রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে চলাচলকারী ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ কোম্পানির পরিবহনে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠা সেই যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস কোম্পানির বাসমালিক ওয়ালি উল্লাহ খান বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মুশফিকুর রহমান ওরফে ফাহিম ছাড়াও ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

যুবদল নেতা মুশফিকুর ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস কোম্পানির বাসমালিকেরা। গত বুধবার থেকে তিনি কোম্পানিটির কোনো বাস ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যেতে দিচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ। এর প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়।

এ ঘটনার পর মুশফিকুর রহমানকে যুবদলের সব ধরনের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বাসমালিকেরা জানান, গতকাল বিকেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যাত্রাবাড়ীতে গিয়ে মুশফিকুরের লোকজনকে তাড়িয়ে দেন। এরপর শরীয়তপুরের বাসগুলো যাত্রাবাড়ীতে যাতায়াত শুরু করেছে। বর্তমানে তাঁদের পরিবহনগুলোকে যাত্রাবাড়ীতে চাঁদা দিতে হচ্ছে না।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মুশফিকুর রহমান ও তাঁর ২৫ জন সহযোগীর বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় গতকাল রাতে চাঁদাবাজির মামলা করা হয়েছে। তিনি একটি রাজনৈতিক দলের পরিচয় ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করতেন। ওই দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শরীয়তপুরের পরিবহনগুলোকে ঢাকায় চলাচল করতে আর কাউকে চাঁদা দিতে হচ্ছে না।

শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি ও শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের চেয়ারম্যান ফারুক আহম্মেদ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুশফিকুর রহমানের লোকজন আমাদের গাড়ির প্রতিটি ট্রিপ থেকে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিত। আমরা তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলাম। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার পর প্রশাসন তৎপর হয়েছে। এখন আর যাত্রাবাড়ীতে কোনো চাঁদা দিতে হচ্ছে না।’

বাসমালিক ও শ্রমিকেরা জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর ২০২২ সালের জুনে ঢাকার সঙ্গে শরীয়তপুরের সরাসরি বাস চলাচল শুরু হয়। শরীয়তপুরের আটটি কোম্পানির অন্তত আড়াই শ বাস চলাচল করছে। এর মধ্যে জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের অধীন শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস নামের কোম্পানির বাস চলে ১৭০টি। শরীয়তপুর শহর ও নড়িয়া থেকে এসব বাস ঢাকার যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত যাতায়াত করে।

বাসমালিক ও শ্রমিকদের অভিযোগ, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যাত্রাবাড়ীতে বাসের কাউন্টারগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন যুবদল নেতা মুশফিকুরের লোকজন। তিনি শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস কোম্পানির কাছ থেকে প্রতি মাসে আট লাখ টাকা চাঁদা নিতেন। কিন্তু কয়েক দিন ধরে তিনি কোম্পানিটির কাছে এককালীন পাঁচ কোটি টাকা ও কোম্পানির নামে ১০টি বাস চালানোর দাবি জানান। বাসমালিকেরা এ দাবি না মানলে মুশফিকুরের লোকজন যাত্রাবাড়ীতে শরীয়তপুরের বাস যেতে বাধা দেন এবং বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ১০টি বাস ভাঙচুর করেন। পরে থানায় অভিযোগ ও মামলা করেন বাসমালিকেরা।

মামলা হওয়ার পর যুবদলের সাবেক নেতা মুশফিকুর রহমান আত্মগোপনে চলে গেছেন। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মুশফিকুর রহমানসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাঁরা এখন আর যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে নেই। সেখান থেকে পালিয়ে গেছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্য যাত্রাবাড়ী থানা-পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য বদল ন ত র পর বহন র ল কজন গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন বছরে আয়–ব্যয় ও বিনিয়োগ পরিকল্পনার ১০ পরামর্শ

শুরু হলো ডিসেম্বর মাস। আগামী মাসে শুরু হবে আরেকটি বছর। নতুন বছরে আপনি আপনার আর্থিক পরিকল্পনা কীভাবে সাজাবেন, এর চিন্তাভাবনা এখনই শুরু করা উচিত। পুরো ডিসেম্বর হলো আপনার বিনিয়োগ পোর্টফোলিও গোছানোর সুযোগ। পাশাপাশি আপনার আয়–ব্যয়ের দিকটিও মাথায় রাখতে হবে।

ভবিষ্যতে আপনার লক্ষ্য কী, কোন সম্পদ রাখবেন বা ছাড়বেন—সবকিছুই এখনই ঝালিয়ে নেওয়ার সময়।

২০২৬ সালে বিনিয়োগ ও আয়–ব্যয়ের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম মানা জরুরি, সেগুলো এখানে তুলে ধরা হলো।

১. আয়–ব্যয়ের বাস্তব চিত্র বানান

নতুন বছরের শুরু থেকে মাসিক নগদ প্রবাহের হিসাব রাখুন। অপ্রয়োজনীয় খরচ শনাক্ত করে কমিয়ে আনুন। এটি আপনার বাজেটের ঘাটতি ঠেকাবে।

২. জরুরি তহবিল গঠন করুন

সম্ভব হলে তিন থেকে ছয় মাসের ব্যয়ের সমপরিমাণ টাকা সঞ্চয় রাখুন। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে এটি সবচেয়ে কার্যকর সুরক্ষা। এতে আপনি একধরনের ভরসা পাবেন।

৩. ঋণের ঝুঁকি কমান

উচ্চ সুদের ঋণ দ্রুত পরিশোধে গুরুত্ব দিন। এতে আপনার ওপর চাপ কমবে। দ্রুত ঋণের জাল থেকে বেরিয়ে যেতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য–উপাত্ত অনুসারে, ব্যক্তি খাতে ঋণের চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে শৃঙ্খলা জরুরি।

৪. দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় ও বিনিয়োগ নিশ্চিত করুন

আপনি হয়তো পাঁচ বছর পর একটি ফ্ল্যাট কিনবেন, এটি আপনার পরিকল্পনা বা লক্ষ্য। তাই লক্ষ্যের ভিত্তিতে স্থায়ী আমানত, সরকারি সঞ্চয়পত্র অথবা বাজারভিত্তিক বিনিয়োগ বেছে নিন। মনে রাখবেন, লক্ষ্য পূরণ করতে আপনি ঝুঁকি কম নিয়ে বিনিয়োগ করবেন।

৫. কর পরিকল্পনা সাজান

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সীমা ও ছাড় বিবেচনায় সঞ্চয় বা বিনিয়োগ বেছে নিন। এতে আপনার করের পরিমাণ কমবে। আবার আপনার সঞ্চয়ও বাড়বে। এভাবে কর পরিকল্পনা করতে হবে। তবে সরকার নির্ধারিত কিছু খাতে বিনিয়োগ করলেই কর রেয়াত পাওয়া যায়।

৬. মূল্যস্ফীতির প্রভাব হিসাব করুন

মূল্যস্ফীতি হঠাৎ কমে যায় না। তাই গত কয়েক মাসের মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করে আগামী বছরের পরিকল্পনা করুণ। সেভাবে মাসিক বাজেটে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করুন। ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে সঞ্চয় ও বিনিয়োগে নিয়মিত আপডেট রাখুন।

৭. পারিবারিক ঝুঁকি–সুরক্ষা নিন

পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যবিমা বা জীবনবিমার মতো সুরক্ষা পরিকল্পনা রাখুন, যাতে হঠাৎ টাকার প্রয়োজন হলে সঞ্চয় ভেঙে না যায়।

৮. দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

শিক্ষা, বাড়ি কেনা, অবসর—যে লক্ষ্যই হোক না কেন। এ জন্য আলাদা তহবিল ও সময়সীমা ঠিক করে সঞ্চয় শুরু করুন।

৯. ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থাপনা কাজে লাগান

মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ও অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহার করে লেনদেন নিয়ন্ত্রণ, বাজেট ট্র্যাকিং ও বিল পরিশোধ সহজ রাখুন।

১০. পরিকল্পনা নিয়মিত পর্যালোচনা করুন

অর্থনীতি, সুদহার বা বাজার পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আপনার পরিকল্পনা হালনাগাদ করুন। মাসে একবার পর্যালোচনা করুন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