ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পুরোদমে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার দাবি যুক্তরাজ্যের প্রায় ৬০ পার্লামেন্ট সদস্যের
Published: 23rd, July 2025 GMT
ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির ওপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটেনের প্রায় ৬০ জন এমপি ও লর্ড (পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্স ও উচ্চকক্ষ লর্ড সভার সদস্য)।
এক যৌথ চিঠিতে এ আহ্বান জানান ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা। পাশাপাশি সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির জন্য সরকার যে লাইসেন্স ইস্যু করে, তার ব্যাপারে আরও স্বচ্ছতা আনার দাবি জানিয়েছেন।
১৮ জুলাই ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ও বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডসের কাছে পাঠানো চিঠিতে এ দাবি জানানো হয়। এর আগেই ল্যামি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতিতে না এলে ইসরায়েলের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
ইতিমধ্যে ব্রিটেন ফিলিস্তিনিদের মানবিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করার জন্য অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্সসহ ২৭টি দেশের সঙ্গে যৌথভাবে ইসরায়েলের নিন্দা এবং দেশটির প্রতি ফিলিস্তিনের গাজায় জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার আইটিভির গুড মর্নিং ব্রিটেন অনুষ্ঠানে ল্যামি বলেন, ‘গত কয়েক মাসে আমরা একাধিক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছি। (গাজায় ইসরায়েলের) আচরণে পরিবর্তন না এলে এবং মানুষের দুর্দশার অবসান ঘটানো না হলে ভবিষ্যতে সব ধরনের বিকল্প গ্রহণ করার কথা বিবেচনায় আছে।’
গত কয়েক মাসে আমরা একাধিক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছি। (গাজায় ইসরায়েলের) আচরণে পরিবর্তন না এলে এবং মানুষের দুর্দশার অবসান ঘটানো না হলে ভবিষ্যতে সব ধরনের বিকল্প গ্রহণ করার কথা বিবেচনায় আছে।ডেভিড ল্যামি, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীচিঠিতে স্বাক্ষরকারী এমপি ও লর্ডদের দাবি, ইসরায়েলে অবিলম্বে সব ধরনের অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ না করলে ব্রিটিশ সরকার গণহত্যায় সহায়তাকারী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। পার্লামেন্টের এই সদস্যদের কয়েকজন হলেন জারাহ সুলতানা, জন ম্যাকডোনেল ও জেরেমি করবিন।
চিঠির সমন্বয় করা লেবার এমপি স্টিভ উইদারডেন বলেন, ইসরায়েল গাজা মিশিয়ে দিতে যেসব যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে, সেগুলোর ১৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ ব্রিটেনে তৈরি। এ বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ব্রিটিশ সরকারের রপ্তানি লাইসেন্স ছাড়া এ যুদ্ধবিমানগুলো উড়তে পারত না, বোমা ফেলতে পারত না।
উত্তর দাবি করছেন এমপিরা
গত মাসের পার্লামেন্ট বিতর্কের পরপরই আইনপ্রণেতারা এ চিঠি দেন। ওই বিতর্কে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র রপ্তানির অনুমতি নিয়ে আলোচনা হয়।
২০২৪ সালে ইসরায়েলে ব্রিটেনের অস্ত্র রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করে এক্সপোর্ট কন্ট্রোল জয়েন্ট ইউনিট (ইসিজেইউ)। এমপি ও লর্ডরা চিঠিতে এ–সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছেন।
ইতিমধ্যে ব্রিটেন ফিলিস্তিনিদের মানবিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করার জন্য অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্সসহ ২৭টি দেশের সঙ্গে যৌথভাবে ইসরায়েলের নিন্দা এবং দেশটির প্রতি ফিলিস্তিনের গাজায় জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।বিতর্কে ট্রেডমন্ত্রী ডগলাস আলেকজান্ডার দাবি করেন, ২০২৪ সালে ইসরায়েলের জন্য অনুমোদিত ১৪২ মিলিয়ন পাউন্ডের রপ্তানি লাইসেন্সের অধিকাংশ ছিল প্রকৃতপক্ষে ন্যাটো মিত্রসহ তৃতীয় দেশগুলোতে যন্ত্রাংশ পুনঃরপ্তানির উদ্দেশ্যে।
তবে চিঠিতে বলা হয়েছে, ইসিজেইউর তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪ সালে ইস্যু করা ১৪১ দশমিক ৬ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ‘স্ট্যান্ডার্ড ইন্ডিভিজ্যুয়াল এক্সপোর্ট লাইসেন্স’-এর অর্ধেকের বেশি সরাসরি ইসরায়েলে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ইস্যু করা হয়েছে বলে মনে হয়।
চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, মন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী অধিকাংশ লাইসেন্স তৃতীয় দেশের জন্য—এ দাবির সঙ্গে ইসিজেইউর প্রকাশিত তথ্য কীভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়?
