‘আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ’ সৌদি আরবের সঙ্গে বৈঠকে ইরান
Published: 10th, July 2025 GMT
মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ সৌদি আরবের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইরান। মঙ্গলবার রিয়াদে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি। ইসরায়েল সঙ্গে সংঘাতের পর প্রথমবারের মতো সৌদি আরবের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে ইরান।
সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা গেছে, মঙ্গলবারের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে মূলত ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে ঘিরেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৈঠকে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় ইসরায়েলের প্রতি নিন্দা জানানোয় সৌদির সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আব্বাস আরাগচি।
এএফপি জানায়, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, রিয়াদ আশা করছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যকে স্থিতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক পালন করবে। পাশাপাশি তিনি আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ইরানের সঙ্গে যেসব দেশের বিরোধ আছে, তা কূটনৈতিক পন্থায় সমাধানে সহযোগিতা করবে রিয়াদ।
রয়টার্স জানায়, নিজেদের সামরিক স্থাপনায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার কথা প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি এক সেনা কর্মকর্তা জানান, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের সামরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাম গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ‘খুব কমই’ জায়গায় আঘাত হেনেছে ও যেসব সামরিক অবকাঠামোতে আঘাত হেনেছে, সেগুলো সক্রিয় রয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শূন্য সুখের শহর
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখার মন্ত্রটা যখন পেয়েছি, তত দিনে রুদ্র ঘর বেঁধে ফেলেছে আকাশেরই ঠিকানায়। আর আমি মাত্র রাঙা কৈশোরের দিকে হাঁটছি, পথ পুরোটা ফুরোয়নি। কেবল ‘খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ’ লুকানো শিখে ফেলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। সেই তখন থেকেই ‘ভালো আছি বা ভালো থেকো’ বলার জন্য আকাশকেই বেছে নিয়েছিলাম একমাত্র ঠিকানা হিসেবে। আর এখন এই চটজলদি বার্তার যুগে তো সবার সঙ্গে সম্পর্কগুলোই হয় খুব পানসে; নয় অকারণে জটিল। সম্পর্কগুলোই যেখানে অস্থির, চিঠি লেখা সেখানে পুরোটাই এক বাহুল্য অথবা সংকোচ। ঠিকানাই–বা জানি কজনের? আর ডাকপিয়নই–বা কই যে পরম মমতায় এই চিঠি পৌঁছে দেবে কারও গন্তব্যে? তারপরেও একটা চিঠি লিখতে মন চাইল। কী আশ্চর্য চিঠি লেখার মতো কেউ কোথাও নেই। কারও আর সময় নেই, একটা চিঠির অপেক্ষায় থাকবে। যত্ন করে হলুদ খামটা ছিঁড়ে আস্তে আস্তে ভাঁজ খুলে মেলে ধরবে কারও কথার মালায় সাজানো এক টুকরো কাগুজে বায়োস্কোপ।
যে একটি নগরে দুজন থাকাটাই ছিল একটিমাত্র সুখ। সেই সুখের খঞ্জনা ছেড়ে এত দূরে এসে দেখি, বহু কিছুর ভিড়ে সুখ এখানে কেবলই শূন্য। এ এক শূন্য সুখের শহর।সে বাস্তবে কেউ থাকুক বা না থাকুক, আমার কল্পনার রুদ্রকে লিখতে বাধা কই? সে পড়ুক বা না পড়ুক, এই উদয়পদ্মের শহর থেকে না হয় একদিন এই চিঠি পৌঁছে যাবে তার আকাশের ঠিকানায়। যে শহরে এত দিন কাছাকাছি থেকেও ‘কত দিন দেখা হয়নি’ আমাদের প্রধানতম আক্ষেপ। সে শহর ছেড়ে হাজার মাইল দূরে আসার পর মনে হলো, চাক্ষুস না হোক, কাগজে–কলমে অন্তত দেখাটা হোক। ফুল, পাখি আর মিষ্টি বকুলের জন্য ‘ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে’ রাখা শুভকামনা পৌঁছে যাক আমাদের অঞ্জনা নদীতীরের খঞ্জনা গ্রামের মতো নগরে। যে একটি নগরে দুজন থাকাটাই ছিল একটিমাত্র সুখ। সেই সুখের খঞ্জনা ছেড়ে এত দূরে এসে দেখি, বহু কিছুর ভিড়ে সুখ এখানে কেবলই শূন্য। এ এক শূন্য সুখের শহর।
নিউইয়র্ক শহরে প্রথমবার এসেছিলাম ঠিক বছর দশেক আগে। সারা দিনের জন্য। সেদিন একঝলক দেখে মনে হয়েছিল একে উদয়পদ্মের শহর। সেদিন যে এসেছিলাম, আসার কথা ছিল তারও বছর দুয়েক আগে একটু লম্বা সময়ের জন্য, একটা ফেলোশিপ নিয়ে। কিন্তু ওই যে, মায়া, খঞ্জনার সুখ। শেষ মুহূর্তে মায়ায় পড়ে আর আগানো হলো না। তবে মনে রয়ে গিয়েছিল। সে সময় এলে কোথায় আবাস হতো, কোথায় অফিস হতো, সে ছবিগুলো মনের ভেতর রয়ে গিয়েছিল বলেই সেবার দিন ভ্রমণে আসা।
নিউইয়র্ক শহরে প্রথমবার এসেছিলাম ঠিক বছর দশেক আগে। সারা দিনের জন্য। সেদিন একঝলক দেখে মনে হয়েছিল একে উদয়পদ্মের শহর। সে সময় এলে কোথায় আবাস হতো, কোথায় অফিস হতো, ভেবে দিন ভ্রমণে আসা।এবার যখন এলাম, শরীরটা এল বটে, মনটা রয়ে গেল আমার সেই মায়া জড়ানো, স্মৃতি মাখানো ছোট্ট বসতঘরেই। যে ঘরের পরতে পরতে জমা ধূলিও আমার চেনা, আপন। যে ঘরের জানালার পর্দাটা, দরজার চৌকাঠটা, বেসিনের আয়নাটাতেও গল্প লেগে আছে। আমাদের নিজস্ব গল্প। সেই সব অজস্র গল্পকে তালাবন্ধ করে যখন এ শহরে পৌঁছালাম, তখন শহরজুড়ে ফুটে আছে রংবেরঙের টিউলিপ। আর টিউলিপ থেকে চোখ তুলে তাকালেই সাদা গোলাপি চেরিতে তখন মোহনীয় বসন্ত। যেন ফুলের শহর। চেরি ঝরার সময় দ্রুতই চলে এল, চেরি যখন যাই যাই করছে, তখন দেখি লাল ইটের বাড়িগুলোর ফ্রন্ট ইয়ার্ডে মানুষসমান উঁচু ঝোপে ঢেলে ফুটে আছে বাগানবিলাসের মতো একটা লাল গোলাপি ফুল। কোথাও–বা লম্বা গাছে ফুটেছে সাদা ঝিরঝিরে ফুল, যার গন্ধে মনে পড়ে হাস্নাহেনার কথা। অথচ এদের কারও নাম জানি না। এদের সঙ্গে দেখাই যে হলো প্রথমবার। ঘরের কাছে পার্কে হাঁটতে গেলে দেখি বকুল ফুলের মতো ফুল ফুটেছে। সে-ও আমার অচেনা। তবে চেনা ফুলও পেয়েছি, যার নাম গোলাপ। চেরি আর টিউলিপ যেই না উধাও হলো, সেই একেবারে উজাড় করে ফুটে উঠল গোলাপ। এখানে, সেখানে, যেখানে যেভাবে পারল। এখন গোলাপও বলছে যাই। আর সপ্তাহখানেক ধরে মাথা উঁচু করে জাগছে উদয়পদ্মরা।
প্রথম অস্থায়ী ঠিকানা এ দেশের যিনি প্রধান ব্যক্তি, তাঁর বিশাল সাদা বাড়ির কাছাকাছি এলাকায়