ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রস্তুত ইরান, পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ হবে না: পেজেশকিয়ান
Published: 23rd, July 2025 GMT
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইসরায়েল যদি ইরানের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, তবে তাঁর দেশ তা মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তিনি বলেন, তেহরান ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতিকে দীর্ঘস্থায়ী হিসেবে দেখছে না; বরং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি খুব একটা আশাবাদী নন। পাশাপাশি তিনি জোর দিয়ে জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।
আজ বুধবার আল–জাজিরায় প্রচারিত এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ইসরায়েলের সঙ্গে গত মাসের ১২ দিনব্যাপী সংঘাতের অবসানের পর এটি ছিল তাঁর অন্যতম প্রথম সাক্ষাৎকার। ওই সংঘাতে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে এবং ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালায়।
সাম্প্রতিক সংঘাতের পর পশ্চিমা দেশগুলো যখন ইরানের চলমান পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার সমাধান খুঁজছে, তখনই এমন মন্তব্য করলেন পেজেশকিয়ান। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের চালানো হামলায় বাস্তব ক্ষয়ক্ষতি ওয়াশিংটনের দাবির তুলনায় ছিল অনেকটাই সীমিত।
প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান আল–জাজিরাকে বলেন, ‘ইসরায়েলের যেকোনো নতুন সামরিক পদক্ষেপের মোকাবিলায় আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আবারও ইসরায়েলের ভেতরে গভীরভাবে আঘাত হানার সক্ষমতা রাখে।’
ইরানি প্রেসিডেন্ট বলেন, ১২ দিনের সংঘাতের পর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির ওপর ইরানের কোনো আস্থা নেই।
পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে খুব একটা আশাবাদী নই।’
ইরানের প্রসিডেন্ট আরও বলেন, ‘এসব কারণে আমরা যেকোনো সম্ভাব্য পরিস্থিতি ও প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ইসরায়েল আমাদের ক্ষতি করেছে, আমরাও তাদের ক্ষতি করেছি। তারা আমাদের ওপর শক্তিশালী হামলা চালিয়েছে, আমরাও তাদের গভীরে শক্তভাবে আঘাত হেনেছি। তবে তারা নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি গোপন করছে।’
পেজেশকিয়ান আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের হামলায় শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীদের হত্যার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ছিল, ইরানের নেতৃত্ব কাঠামোকে সম্পূর্ণভাবে “ধ্বংস” করে দেওয়া। কিন্তু তাদের এই চেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।’
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চলবে
আন্তর্জাতিক বিরোধিতা সত্ত্বেও ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা উন্নয়নের এ কার্যক্রম ‘আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামোর মধ্যেই’ পরিচালিত হবে।
ইরানি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকা উচিত নয় এবং আমরা এই বিষয়টি মেনে নিচ্ছি। কারণ, আমরা পারমাণবিক অস্ত্র স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করি। এটি আমাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয়, মানবিক ও কৌশলগত অবস্থান।’
পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমরা কূটনীতিতে বিশ্বাস করি। তাই ভবিষ্যতের যেকোনো আলোচনা উভয় পক্ষের লাভের ভিত্তিতে হতে হবে। আমরা হুমকি বা জোরজবরদস্তি মেনে নেব না।’
এই প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শেষ হয়ে গেছে বলে ট্রাম্প যে দাবি করেছেন, তা একটি ভুল ধারণামাত্র।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র প রস ত ত আম দ র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস