ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর একাধিক হামলায় গতকাল শনিবার অন্তত ১১০ জন নিহত হয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, নিহত এই ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৪ জন ছিলেন দক্ষিণ রাফায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে পরিচালিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের’ (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ। তাঁরা খাবারের আশায় সেখানে জড়ো হয়েছিলেন।

এসব হামলা এমন সময় চালানো হলো, যখন গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা নিয়ে কাতারে চলমান আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে এবং উপত্যকার পুরো জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার ইসরায়েলি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিন্দা ক্রমে বাড়ছে।

রাফার আল-শাকুশ এলাকায় জিএইচএফের ওই ত্রাণকেন্দ্রের সামনে ইসরায়েলি সেনারা সরাসরি গুলি ছুড়েছেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। ঘটনাস্থলটিকে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো ‘মানব হত্যাযজ্ঞের কেন্দ্র’ ও ‘মৃত্যুফাঁদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

আরও পড়ুনগাজায় ছয় সপ্তাহে ত্রাণ নিতে যাওয়া ৭৯৮ জনকে হত্যা১১ জুলাই ২০২৫

আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া সামির শায়াত বলেন, ‘যে ব্যাগে খাবার ভরার আশা ছিল, সেটিই হয়ে উঠেছে মৃতদেহ মুড়িয়ে রাখার কাফনের কাপড়। আল্লাহর কসম, এটা ছিল নিছক একটি মৃত্যুফাঁদ। তারা উন্মত্তভাবে গুলি চালিয়েছে। আমি আমার বন্ধুকে কাঁধে করে নিয়ে এসেছি, শহীদদের ভিড়ের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে।’

আরেক আহত ফিলিস্তিনি মোহাম্মদ বারবাখ জানান, ইসরায়েলি স্নাইপারদের গুলিতে এসব মানুষ নিহত হন। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের খাবার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডাকে, ব্যাগ ধরিয়ে দেয়। পরে আমাদের ওপর হাঁস শিকারের মতো গুলি ছোড়ে।’

তারা আমাদের খাবার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডাকে, ব্যাগ ধরিয়ে দেয়। পরে আমাদের ওপর হাঁস শিকারের মতো গুলি ছোড়ে।মোহাম্মদ বারবাখ, ইসরায়েলি হামলায় আহত ফিলিস্তিনি

আল–জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজম বলেন, জিএইচএফ রাফায় শুধু একটি ত্রাণকেন্দ্র চালু রেখেছে। ফলে খাবার সংগ্রহ করতে হাজার হাজার মানুষ দক্ষিণ গাজায় ছুটে আসছেন। সেখানেই ইসরায়েলি সেনারা কোনো পূর্বসতর্কতা ছাড়া গুলি চালান। তিনি আরও বলেন, এ হামলা প্রমাণ করে গাজার কোথাও নিরাপদ নয়, এমনকি ক্ষুধার্ত মানুষের ত্রাণের লাইনও ইসরায়েলি হামলা থেকে মুক্ত নয়।

গাজার চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানানো হয়, গত মে মাসের শেষ থেকে এ পর্যন্ত জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় আট শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার।

আল–আকসা হাসপাতালের মুখপাত্র খলিল আল-দেগরান বলেন, ‘আহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগের মাথা ও পায়ে গুলি লেগেছে। বিপুলসংখ্যক আহত ব্যক্তিকে সামাল দিতে গিয়ে আমাদের হাসপাতালে তীব্র সংকট চলছে।’

আরও পড়ুনইসরায়েলের কারণে থমকে গেছে গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা১৪ ঘণ্টা আগেএকাধিক স্থানে হামলা, শিশু-নারীসহ অনেকে হতাহত

গতকাল গাজার অন্যান্য এলাকাতেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজা শহরের জাফা স্ট্রিটে এক বাড়িতে বোমা হামলায় ৪ শিশুসহ ১৪ জন নিহত হন। এ সময় আহত হন আরও ১০ জন।

উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকায় দুটি আবাসিক ভবনে বোমা হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানায় হাসপাতাল সূত্র। গাজা শহরের পশ্চিমাংশে শাতি শরণার্থীশিবিরে আরেকটি হামলায় আরও সাতজন প্রাণ হারান।

এ ছাড়া উত্তর গাজার বেইত হানুনে ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত ৫০টি বোমা ফেলে পুরো শহর কাঁপিয়ে তোলে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় তারা গাজায় ২৫০ বার হামলা চালিয়েছে।

রাফার আল-শাকুশ এলাকায় জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রের সামনে ইসরায়েলি সেনারা সরাসরি গুলি ছুড়েছেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। ঘটনাস্থলটিকে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো ‘মানব হত্যাযজ্ঞের কেন্দ্র’ ও ‘মৃত্যুফাঁদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

