সাগরে ড্রোন উড়িয়ে অরিত্রের সন্ধান চালাচ্ছে বিমানবাহিনী
Published: 12th, July 2025 GMT
কক্সবাজার সাগর উপকূলের কুতুবদিয়া থেকে টেকনাফের নাফ নদীর মোহনা পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে সাগরে নিখোঁজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরিত্র হাসানের (২২) সন্ধান মেলেনি।
শনিবার (১২ জুলাই) সকালে পঞ্চম দিনের তল্লাশি অভিযানে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে সকাল থেকে বিমানবাহিনীর সদস্যরা ড্রোন উড়িয়ে অরিত্রের সন্ধান চালাচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন হিমছড়ি সৈকতে গোসল করার সময় দুই সহপাঠীসহ সাগরে ভেসে যান অরিত্র হাসান। ভেসে যাওয়ার আড়াই ঘণ্টার মধ্যে কে এম সাদমান রহমান সাবাব (২১) একই সৈকতে এবং পর দিন বুধবার (৯ জুলাই) সকালে ২৫ কিলোমিটার উত্তরে শহরের নাজিরারটেক শুঁটকি মহাল সৈকতে ভাসমান অবস্থায় আসিফ আহমেদের (২২) মরদেহ পাওয়া যায়। কিন্তু অরিত্র হাসানের পাঁচ দিনেও খোঁজ মেলেনি।
আরো পড়ুন:
কোস্টাল ক্লিনআপ: আমাদের সমুদ্র আমাদেরই বাঁচাতে হবে
ট্রলার ডুবি: রাতভর সমুদ্রে ভাসছিল ৩ জেলে
তল্লাশি অভিযানের পঞ্চম দিনে ড্রোন উড়িয়ে অরিত্রের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) শাহিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘‘নিখোঁজ অরিত্র হাসানের উদ্ধারকাজে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আজ শনিবার (১২ জুলাই) থেকে ড্রোন দিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের কুতুবদিয়া থেকে টেকনাফের নাফ নদীর মোহনা পর্যন্ত বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’’
ঘটনার পর থেকে উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত রয়েছেন জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীদের সুপারভাইজার মাহবুব আলম। শনিবার (১২ জুলাই) বিকেল ৫টায় মহেশখালীর মাতারবাড়ি চ্যানেলে অভিযানে রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, নিখোঁজ শিক্ষার্থীর সন্ধানে সাগরে তল্লাশি চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস, ট্যুরিস্ট পুলিশ, লাইফগার্ড ও বিচকর্মীরা। সকাল থেকে মহেশখালীর সোনাদিয়া, বাঁকখালী নদীর মোহনা ও কুতুবদিয়া চ্যানেলে তল্লাশি চালানো হয়েছে।
মাহবুব আলম জানান, প্রায় সময় সাগরে গোসলে নেমে নিখোঁজ ব্যক্তিদের দুই-একদিনে মধ্যে মরদেহ ভেসে ওঠে। কিন্তু অরিত্র হাসানের সন্ধান পাঁচ দিনেও মিলছে না। এরই মধ্যে কক্সবাজার উপকূলের সবখানে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। পাশাপাশি উপকূলের মাছ ধরার ট্রলার ও জেলেদের এ বিষয়ে সহায়তার অনুরোধ করা হয়েছে।
নিখোঁজ অরিত্র হাসান বগুড়ার দক্ষিণ সনসনিয়া গ্রামের সাকিব হাসানের ছেলে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী। তার সহপাঠী আসিফ বগুড়া সদরের নারুলি দক্ষিণের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের ছেলে এবং সাবাব ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা কেএম আনিছুর রহমানের ছেলে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মো.
