আবারও নিষেধাজ্ঞা দিলে পারমাণবিক ইস্যুতে ইউরোপের ভূমিকা শেষ হয়ে যাবে, হুঁশিয়ারি ইরানের
Published: 13th, July 2025 GMT
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সতর্ক করে বলেন, দেশটির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হলে তেহরানের পারমাণবিক ইস্যুতে ইউরোপের ভূমিকা শেষ হয়ে যাবে।
২০১৫ সালে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দেশটির সঙ্গে ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা’ বা জেসিপিওএ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
চুক্তির আওতায় ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারত, তবে তা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রা ৩ দশমিক ৭ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হতো। বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ধাপে ধাপে তুলে নেওয়া হবে।
ইসরায়েলের অনুরোধে ২০১৮ সালে ট্রাম্প এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন এবং পরের বছর ইরানও চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়। এর আগপর্যন্ত এটি কার্যকর ছিল।
জেসিপিওএ চুক্তির একটি ধারা অনুযায়ী, ইরান চুক্তি লঙ্ঘন করলে দেশটির ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হবে।
গতকাল শনিবার আরাগচি বলেন, তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা আবার শুরু করার বিষয়ে খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনা শুরুর সময়, স্থান, কাঠামো, উপাদান ও সম্ভাব্য আলোচনার জন্য ইরানের পক্ষ থেকে যে নিশ্চয়তা প্রয়োজন, তার সবকিছু খতিয়ে দেখছি।’
আরাগচি আরও বলেন, বিশ্বের প্রধান ক্ষমতাধর দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই শুধু আলোচনা হবে, দেশটির সামরিক সক্ষমতা নিয়ে নয়।
তেহরানে কূটনীতিকদের উদ্দেশে আরাগচি বলেন, সম্ভাব্য আলোচনার বিষয়বস্তু হবে শুধু পারমাণবিক কর্মসূচি ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে এ কর্মসূচি নিয়ে আস্থা তৈরি। অন্য কোনো বিষয় আলোচনার অন্তর্ভুক্ত হবে না।’
আরও পড়ুনইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী২৭ জুন ২০২৫গত জুনে ইসরায়েল তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনা, সামরিক নেতৃবৃন্দ, পরমাণুবিজ্ঞানী ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ব্যাপক হামলা চালায়। এতে শত শত মানুষ নিহত হন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষ্যমতে, গত ১৩ জুন ইরানের হুমকি থেকে ইসরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এ হামলা চালানো হয়েছে। তবে ইরান বলেছে, জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন করে বিনা উসকানিতে এ হামলা করা হয়েছে।
ইসরায়েলের হামলার পর ইরানও পাল্টা হামলা চালায়। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ হয়ে এ সংঘাতে জড়ায়। বাংকার–বিধ্বংসী বোমা দিয়ে ইরানের ফর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করে। জবাবে ইরান কাতারে মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায়। টানা ১২ দিন ধরে সংঘাত চলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন।
সংঘাতের পর ইরান জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। এর কারণ ছিল সংস্থাটির প্রতি তার গভীর অনাস্থা।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর যুদ্ধ তীব্র না হয়ে থেমে গেল কেন২৬ জুন ২০২৫গতকাল আরাগচি বলেন, পারমাণবিক সংস্থার সঙ্গে ইরানের সহযোগিতা ‘নতুন রূপ নেবে’। কারণ, গত সপ্তাহে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান আইএইএর সঙ্গে ইরানের সহযোগিতা স্থগিত করা নিয়ে এক আইনে স্বাক্ষর করেছেন।
নতুন আইন অনুযায়ী, ভবিষ্যতে আইএইএ যদি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করতে চায়, তবে তাতে সুপ্রিম ন্যাশনাল কাউন্সিলের অনুমোদন লাগবে।
আরও পড়ুনআয়াতুল্লাহ খামেনি নিজেই যুদ্ধকক্ষ থেকে লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন: ইরানি পার্লামেন্ট স্পিকার১৭ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র দ শট র
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস