কক্সবাজার সাগর উপকূলের কুতুবদিয়া থেকে টেকনাফের নাফ নদীর মোহনা পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে সাগরে নিখোঁজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরিত্র হাসানের (২২) সন্ধান মেলেনি।

শনিবার (১২ জুলাই) সকালে পঞ্চম দিনের তল্লাশি অভিযানে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে সকাল থেকে বিমানবাহিনীর সদস্যরা ড্রোন উড়িয়ে অরিত্রের সন্ধান চালাচ্ছেন।

গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন হিমছড়ি সৈকতে গোসল করার সময় দুই সহপাঠীসহ সাগরে ভেসে যান অরিত্র হাসান। ভেসে যাওয়ার আড়াই ঘণ্টার মধ্যে কে এম সাদমান রহমান সাবাব (২১) একই সৈকতে এবং পর দিন বুধবার (৯ জুলাই) সকালে ২৫ কিলোমিটার উত্তরে শহরের নাজিরারটেক শুঁটকি মহাল সৈকতে ভাসমান অবস্থায় আসিফ আহমেদের (২২) মরদেহ পাওয়া যায়। কিন্তু অরিত্র হাসানের পাঁচ দিনেও খোঁজ মেলেনি।

আরো পড়ুন:

কোস্টাল ক্লিনআপ: আমাদের সমুদ্র আমাদেরই বাঁচাতে হবে  

ট্রলার ডুবি: রাতভর সমুদ্রে ভাসছিল ৩ জেলে

তল্লাশি অভিযানের পঞ্চম দিনে ড্রোন উড়িয়ে অরিত্রের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) শাহিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘‘নিখোঁজ অরিত্র হাসানের উদ্ধারকাজে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আজ শনিবার (১২ জুলাই) থেকে ড্রোন দিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের কুতুবদিয়া থেকে টেকনাফের নাফ নদীর মোহনা পর্যন্ত বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’’

ঘটনার পর থেকে উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত রয়েছেন জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীদের সুপারভাইজার মাহবুব আলম। শনিবার (১২ জুলাই) বিকেল ৫টায় মহেশখালীর মাতারবাড়ি চ্যানেলে অভিযানে রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, নিখোঁজ শিক্ষার্থীর সন্ধানে সাগরে তল্লাশি চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস, ট্যুরিস্ট পুলিশ, লাইফগার্ড ও বিচকর্মীরা। সকাল থেকে মহেশখালীর সোনাদিয়া, বাঁকখালী নদীর মোহনা ও কুতুবদিয়া চ্যানেলে তল্লাশি চালানো হয়েছে।

মাহবুব আলম জানান, প্রায় সময় সাগরে গোসলে নেমে নিখোঁজ ব্যক্তিদের দুই-একদিনে মধ্যে মরদেহ ভেসে ওঠে। কিন্তু অরিত্র হাসানের সন্ধান পাঁচ দিনেও মিলছে না। এরই মধ্যে কক্সবাজার উপকূলের সবখানে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। পাশাপাশি উপকূলের মাছ ধরার ট্রলার ও জেলেদের এ বিষয়ে সহায়তার অনুরোধ করা হয়েছে।

নিখোঁজ অরিত্র হাসান বগুড়ার দক্ষিণ সনসনিয়া গ্রামের সাকিব হাসানের ছেলে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী। তার সহপাঠী আসিফ বগুড়া সদরের নারুলি দক্ষিণের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের ছেলে এবং সাবাব ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা কেএম আনিছুর রহমানের ছেলে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মো.

ফরহাদ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন।

অরিত্রের বাবা সাকিব হাসান জাতীয় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য নিউএজ’-এর জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক। সাগরে গোসল করতে নেমে ছেলে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানার পর স্ত্রীকে নিয়ে তিনি কক্সবাজার আসেন। পাঁচদিনেও একমাত্র সন্তানের সন্ধান না পেয়ে ভেঙে পড়েছেন তারা।

সাকিব হাসান বলেন, ‘‘আমার ছেলেটা খুব মেধাবী ছিল। অনেক যত্ন করে বড় করেছি। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। তার দুই বন্ধুর মরদেহ সৈকতে ভেসে এলেও আমার ছেলের খোঁজ এখনো পাইনি।’’ 

ঢাকা/তারেকুর/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অর ত র হ স ন র অর ত র র উপক ল র

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