসেন। সকলেরই এই মিউজিয়াম দেখার প্রতি একটা আগ্রহ থাকে। কিন্তু বর্তমানে সেই মিউজিয়ামটাকেই বলা হচ্ছে, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। অর্থাৎ এই মিউজিয়ামে থাকা কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু আমরা বলেছি, এটা কোনোমতেই সম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই এক ট্রাক ভর্তি সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরেকটি ট্রাক ভর্তি করে সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা সেটা বাধা দিয়েছি।'
তিনি বলেন, ‘কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে একবার বৈঠকে ঠিক হয়েছিল নজরুল একাডেমি থেকে কোনো জিনিসই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হবে না বরং এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, অন্য কোনো জায়গা থেকে কবির ব্যবহৃত অন্য জিনিসপত্র যেন সংগ্রহ করে আমরা এই মিউজিয়ামে রাখতে পারি। এর বদলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই মিউজিয়ামে যে জিনিসগুলো সংগ্রহ করে রেখেছি, সেগুলোই অন্যত্র চলে যাচ্ছে।’
কাজী আলি রেজা আরও বলেন, ‘নজরুল মেলা উপলক্ষে কয়েকদিন আগেই আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা কবি নজরুলের বাড়িটি সংস্কারের জন্য ১০ লাখ রুপি আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছিলেন। পাশাপাশি পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীও আলাদা করে ৫ লাখ রুপি আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই অর্থ কোথায় গেল, কি কাজ হয়েছে তা এখনও আমাদের জানা নেই। জানালা-দরজা ভেঙে পড়ছে, লাইট পাওয়া যায় না, দেওয়ালের রঙ চাইলে পাওয়া যায় না। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলেই তাদের দায় এড়াচ্ছেন। এই অবস্থায় আমরা সাধারণ মানুষের মতামত নিচ্ছি, যাতে কোনোভাবেই এই নজরুল একাডেমি বা এই সংগ্রহশালার কোনা জিনিস নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে না চলে যায়।’
কাজী আলি রেজার অভিমত, ‘কবিতীর্থ চুরুলিয়া মানুষের কাছে একটি আবেগ। কবির মিউজিয়াম থেকে সেসব জিনিস বিশ্ববিদ্যালয় চলে গেলে এটা অন্ধকার হয়ে যাবে। তখন আর কোনা মানুষ এখানে আসবেন না।’
সংবাদ সম্মেলনে আলি রেজা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নজরুলের ভ্রাতুষ্পুত্র রেজাউল করিমের মেয়ে ও নজরুল একাডেমির সঙ্গে যুক্ত থাকা সঙ্গীতশিল্পী সোনালি কাজীসহ স্থানীয় বাসিন্দারাও।
নজরুল একাডেমির এখন কোনো অস্তিত্ব নেই
অন্যদিকে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ড. চন্দন কোনার বলেন, ‘নজরুল একাডেমির এখন কোনো অস্তিত্ব নেই। নজরুল একাডেমি, কবির বাস্তুভিটে, সংগ্রহশালা সবকিছুই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উদ্যোগে চুরুলিয়ায় একটি সংস্কারের কাজ চলছে। এর জন্য দেড় কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পর্যটন বিভাগ এই পুরো প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে ধীরে ধীরে কবির ভিটেবাড়ি, সংগ্রহশালা সংস্কার হবে। আর সেই কথা মাথায় রেখেই সংগ্রহশালায় থাকা কবির পাণ্ডুলিপিসহ অন্য জিনিসপত্র সংরক্ষণ এবং সুরক্ষিত রাখার জন্য সেগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আসা হচ্ছে। সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হলে ফের কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ওই সংগ্রহশালায় রেখে দেওয়া হবে। মূলত ওই মিউজিয়াম থেকে বিশ্বমানের করে তোলার লক্ষ্যেই রাজ্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।’
তার মতে, ‘নজরুল কারও ব্যক্তিগত বিষয় নয়। সারা বিশ্বের লোক নজরুলকে নিয়ে কাজ করছেন। আমার মনে হয়, কিছু মানুষ কবির পরিচয় দিয়ে এসব বিষয় নিজেদের কাছে কুক্ষিগত করে রাখতে চাইছেন।’