মেনিনজাইটিস হয় অণুজীবের সংক্রমণে। ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস, অর্থাৎ নিসেরিয়া মেনিনজাইটিস বা স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ও ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে ছড়ায়। ভাইরাল মেনিনজাইটিস ভাইরাসের কারণে হয়। এটা ছড়ায় হাঁচি, কাশি ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে।

পরজীবী বা প্যারাসাইট দিয়েও মেনিনজাইটিস হতে পারে। এই প্যারাসাইট মেনিনজাইটিসের একটি খুব বিরল রূপ, যা মস্তিষ্কে প্রাণঘাতী সংক্রমণ সৃষ্টি করে। ছত্রাকজনিত বা ফাঙ্গাল মেনিনজাইটিসও বিরল। মেনিনজেসে রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয় এটি। ফাঙ্গাল মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে এইডস, ডায়াবেটিস বা ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসংক্রামক মেনিনজাইটিসও হয়। ক্যানসার, সিস্টেমেটিক লুপাস এরিথেমাটোসাস (লুপাস), কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন, মাথায় আঘাত ও মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের কারণে অসংক্রামক মেনিনজাইটিস হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনজিমে কেন হার্ট অ্যাটাক হয়২৮ জুলাই ২০২৫কীভাবে বুঝবেন

প্রাথমিক লক্ষণ থেকে মেনিনজাইটিস শনাক্ত কষ্টকর। শনাক্ত করা গেলেও ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর মৃত্যু হয়। ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগী বেঁচে গেলেও প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এবং ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের এই রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি ও প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

মেনিনজাইটিসের প্রধান লক্ষণগুলো হলো জ্বরের সঙ্গে তীব্র মাথাব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, স্মৃতিভ্রম, বমি, বমি বমি ভাব, আলোর দিকে তাকাতে না পারা, অস্বস্তি, শরীরে বিশেষ দাগ, মূর্ছা যাওয়া, প্রচণ্ড ঘুম পাওয়া, শরীরে ভারসাম্য হারানো ইত্যাদি।

রক্তে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে কি না, তা ব্লাড কালচার করে দেখার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা যায়। সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড সংগ্রহ করে পরীক্ষা (লাম্বার পাংচার) করেও বোঝা যায়। এ ছাড়া মস্তিষ্কের পরিস্থিতি বোঝার জন্য সিটি স্ক্যান করা হয়।

আরও পড়ুনঅফিসে প্রেম করার আগে জেনে রাখুন১২ ঘণ্টা আগেকরণীয়

মেনিনজাইটিস একটি প্রাণঘাতী রোগ। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে মৃত্যু হতে পারে। তাই লক্ষণ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই একজন নিউরোলজিস্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মেনিনজাইটিসের সঠিক কারণ নির্ণয় করে এর চিকিৎসায় কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক আছে। এটা দেওয়া হয় শিরাপথে।

ভাইরাসজনিত মেনিনজাইটিস ব্যাকটিরিয়া মেনিনজাইটিসের মতো প্রাণঘাতী নয়। এ ক্ষেত্রে কেবল সহায়ক থেরাপির প্রয়োজন পড়ে। কারণ, মেনিনজাইটিস সৃষ্টিকারী বেশির ভাগ ভাইরাসের জন্য নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই।

ক্রিপ্টোকক্কাল বা কক্সিডায়োডস মেনিনজাইটিসের মতো ফাঙ্গাল মেনিনজাইটিসের চিকিৎসায় উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিফাঙ্গাল দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হয়।

ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসে চিকিৎসার জন্য ২৪ ঘণ্টার কম সময় পাওয়া যায়। তাই এর প্রতিরোধস্বরূপ মেনিনগোকক্কাস ভ্যাকসিন গ্রুপ এ, সি, ডব্লিউ ১৩৫ ও ওয়াই টিকা গ্রহণ করা উচিত।

ডা.