অরিত্রের বাবা সাকিব হাসান জাতীয় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য নিউএজ’-এর জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক। সাগরে গোসল করতে নেমে ছেলে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানার পর স্ত্রীকে নিয়ে তিনি কক্সবাজার আসেন। পাঁচদিনেও একমাত্র সন্তানের সন্ধান না পেয়ে ভেঙে পড়েছেন তারা।
সাকিব হাসান বলেন, ‘‘আমার ছেলেটা খুব মেধাবী ছিল। অনেক যত্ন করে বড় করেছি। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। তার দুই বন্ধুর মরদেহ সৈকতে ভেসে এলেও আমার ছেলের খোঁজ এখনো পাইনি।’’
ঢাকা/তারেকুর/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অর ত র হ স ন র অর ত র র উপক ল র
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনীর বন্যা নিয়ন্ত্রণে রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
ফেনী ও আশপাশের জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ব্যবস্থা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে ‘ঢাকাস্থ ফেনীবাসী’ নামে একটি নাগরিক সংগঠন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ দাবি মানা না হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক ও রেলপথ অবরোধ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে অবস্থানেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ঢাকায় বসবাসরত ফেনী জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেন।
বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বিগত সরকার ফেনীর প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে, যার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। উপদেষ্টারা সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, কিন্তু কাজে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ফেনীবাসী ত্রাণ চায় না, অবিলম্বে বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ব্যবস্থা চায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সরকারের ঘোষণা না এলে ফেনীবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। একই সঙ্গে ভারতীয় পানি আগ্রাসনের ব্যাপারেও সরকারের পদক্ষেপ দাবি করেন তিনি।
মানববন্ধনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘মিথ্যা আশ্বাস আমরা শুনতে চাই না। আর যেন যখন-তখন বন্যায় না ডোবে, সে ব্যবস্থা চাই।’
সভাপতির বক্তব্যে সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে ফেনীর ছাগলনাইয়া ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দিদারুল আলম মজুমদার বলেন, পানিসম্পদ উপদেষ্টা ও তাঁর মন্ত্রণালয় বন্যা নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
দিদারুল আলম বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নামে বিপুল অঙ্কের টাকার অপচয় এবং দায়িত্ব অবহেলার জন্য উপদেষ্টা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি করছি। অবিলম্বে স্থায়ীভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে রোডম্যাপ না হলে অবরোধসহ কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
মানববন্ধন থেকে সাতটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, যাতে উজানের পানি এসে ভাটি এলাকার বন্যার কারণ না হয়; ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী অঞ্চলের বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের রক্ষাকবচ বল্লামুখা বাঁধ ও মুছাপুর ক্লোজার অবিলম্বে পুনর্নির্মাণ; এই এলাকার শহর ও গ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে জলাধার উদ্ধার, পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা তৈরি, নদী খনন ও যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ; চব্বিশ সালের বন্যার পরে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত এক হাজার কোটি টাকার পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ এবং সঠিক তথ্য যাচাই করে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান; বন্যা উপদ্রব এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনতলা ভবন নির্মাণ, যাতে বন্যার সময় এগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়; পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইনের আওতায় এবং ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেওয়া বন্ধ করা।
ফেনী কমিউনিটির মুখপাত্র বুরহান উদ্দিন ফয়সলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) পরিচালক ও দাগনভূঞা উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ, ফেনী ফোরামের সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসাইন, আইনজীবী জসিম উদ্দিন তালুকদার, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ নাজমুল হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজিম উদ্দিন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শাহ মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মনির উদ্দিন, পরশুরাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন পলাশ, ফেনী সদর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, শ্রমিক দল নেতা আবদুর রহিম, ফেনী এলিট ক্লাবের সভাপতি ফয়জুল্লাহ নোমানী, মনিপুর স্কুলের শিক্ষক রিয়াজুদ্দিন ও দেলোয়ার হোসেন, ফেনী সোসাইটি উত্তরার সহসাধারণ সম্পাদক এমরানুল হক, সোনালী ব্যাংকের সিবিএ নেতা ইউসুফ আলী, কর্মসংস্থান ব্যাংকের সিবিএ নেতা নাসিরুদ্দিন প্রমুখ।