কুষ্টিয়ায় আসামি ধরতে গিয়ে বঁটির আঘাতে ইসরাফিল ইসলাম (৪৮) নামের জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক উপপরিদর্শক (এসআই) আহত হয়েছেন। পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে আহত পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের ছয় রাস্তার মোড়ে পলানবক্রা সড়কের একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলেন কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হারুন-অর রশিদ (৫০) ও তাঁর ছেলে শাহরিয়া আলম ওরফে প্রণয় (২৫)। হারুন কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক পরিচালক। আহত ওই পুলিশ সদস্যকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁর পিঠে তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১২টার পর শহরের ছয় রাস্তার মোড় এলাকায় ডিবি পুলিশের এসআই ইসরাফিলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল বিশেষ অভিযান চালায়। পুলিশ হারুনের তিনতলা বাড়ি ঘিরে রাখে। এরপর বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে হারুনকে ধরতে যায়। এসআই ইসরাফিল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলার আসামি হারুন–অর রশিদ কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তাঁকে ধরার জন্য তাঁর বাড়িতে যাই। তিনি বাড়ির নিচে দোকানে বসে ছিলেন। নাম জিজ্ঞাসা করলে নিজেকে হারুন বলে পরিচয় দেন। এরপর তিনি বাড়ির ভেতরে দৌড়ে পালান। সেখানে গিয়ে তাঁকে ধরার পর সিঁড়িতে শুয়ে পড়েন। এ সময় তাঁর স্ত্রী ও ছেলে আসেন। ছেলে বঁটি দিয়ে তিনবার আমাকে আঘাত করেছেন। আসামি ও ছেলেকে ধরে নিয়ে আসি। হাসপাতালে সেবা নিই। পিঠে তিনটা সেলাই দিয়েছে।’

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, আহত পুলিশ সদস্যের পিঠে ধারালো কিছু দিয়ে আঘাতের দুটি চিহ্ন ছিল। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

কুষ্টিয়া পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, আসামি ধরতে এসআই ইসরাফিলের নেতৃত্বে বিশেষ অভিযান হচ্ছিল। এক আসামিকে ধরতে গিয়ে হামলায় ইসরাফিল আহত হয়েছেন। দুজন আটক আছেন। এ বিষয়ে থানায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

আটক হারুনের শ্যালিকা তারিকুন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভগ্নিপতি তিনতলা ওই বাড়ির দোতলায় থাকেন। ঘটনার সময় তিনি বাড়ির নিচে বসে ছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে চার–পাঁচজন এসে তাঁকে জাপটে ধরেন। তিনি চিৎকার দিয়ে দৌড়ে বাড়িতে ঢোকেন। রান্নাঘরে কাজ করছিল তাঁর ছেলে প্রণয়। চিৎকার শুনে বঁটি হাতে দৌড়ে নিচের দিকে আসে এবং একজনকে বঁটি দিয়ে আঘাত করে। হারুন কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন দাবি করে তারিকুন নাহার বলেন, তাঁর ভগ্নিপতিকে যাঁরা ধরেছেন, তাঁদের কেউ পুলিশের পোশাকে ছিলেন না। তাঁদের সন্ত্রাসী মনে করে ছেলে প্রণয় আঘাত করেছে। হারুন ও প্রণয়কে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁদের ব্যাপক মারধর করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজ বিকেল ৫টার দিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুরাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযানের সময় ডিবির পোশাক পরা ছিল। মারধর কোন সময় করলাম? আসামি তো চালান হয়ে গেছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর ফ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কুষ্টিয়ার সাবেক এসপি তানভীর আরেক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় বিএনপি কর্মী কুদরত আলীকে গুলি করে হত্যা মামলার আসামি কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে কড়া নিরাপত্তায় কারাগার থেকে এস এম তানভীর আরাফাতকে কুষ্টিয়া আদালতে আনা হয়। এরপর দৌলতপুর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা পারভেজের আদালতে হাজিরা করা হয়। এরপর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ১টা ৫১ মিনিটে আদালত থেকে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়। 

গত ২৬ ডিসেম্বর বিএনপির আরেক কর্মী সুজন মালিথাকে গুলি করে হত্যা মামলার প্রধান আসামি এই পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কুষ্টিয়া কারাগারে আছেন। 

আরো পড়ুন:

মেহেরপুরে হত্যা মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড

গজারিয়ায় প্রতিপক্ষের গুলিতে ‘শুটার’ মান্নান নিহত

উপপুলিশ কমিশনার এস এম তানভীর আরাফাত সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার খালিশপুর উপজেলায়। কুষ্টিয়ায় চাকরিকালে বিতর্কিত ছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। কুষ্টিয়া জেলায় আসার পর থেকে নানা কর্মকান্ডে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এমনকি, তখন এ সব কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। বিভাগীয় শাস্তিও পেতে হয়। 

নিহত বিএনপি কর্মী কুদরত আলীর ছেলে বাদী হয়ে ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, কুদরত আলী বিএনপির সক্রিয় সমর্থক ছিলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি দলের সঙ্গে আছেন। এ কারণে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ও কিছু সুবিধাভোগী পুলিশ সদস্য কুদরত আলীকে মিথ্যা মামলায় আটক ও হত্যার পরিকল্পনা করে। এই ষড়যন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ পরিদর্শক নিশিকান্ত সরকার, এসআই রোকনুজ্জামান, এসআই মেহেদী হাসান, এসআই শাহজাহান, এএসআই আনিচুর রহমান, পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আহমেদসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা কুদরত আলীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। ২০২০ সালের ২৩ জুলাই রাত ২টার দিকে ১০-১২ জন পুলিশ কুদরত আলীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। ২৫ জুলাই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার বুকের ডান দিকে ও বাম দিকে দুটি গুলির চিহ্ন, দুই হাতে, পিঠে, মুখে ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। 

বাদী মামলায় দাবি করেন, কুদরত আলীকে গুম করে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করে লাশ হাসপাতালের মর্গে রেখে চলে যায়।

দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ জানান, দৌলতপুর থানার একটি মামলায় এস এম তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তারের আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদন আদালত মঞ্জুর করেছেন। 

২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির কর্মী সুজন মালিথাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে কুষ্টিয়া সাবেক এসপি এস এম তানভীর আরাফাতের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিহত সুজনের রাজনৈতিক বড় ভাই সুজন হোসেন (৪২) বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় মোট ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। 

নিহত সুজন মালিথা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামের ইসমাইল মালিথার ছেলে। 

ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনে এসআইদের প্রতি ডিএমপি কমিশনারের আহ্বান
  • রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি
  • রূপগঞ্জে দাফনের এক বছর পর যুবকের মরদেহ উত্তোলন
  • কুষ্টিয়ার সাবেক এসপি তানভীর আরেক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার