বাকৃবিতে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চান শিক্ষার্থীরা, একমত না শিক্ষকরা
Published: 29th, July 2025 GMT
প্রাণিসম্পদ খাতের সমতা ও কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি মানতে নারাজ অনুষদের শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে অনুষদের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেআর মার্কেট, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হয়ে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে তারা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। উপাচার্য বিদেশ ভ্রমণে থাকায় তার পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড.
এরপর আবার মিছিল নিয়ে ভেটেরিনারি অনুষদের করিডর প্রদক্ষিণ করে পশুপালন অনুষদের সামনে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে একটি স্মারকলিপি অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন কাছে প্রদান করেন তারা।
আরো পড়ুন:
কুবির নজরুল হল থেকে গুলি ও গাঁজা উদ্ধার
৩৫ বছর পর রাকসু তফসিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
স্মারকলিপিতে তারা বলেন, দেশে বর্তমানে ভেটেরিনারি সায়েন্স ও অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রিকে একীভূত করে কম্বাইন্ড ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে একটি ডিগ্রিতে প্রাণি চিকিৎসা ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকায় গ্র্যাজুয়েটরা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সব ধরনের পদের জন্য আবেদন করতে পারছেন। অথচ বাকৃবিতে এখনো দুটি অনুষদ পৃথকভাবে থাকায় অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটরা চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অবহেলিত হচ্ছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন ২০১৯ অনুযায়ী কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের প্র্যাকটিসের স্বীকৃতি থাকলেও অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটদের ক্ষেত্র একেবারেই সংকুচিত করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি বেসরকারি খাতেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু ডিভিএম বা কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি, ডেইরি, নিউট্রিশন ও জেনেটিক্স বিভাগের প্রভাষক পদে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি বাদ দিয়ে ডিভিএম ও কম্বাইন্ডদের উল্লেখ্য করে সার্কুলার দেওয়া হচ্ছে। অথচ উপর্যুক্ত বিষয়গুলো অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রির মূল পাঠ্যসূচি। এমনকি ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইনেও ভেটেরিনারির সংজ্ঞাতে উৎপাদন সংশ্লিষ্ট সব বিষয় প্রবেশ করিয়ে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটদের কর্মপরিধি একদম সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা শিক্ষা নিচ্ছি দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের গুরুত্বপূর্ণ কোর বিষয়ের ওপর। অথচ বাস্তবে আমাদের কোনো স্বীকৃতি নেই। আমাদের সিনিয়ররাও চরম হতাশা ও পেশাগত অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রাণিসম্পদ খাতের টেকসই উন্নয়ন ও জাতীয় পর্যায়ে দক্ষ মানবসম্পদ নিশ্চিত করতে হলে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি ও ভেটেরিনারি সায়েন্সের সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু করা সময়ের দাবি। প্রাণি চিকিৎসা ও উৎপাদন- দুই ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও কর্মসংস্থানের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে কম্বাইন্ড (বিএসসি ইন ভেট সাইন্স এন্ড অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি) ডিগ্রি চালু করতে হবে।
এ বিষয়ে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন বলেন, “আমরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদ ৬৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এটা কম্বাইন্ড করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমরা শিক্ষকরা একমত না। উপাচার্য স্যার বিদেশ থেকে এসে আমাদের ডাকলে আমরা সেভাবে আলোচনা করব।”
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. জিএম মুজিবর রহমান বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির স্মারকলিপিটি হাতে পেয়েছি। এখানে দুই অনুষদের সমঝোতার বিষয় রয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছুটি শেষে দেশে এসে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
সোমবার থেকে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধনের মাধ্যমে তাদের দাবির পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন।
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ম রকল প উপ চ র য চ ত কর আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি
আট মাস আলোচনার পর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তাকে ‘অশ্বডিম্ব’ বলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন।
‘জগাখিচুড়ি মার্কা’ কমিশনের সুপারিশের পর পরিস্থিতি জটিলতার দিকে মোড় নেওয়ার দিকটি নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আট মাস আলোচনার পর একটা অশ্বডিম্বের মতো একটা অবস্থা।’
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংলাপে ‘পলিটিকস ল্যাব: পাবলিক ডায়ালগ’ শীর্ষক সংলাপে এ কথা বলেন সাজ্জাদ জহির। এ সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
তরুণ রাজনীতিকদের মধ্যে মতাদর্শভিত্তিক সংলাপ ও গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে জার্মান ফাউন্ডেশন ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটুং (এফইএস)-এর সহযোগিতায় ‘পলিটিকস ল্যাব’ শিরোনামে চারটি ধারাবাহিক কর্মশালা করেছে সিজিএস। তার সমাপনী অনুষ্ঠান হিসেবে আজকের সংলাপ হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তরের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। নানা প্রশ্নে বিভিন্ন দলের আপত্তির বিষয়গুলো সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে না থাকা নিয়ে যেমন সমালোচনা হচ্ছে, আবার গণভোটের সময় নিয়েও দলগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে।
এই সংকট তৈরির জন্য ঐকমত্য কমিশনকে দায়ী করে সাজ্জাদ জহির বলেন, ‘এটার সমাধানটা কী? এই গণভোটের সমাধানটা কী? জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা কিন্তু নেই। মানে একধরনের হাওয়ার ওপরে সবকিছু চলছে। এখানে ৮৪টা পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০টাতে একমত হয়েছে, বাকিগুলোতে একমত হয়নি। তাহলে কোন বিষয়ে ভোটটা হবে।’
জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করা সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘আমরা দেখলাম জুলাই সনদে স্বাক্ষর হলো। এরপর সর্বশেষ সংস্কার কমিশন তারা আবার আরেকটা খেলা খেলল এখানে। দেখেন কী অবস্থা! তারা বলছে যে নোট অব ডিসেন্ট কিছুই থাকবে না। ভিন্ন মত থাকবে না। আমার তো ভিন্নমত আছে, কেন থাকবে না?’
গণভোট নিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে কোথাও গণভোটের কোনো বিধান নেই। একটা আছে যেটা ১৪২ ধারা। যেটা নির্বাচিত সংসদে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতভেদ তীব্রতর হয়, তাহলে সেই বিষয়ের ওপরে নির্বাচিত সংসদ জনগণের আহ্বান করতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে গণভোট সংবিধানসম্মত নয়।’
সিপিবির সভাপতি বলেন, এসব জটিলতা এড়াতে প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে গত বছরের অক্টোবর মাসে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছিলেন। তবে ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে’ সরকার সেটি শোনেনি।