নারীদের ধ্বংস করা হচ্ছে, রাজনীতি করব না: ফেসবুক লাইভে বৈষম্যবিরোধী নেত্রী
Published: 2nd, August 2025 GMT
আর কখনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সাবেক মুখপাত্র ফাতেমা খানম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এ ঘোষণা দেন। লাইভে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে যাঁদের সঙ্গে জুলাই আন্দোলন করেছি, তাঁরাই আজ নারীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বয়ান (ন্যারেটিভ) তৈরির চেষ্টা করছেন। নারীদের ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন। এগুলো নেওয়া যায় না।’
গতকাল শুক্রবার রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে আসেন ফাতেমা খানম। ১৬ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড তিনি লাইভে ছিলেন। এ সময় ফাতেমা বলেন, ‘চট্টগ্রামের কিছুসংখ্যক মানুষের স্বার্থের কাছে, তাঁদের চাওয়া-পাওয়ার কাছে আমাদের রাজনীতি হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছেন আন্দোলনের সম্মুখসারিতে থাকা অনেকে। এখন বলতে গেলে কেউই নেই। এই সবকিছুর জন্য কিছুসংখ্যক ভাই-ব্রাদার দায়ী। তাঁরা কেন্দ্রের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চট্টগ্রামে একটার পর এক কোরাম বানিয়েছেন। এর দায় আপনাদের নিতে হবে।’
ফাতেমা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের লড়াই করার কথা ছিল ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে। কিন্তু লড়াইটা করতে হচ্ছে নিজেদের মানুষের সঙ্গে।’
ফাতেমা বলেন, ‘আমার দ্বারা আর রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আমি বোঝাতে পারব না যে চট্টগ্রামে মেয়েদের নিয়ে কতটা নোংরামি করা হয়, তাদের ব্যক্তিগতভাবে কতটা আক্রমণ করা হয়। সেগুলো কারা করে? আমাদের মানুষই করে। যে ভাই ব্রাদারদের সঙ্গে আমরা উঠি বসি, যাঁদের সঙ্গে আমরা পথচলার সাহস করি। যে ভাইদের আমরা জীবন বাঁচিয়েছি, সেই ভাইয়েরাই আজ.
ফাতেমা বলেন, ‘চট্টগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন খান তালাত মাহমুদ রাফি, রাসেল আহমেদ, রিজাউর রহমান আরও অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনাদের যে স্ট্যান্ড নেওয়া উচিত ছিল, তা আপনারা নিতে পারেননি।’
ফাতেমা আরও বলেন, ‘প্লিজ আপনারা এসব বন্ধ করেন। আপনারা মেয়েদের নিয়ে যে নোংরামি শুরু করেছেন, এসব থামান। আপনারা যাঁরা বড় ভাইয়েরা আছেন, যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, প্লিজ আপনারা এসব থামান। চট্টগ্রামে এত মেয়ে ছিল, আজ সবাই হারিয়ে গেছে। আজকে আমাকে নিয়েও নোংরামি শুরু হয়ে গেছে। শুধু আমাকে মাইনাস করার জন্য বাজে বয়ান তৈরি করা হচ্ছে।’
এই লাইভের পর আজ শনিবার ৪টা ৫৬ মিনিটে ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে পোস্ট দেন ফাতেমা খানম। এতে তিনি বলেছেন, ‘রাজনীতির অঙ্গনে কখনো শূন্যস্থান দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কেউ একটি পথ থেকে সরে দাঁড়ালে তার স্থানে কেউ না কেউ এসে দাঁড়ায়। আজ আমি ফাতেমা খানম আনুষ্ঠানিকভাবে জানাচ্ছি যে আমি এই রাজনৈতিক পথ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমার পরে কেউ না কেউ এই পথ চলবে। তবে চট্টগ্রামের নারী রাজনীতিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
ফাতেমা আরও লিখেছেন, ‘এই শহরে যদি কোনো নারী রাজনীতির মাঠে আসতে চান, আমি জানি না, তাঁর ভাগ্যে কী অপেক্ষা করে আছে। আমি ভয় পাই, তাঁকে কেবল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়; নিজেদের দলীয় মানুষদের মধ্য থেকেও সহিংসতা, অপমান বা ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হবে। এই অভিজ্ঞতা আমি নিজেও অজস্রবার অনুভব করেছি।’
