ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় ৩০টি দল অংশ নিচ্ছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি।

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে নতুন বিধান প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনের।

প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান (একই ব্যক্তি একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা হতে পারবেন না) নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো অভিন্ন অবস্থানে আসতে পারেনি। তবে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তাতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা ব্যক্তি একই সঙ্গে দলীয় প্রধানের পদে থাকবেন না, এ বিষয়ে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ দল একমত হয়েছে। এ বিষয়ে যেসব দল ও জোটের আপত্তি আছে, তারা জাতীয় সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (ভিন্নমত) দিতে পারবে।

মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার ১৭তম দিনে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। একই ব্যক্তি একসঙ্গে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, এই প্রস্তাবে বিএনপিসহ কয়েকটি দল ও জোটের আপত্তি আছে। কমিশন এ দলগুলোকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে।

এর আগে এ বিষয়ে দুই দফা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা হয়। তবে এ নিয়ে মতভিন্নতা থেকে যায়। বিএনপির পক্ষ থেকে কমিশনকে অনুরোধ করা হয়, জাতীয় সনদে ভিন্নমত উল্লেখ করার সুযোগ রেখে যেন এ বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত দেয়।

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় ৩০টি দল অংশ নিচ্ছে। দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে একটি সমন্বিত প্রস্তাব দেয় ঐকমত্য কমিশন। এতে একটি সংসদীয় বাছাই কমিটির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ের প্রস্তাব করা হয়। এটি নিয়ে দলগুলোকে মতামত জানাতে বলা হয়েছিল। ওই প্রস্তাবের কিছু বিষয় নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু দলের মতভিন্নতা আছে। বিএনপি সোমবার রাতে লিখিতভাবে কমিশনকে তাদের মতামত জানায়।

এদিনের আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ দলীয় অবস্থান তুলে ধরেন। বাছাই কমিটির গঠনপ্রক্রিয়া এবং বাছাইয়ে র‍্যাঙ্কড চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতি নিয়ে দলটির মতভিন্নতা আছে। বিএনপি র‍্যাঙ্কড চয়েজ পদ্ধতির বিপক্ষে। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ের শেষ ধাপ এটি। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, বাছাই কমিটি আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে আসতে না পারলে র‍্যাঙ্কড চয়েজ ভোটিং পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করবে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান হলো, কমিটি প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করতে না পারলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীতে যে রূপরেখা ছিল, সেটি হবে সর্বশেষ ধাপ। ওই রূপরেখায় সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা করার বিধান ছিল। পাশাপাশি কিছু বিকল্পও ছিল।

র‍্যাঙ্কড চয়েজ পদ্ধতি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীরও নীতিগত মতভিন্নতা আছে। তবে এনসিপি এ পদ্ধতির পক্ষে।

গতকালের আলোচনা শেষে বিকেলে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, আবার আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যাবে বলে তিনি আশা করেন।

ইসি, পিএসসি গঠনে নতুন প্রস্তাব

সংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব করেছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। কিন্তু এ বিষয়ে বিএনপিসহ কিছু দলের আপত্তি থাকায় এনসিসি বাদ দিয়ে ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। কিন্তু সেটা নিয়েও বিএনপিসহ কিছু দলের আপত্তি ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। এতে নির্বাচন কমিশন (ইসি), সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংবিধানে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।

গতকাল নতুন প্রস্তাবটি আলোচনায় উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে শুধু নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের বিধান নিয়ে আংশিক আলোচনা হয়। প্রস্তাবিত বিধানে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হবে। এই অনুচ্ছেদে আইনের বিধান সাপেক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।

এর বদলে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব হলো, সংসদীয় একটি বাছাই কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে উপযুক্ত ব্যক্তিদের বাছাই করবে। কমিটিতে থাকবেন স্পিকার (কমিটির প্রধান), ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত), সংসদ নেতা, বিরোধী দলের নেতা, তৃতীয় বৃহত্তম দল বা প্রধান বিরোধী দল ছাড়া অন্য বিরোধী দলগুলোর একজন প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতির একজন প্রতিনিধি (নির্দলীয় ব্যক্তি) এবং প্রধান বিচারপতির প্রতিনিধি হিসেবে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি।