আলেকজান্ডার আরও বলেন, ইসরায়েলের জন্য অনুমোদিত সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি লাইসেন্সগুলোর মধ্যে ১২০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি, অর্থাৎ মোট মূল্যের প্রায় ৮৫ শতাংশ ‘একটি নির্দিষ্ট ন্যাটো মিত্রের জন্য একটি একক প্রকল্পে ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর সামরিক পণ্য রপ্তানিতে সহায়তায় ব্যবহারের’ উদ্দেশ্যে ছিল।
আরও পড়ুনগাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে আইরিশ বিশ্ববিদ্যালয়০৪ জুন ২০২৫চিঠিতে এমপি ও লর্ডরা জানতে চেয়েছেন—প্রকল্পটি কী, কোন ন্যাটো মিত্র এতে জড়িত, প্রকল্পটি কখন শুরু হয়েছে এবং এর প্রকৃত উদ্দেশ্য কী।
স্টিভ উইদারডেন বলেন, অস্ত্র রপ্তানি নিয়ে স্বচ্ছতার দাবিতে বারবার চাপ দেওয়া হলেও সরকার এখন পর্যন্ত কোনো জবাব দেয়নি।
‘যেসব রাষ্ট্র বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদের কাছে কোন ধরনের অস্ত্র যাচ্ছে, সে তথ্যের ব্যাপারে আমাদের ন্যূনতম সততা থাকা উচিত’, বলেন উইদারডেন।
আদালতের রায়
গত মাসে ব্রিটিশ হাইকোর্ট একটি মামলা খারিজ করে দেন। মামলাটিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো ব্রিটেনের নির্মিত এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ ইসরায়েলে রপ্তানি বন্ধের আবেদন করেছিল। এ যন্ত্রাংশ বিশ্বব্যাপী একটি যৌথ সরবরাহব্যবস্থার মাধ্যমে ইসরায়েলে যায়।
ইসরায়েল গাজা মিশিয়ে দিতে যেসব যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে, সেগুলোর ১৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ ব্রিটেনে তৈরি। এ বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ব্রিটিশ সরকারের রপ্তানি লাইসেন্স ছাড়া এ যুদ্ধবিমানগুলো উড়তে পারত না, বোমা ফেলতে পারত না।স্টিভ উইদারডেন, লেবার এমপিএ নিয়ে ২০ মাস ধরে আইনি লড়াই শেষে বিচারকেরা বলেন, বিষয়টি আদালতের নয়; বরং নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত, যারা পার্লামেন্ট ও চূড়ান্তভাবে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য।
আরও পড়ুনগাজায় বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা যুদ্ধাপরাধ: জাতিসংঘের মানবাধিকারপ্রধান০৩ জুন ২০২৫আরও পড়ুনইসরায়েলের সমালোচনা করায় জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা০৯ জুলাই ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আহ ব ন জ ন ইসর য় ল র ব যবহ র র জন য র ওপর সরক র ধরন র ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।
আরো পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা
সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ
এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী