ইসরায়েলের চরমপন্থী দুজন মন্ত্রীকে নেদারল্যান্ডসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে তাঁরা ইউরোপের এই দেশটিতে ঢুকতে পারবেন না। সহিংসতা উসকে দেওয়া ও জাতিগত নির্মূলকে সমর্থনের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার রাতে ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচকে নেদারল্যান্ডসে আর স্বাগত জানানো হবে না।

নেদারল্যান্ডস আনুষ্ঠানিকভাবে এই দুজন মন্ত্রীকে সে দেশে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি তাঁদের নাম শেনজেন অঞ্চলের অবাঞ্ছিত ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে।

সংসদে এই পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প বলেন, এই দুই মন্ত্রী বারবার ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিয়েছেন। অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন এবং গাজা উপত্যকায় জাতিগত নির্মূলের আহ্বান জানিয়েছেন।

ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এসব কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য ন্যায়সংগত নয়। তাঁদের আচরণ শান্তি প্রতিষ্ঠার যেকোনো ধরনের সম্ভাবনাকে বিপন্ন করে এবং আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিমালার লঙ্ঘন ঘটায়। এ কারণে মন্ত্রিসভা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

নেদারল্যান্ডসের এমন পদক্ষেপে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলের উগ্রবাদী মন্ত্রী বেন-গভির। তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেন, ‘আমাকে যদি পুরো ইউরোপ থেকেও নিষিদ্ধ করা হয়, তবু আমি দেশের জন্য কাজ করে যাব। আমি হামাসকে উৎখাতের দাবি জানাব এবং আমাদের যোদ্ধাদের পাশে থাকব।’

বেন-গভির আরও বলেন, নেদারল্যান্ডস ‘সন্ত্রাসবাদকে’ স্বাগত জানায় ও মেনে নেয়। কিন্তু ইসরায়েলের একজন ইহুদি মন্ত্রী সেখানে অবাঞ্ছিত।

বিবৃতিতে ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প আরও বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে নেদারল্যান্ডস সরকার ইসরায়েলের সামরিক সরঞ্জাম কিংবা দ্বৈত ব্যবহারের পণ্যের ১১টি রপ্তানি লাইসেন্স বাতিল করেছে। তবে আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার উপাদান-সম্পর্কিত দুটি লাইসেন্স অনুমোদন করা হয়েছে।

ভেল্ডক্যাম্প জানান, ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে জরুরি আলোচনার জন্য তলব করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁকে বলব, তিনি (ইসরায়েলের) যেন প্রধানমন্ত্রী (বেনিয়ামিন) নেতানিয়াহুর সরকারকে তাদের নীতি পরিবর্তনের আহ্বান জানান।’

আরও পড়ুনইসরায়েলি মন্ত্রী স্মোট্রিচ ও বেন-গভিরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাজ্য১০ জুন ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল মন ত র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে

জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।

এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