সরকারি কর্মকমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদ্ধতি প্রস্তাব করেছে ঐকমত্য কমিশন।

আলোচনায় কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ছ ই কম ট র প রস ত ব দলগ ল র ব চ রপত র আপত ত কম ট র র পর খ সরক র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

সমস্যা সমাধান করে নির্বাচনের পথে এগোন: অন্তর্বর্তী সরকারকে মির্জা ফখরুল

জুলাই জাতীয় সনদ ও তা বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার অবসান ঘটিয়ে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দিকে মনোযোগী হতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। আপনারা দয়া করে ওই সমস্যাগুলো সমাধান করে যাতে সবাই একসঙ্গে আমরা নির্বাচনের দিকে যেতে পারি, এই সমস্যার সমাধান করে আমরা জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করতে পারি, সেই পথে এগিয়ে চলুন।’

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

এদিন সকালেই জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশ ও জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তরের পর থেকে বিএনপি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে সংস্কার প্রস্তাবগুলোই শুধু উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কমিশনের সভায় আলোচনা হয়নি, এমন বিষয়ও যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট নিয়েও আপত্তি রয়েছে বিএনপি।

গণসংহতি আন্দোলনের অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যে সংকট তৈরি করেছে এই অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন, আমি বিশ্বাস করি যে এই সংকট কেটে যাবে। এই দেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয় না। পরাজয় বরণ করেনি, পরাজয় বরণ করবে না।’

আরও পড়ুনঅন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে: মির্জা ফখরুল৩ ঘণ্টা আগে

যেকোনো চক্রান্তকে পরাজিত করতে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘যে ষড়যন্ত্র আমাদের বিরুদ্ধে হচ্ছে, তাকে পরাজিত করতে হবে। এখানে আমরা বিভিন্ন দল করতে পারি, বিভিন্ন মত থাকতে পারে, বিভিন্ন পথ থাকতে পারে, কিন্তু একটা বিষয়ে আমরা সব সময় এক ছিলাম, বাংলাদেশের ব্যাপারে; সবার আগে বাংলাদেশ—এ ব্যাপারে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক জীবনে হতাশাবাদী নই; কারণ, আমি বিশ্বাস করি যে ন্যায়ের জয় হবেই, সত্যের জয় হবে।’

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে থাকা গণসংহতি আন্দোলনের সাফল্য কামনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা যেমন অতীতে আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, সব সময় আপনাদের সঙ্গে থাকব; কিন্তু অবশ্যই আপনাদেরকে নিজে এই যে জায়গা তৈরি করেছেন, তার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্য কেউ সেটা করে দেবে না।’

শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে গণসংহতি আন্দোলনের জাতীয় সম্মেলনের সূচনা করেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়া সুলতানা এবং শহীদ ওমর নুরুল আবছারের স্ত্রী ফারজানা জাহান। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানের শুরুতেই জুলাই শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের সংগঠক মাহরুখ মহিউদ্দিন, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা প্রমুখ।

কৃষক-শ্রমিক, খেটে খাওয়া, নিপীড়িত ও প্রান্তিক মানুষের ন্যায্য হিস্যার দাবি এবং ‘বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ, অধিকার ও মর্যাদার বাংলাদেশ, জনগণের বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকারে গণসংহতি আন্দোলন তাদের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন করছে। তিন দিনের এই আয়োজনে সারা দেশ থেকে প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকরা দলের আগামী নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।

আরও পড়ুনঅন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে: মির্জা ফখরুল৩ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগামী বছর নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা: ধর্ম উপদেষ্টা
  • শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
  • শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
  • সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
  • তড়িঘড়ি না করে সংবিধান সংস্কারে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান
  • কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে: জাপা মহাসচিব
  • ঐকমত্য কমিশন হাজির করেছে অনৈক্যের দলিল: বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন
  • জুলাই সনদ নিয়ে জট খুলুন, সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে
  • সমস্যা সমাধান করে নির্বাচনের পথে এগোন: অন্তর্বর্তী সরকারকে মির্জা ফখরুল
  • পাহাড়, সমুদ্র, চা–বাগান—একসঙ্গে দেখা যায় যে উপজেলায়