ইসরায়েলের হামলার পাশাপাশি গাজায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহেও বাধা অব্যাহত রয়েছে। যদিও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ উপত্যকাকে দুর্ভিক্ষপীড়িত বলে ঘোষণা করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এতে অন্তত ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। জিম্মি করা হয় অনেককে। ওই দিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এ হামলায় এ পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৮৮২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৫ জন।

গাজার সরকারি তথ্য দপ্তর জানিয়েছে, অপুষ্টিতে ইতিমধ্যে ৬৭ শিশু মারা গেছে। তাদের তথ্যমতে, ৫ বছরের নিচের ৬ লাখ ৫০ হাজার শিশু বর্তমানে গুরুতর অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে।

এ দপ্তরের ভাষ্য, ‘খাদ্য ও ওষুধের অভাবে গত তিন দিনে আমরা বহু মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করেছি। এটা এক নিদারুণ নিষ্ঠুর মানবিক সংকট।’

আরও পড়ুন‘ওরা তো শুধুই বাচ্চা ছিল’: ইসরায়েলি হামলায় নিহত ছেলের শোকে কাতর মা১৯ ঘণ্টা আগেপরিকল্পিত উচ্ছেদ ও মানবিক বিপর্যয়

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান মিডল ইস্ট কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের ফেলো ওমর রহমান আল–জাজিরাকে বলেন, গাজা থেকে বন্দীদের মুক্ত করা নয়, বরং পুরো অঞ্চলকে ধ্বংস করে ফিলিস্তিনি সমাজকে ভেঙে ফেলা ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য।

এই গবেষক বলেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকেই এটা পরিষ্কার, ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো গাজার কাঠামোগত ধ্বংস, ফিলিস্তিনি সমাজ গুঁড়িয়ে দেওয়া ও পুরো উপত্যকা থেকে জনগণকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা।

গাজায় ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়ছে ইসরায়েলি বাহিনী.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ এইচএফ র ইসর য় ল র ও ম নব আম দ র ন ন হত

এছাড়াও পড়ুন:

চলে গেলেন মধুমতী

বলিউড অভিনেত্রী মধুমতী মারা গেছেন। গতকাল মৃত্যু হয় ৮৭ বছর বয়সী এই অভিনেত্রীর। ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন মধুমতী। গতকাল ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
মধুমতীর আসল নাম ছিল হুটোক্সি রিপোর্টার। ধর্মেন্দ্র থেকে দিলীপ কুমার ও জিতেন্দ্রর সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি নৃত্যশৈলের জন্যও সুনাম ছিল মধুমতীর। বলিউড অভিনেত্রী হেলেনের সঙ্গে তাঁর প্রায়ই তুলনা করা হতো। ‘আঁখে’, ‘টাওয়ার হাউজ়’, ‘শিকারি’, ‘মুঝে জিনে দো’র মতো ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি।

বলিউডের বিন্দু দারা সিং, অক্ষয় কুমার, চাঙ্কি পান্ডে, জসবিন্দ্র নরুলা শোক প্রকাশ করেছেন। মধুমতী বলিউডে অভিনয় ও নৃত্য প্রশিক্ষক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। শিল্পীর মৃত্যুতে শোকাহত তাঁর ছাত্রছাত্রীরাও।
গতকাল বিকেলেই বুওশিওয়ারা শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় অভিনেত্রীর। বিন্দু দারা সিং মধুমতীর মৃত্যুতে লিখেছেন, ‘শিক্ষিকা ও পথপ্রদর্শক মধুমতীজির আত্মার শান্তি কামনা করি। সবার ভালোবাসা ও আশীর্বাদ নিয়ে তিনি এক সুন্দর জীবনযাপন করেছেন। আমরা অনেকেই তাঁর থেকে নাচ শিখেছি।’

মধুমতীর জন্ম ১৯৩৮ সালে। ১৯৫৭ সালে এক মারাঠি ছবিতে নৃত্যশিল্পী হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল। ছোটবেলা থেকে নাচের প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল তাঁর। ভরতনাট্যম, কত্থক, কথাকলি ও মণিপুরির মতো নৃত্যের প্রশিক্ষণ ছিল তাঁর। পাশাপাশি বলিউডের ছবিতেও নাচের দক্ষতা ছিল।

আরও পড়ুনক্যানসারে মারা গেছেন ‘মহাভারত’ অভিনেতা১১ ঘণ্টা আগে

নৃত্যশিল্পী দীপক মনোহরকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তখন মধুমতীর বয়স মাত্র ১৯। দীপক বয়সে অনেকটা বড় ছিলেন এবং চার সন্তানের বাবা ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয় অল্প বয়সে। তারপর মধুমতীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