ফাতেমা উল্লেখ করেন, ‘আমি জানি, রাজনীতি কেবল আবেগ দিয়ে চলে না। কিন্তু একজন নারী যখন সমস্ত বাধা, সামাজিক চাপ, নিরাপত্তাহীনতা ও অপমান উপেক্ষা করে রাজনীতির ময়দানে আসে, তখন যদি তার দলীয় ভাইয়েরাই তাকে হেয় করে, নোংরামি করে, তবে সেই জায়গায় তার জন্য রাজনীতি করার পরিবেশ থাকে না। আর এটাই সবচেয়ে বেদনার।’
ফাতেমা খানম চট্টগ্রাম কলেজের ইতিহাস বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি চট্টগ্রাম নগরের সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। লাইভ ও ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারীদের বিভিন্নভাবে হেয় করা হচ্ছে। আমি কারও নাম উল্লেখ করতে চাই না। কারও বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নেই। কিন্তু প্রত্যেকটা মেয়েকে নিয়ে নোংরামি করা হয়েছে। নোংরামিটা করেছে আমাদের নিজেদের মানুষ। এগুলো নিয়ে আমাদের নেতারা কেউ প্রতিবাদ করেননি।’
ফাতেমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিজ সংগঠনের ভেতরেই নারীদের মাইনাস করার জন্য নোংরামি করা হয়। এটুকুই বলতে চাই।’
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম নগরের (বর্তমানে স্থগিত) সাবেক আহ্বায়ক আরিফ মইনুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। এখন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির কমিটিতে যাঁরা পদ পাবেন না বলে ভাবছেন, তাঁরাই বিভিন্ন অজুহাতে পদত্যাগ করছেন। ফাতেমা খানমের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি হতে পারে। পাশাপাশি ফেসবুকের একটি পেজ থেকে চট্টগ্রামের নারী নেত্রীদের নিয়ে কিছু গুজব ছড়ানো হয়েছে। হয়তো তিনি এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। এ ছাড়া মাস দুয়েক আগে ফাতেমা খানমকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে অবশ্য তা তুলে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা করা হয়েছে। সেদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানান সংগঠনটির সভাপতি রিফাত রশিদ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত র আম দ র র র জন র জন য ফ সব ক প রথম আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজবাড়ীতে পদ্মার এক ইলিশের দাম ১২ হাজার ৬০০ টাকা
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় আজ শনিবার পদ্মা নদী থেকে ধরা ২ কেজি ৪৩০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১২ হাজার ৬০০ টাকায়। স্থানীয় এক মাছ ব্যবসায়ী জেলেদের কাছ থেকে ইলিশটি কিনে ঠাকুরগাঁওয়ে বিক্রি করেন।
স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, শনিবার সকালে গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের চর মজলিশপুর এলাকার জেলে বাচ্চু হালদারসহ কয়েকজন পদ্মা নদীতে মাছ শিকারে যান। তাঁরা দৌলতদিয়ার চর করনেশনা এলাকায় জাল ফেলেন। সকালে তাঁরা জাল গুছিয়ে নৌকায় তুলেই দেখতে পান বড় এক ইলিশ ধরা পড়েছে। এ ছাড়া তাঁদের জালে কয়েক দফায় আরও তিনটি ইলিশ ধরা পড়ে। ইলিশ চারটি তাঁরা দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী শাহজাহান শেখের কাছে বিক্রি করেন।
দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী শাহজাহান শেখ বলেন, এর মধ্যে একটির ওজন ছিল ২ কেজি ৪৩০ গ্রাম এবং অন্য তিন ইলিশের মোট ওজন ছিল প্রায় ৩ কেজি ১০০ গ্রাম। ২ কেজি ৪৩০ গ্রাম ওজনের ইলিশটি ৫ হাজার টাকা কেজি দরে ১২ হাজার ১৫০ টাকা দিয়ে কেনেন। এ ছাড়া ৩ কেজি ১০০ গ্রাম ওজনের অন্য তিনটি ইলিশ ৮ হাজার টাকায় কেনেন।
শাহজাহান শেখ ইলিশগুলো বিক্রির জন্য পরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ ছাড়া তাঁর ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন। পরে ঠাকুরগাঁওয়ের এক চাল ব্যবসায়ী কেনার আগ্রহ দেখালে বড় ইলিশটি ১২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করেন। অন্য তিনটি ইলিশও তাঁর কাছে ২ হাজার ৭০০ টাকা কেজি দরে ৮ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করেন।