হারাধন দেবনাথ, অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

আরও পড়ুনমেসির ৬০০ কোটি টাকা দামের বাড়িতে কী কী আছে৩ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনকে ফ্রান্সের স্বীকৃতি কি মধ্যপ্রাচ্যের সমীকরণ বদলে দেবে

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ফ্রান্সের সাহসী সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার ধরন পাল্টে দিতে পারে। যদিও এটি গাজায় চলমান সংঘর্ষ বা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ওপর তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে একাধিক শক্তিধর রাষ্ট্র যে সময় নিজেদের মতামত চাপিয়ে দিতে সামরিক শক্তির আশ্রয় নিচ্ছে, যেমন রাশিয়া ইউক্রেনে কিংবা সম্প্রতি ইরান ও তাদের পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের হামলা; সেই সময় কূটনৈতিক সমাধান এবং ‘যুদ্ধ নয়, শান্তির’ বার্তাই দিতে চাইছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ।

নিজের দ্বিতীয় ও শেষ মেয়াদের আর দুই বছরের কম সময় বাকি থাকা মাখোঁর জন্য এ বিষয় ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির সঙ্গেও জড়িত। ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের সময় কার্যকরভাবে এগিয়ে না এলে ইতিহাসের পাতায় তা কালিমা হয়ে থাকতে পারে।

পারমাণবিক শক্তিধর, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের একটি দেশের নেতা হিসেবে মাখোঁর হাতে বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহে প্রভাব রাখার অনেক উপায় রয়েছে।

জি-৭ গোষ্ঠীর প্রথম দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া মাখোঁর জন্য নিজ দেশে রাজনৈতিক ঝুঁকি থাকাও অস্বাভাবিক নয়। ইউরোপে সবচেয়ে বড় ইহুদি ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস ফ্রান্সে। এমন এক দেশে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি জনমতের ভারসাম্যে হাঁটছেন।

তাঁর ঘোষণায় কিছু মানুষ আনন্দিত হবেন, আবার কেউ ক্ষুব্ধ। গত বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া তাঁর ঘোষণার পর ফ্রান্সের রাজনৈতিক অঙ্গনে দ্বিধাবিভক্ত প্রতিক্রিয়ায় এর প্রতিফলন পাওয়া গেছে।

এমন পদক্ষেপ সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত এবং গাজা যেভাবে ইরানের প্রক্সিতে পরিণত হয়েছে, সেভাবে আরেকটি প্রক্সি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলে তা ইসরায়েলের পাশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নয়, বরং ইসরায়েল ধ্বংসের প্ল্যাটফর্ম হবে।বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী

তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করার পরও এখন মাখোঁ ইঙ্গিত দিচ্ছেন—এ সমর্থনেরও একটা সীমা রয়েছে।

ফ্রান্সের এ অবস্থান বদলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ‘এমন পদক্ষেপ সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত এবং গাজা যেভাবে ইরানের প্রক্সিতে পরিণত হয়েছে, সেভাবে আরেকটি প্রক্সি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলে তা ইসরায়েলের পাশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নয়, বরং ইসরায়েল ধ্বংসের প্ল্যাটফর্ম হবে।’

এটি একটি পদক্ষেপ, কিন্তু তা কোনো জাদুর কাঠি নয়

ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের নিজ নিজ রাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধারণা আজকের বাস্তবতায় আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দূরাশার বলেই মনে হচ্ছে। কেননা, ইসরায়েলের তাণ্ডবে ফিলিস্তিনের গাজা একরকম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং দখলকৃত পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপন ক্রমেই বাড়ছে।

এ অবস্থায় শুধু মাখোঁর বক্তব্যেই বাস্তবতা বদলাবে না। তবুও তাঁর বার্তা স্পষ্ট, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটে ‘দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান’ কূটনৈতিক পথে অর্জন করার আশা কখনো হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না, তা আজ যতই অসম্ভব মনে হোক।

তথাকথিত ‘পি-৫’ রাষ্ট্রগুলো নানা ইস্যু, যেমন ইউক্রেন, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে পরস্পর বিভক্ত। ফলে শুধু ফ্রান্সের অবস্থান বদলে হঠাৎই ফিলিস্তিনিদের জন্য পরিস্থিতি আমূল বদলে যাবে, এমন আশা করাটা ঠিক হবে না। তবে গাণিতিক অর্থে হলেও ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এখন মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আলোচনায় বড় শক্তিগুলোর মধ্যে কিছুটা একঘরে হয়ে পড়তে পারে।

মাখোঁ এক চিঠিতে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে লেখেন, ‘এ সমাধানই একমাত্র পথ, যা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষার জবাব দিতে পারে। এখন যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’

মাখোঁ আরও লেখেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা ক্রমেই দুরূহ হয়ে উঠছে। আমি এটা মেনে নিতে পারি না।’

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ

সম্পর্কিত নিবন্ধ