দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায় পাকিস্তান-ইর
Published: 4th, August 2025 GMT
বাণিজ্য বাড়াতে চায় পাকিস্তান ও ইরান। রবিবার (৩ আগস্ট) ইসলামাবাদ সফররত ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের মধ্যে আলোচনায় পাকিস্তান ও ইরান তাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সম্মত হয়েছে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্য প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার।
সোমবার (৪ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান দায়িত্ব গ্রহণের পর এবং জুন মাসে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধের পর প্রথম সরকারি সফরে পাকিস্তানে যান।
আরো পড়ুন:
বৃষ্টি-বন্যায় বিপর্যস্ত পাকিস্তান, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯৯
শেষ বলে জিতে সিরিজে সমতা ফেরালো ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ইরানের প্রেসিডেন্টকে লাল গালিচায় স্বাগত জানায় পাকিস্তান এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ব্যক্তিগতভাবে রাওয়ালপিন্ডির নূর খান বিমান ঘাঁটিতে পেজেশকিয়ানকে স্বাগত জানান। এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের বলছে, এটি কেবল একটি প্রোটোকল নয় বরং প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করার পাকিস্তানের অভিপ্রায়ের ইঙ্গিত দেয়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে দুই নেতা একান্ত বৈঠক করেন, এরপর প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনা হয়। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক থেকে শুরু করে বর্তমান আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন পর্যন্ত একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
উভয় নেতা পাকিস্তান-ইরান বাণিজ্য আলোচনার সাম্প্রতিক অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং অদূর ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বর্তমান ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বৈঠক শেষে ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শাহবাজ শরিফ বলেন, দুই দেশের মধ্যে ১২টি নতুন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তিগুলো দ্রুত কার্যকর করে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো জোরদার করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শাহবাজ শরিফ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলার কঠোর নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ইসরায়েল কোনো কারণ ছাড়াই আগ্রাসন চালিয়েছিল, যার নিন্দা পাকিস্তানের জনগণও জানিয়েছে। তিনি ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সাহসিকতা দেখানোর জন্য ইরানের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেন, পাকিস্তান শুধু আমাদের প্রতিবেশী দেশই নয়, একটি ভ্রাতৃপ্রতিম দেশও। ইরানের বিদেশনীতির অন্যতম লক্ষ্য হলো প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা। স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করে বাণিজ্য বৃদ্ধি করা হবে।
পেজেশকিয়ান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় ইরানের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর জন্য পাকিস্তান সরকার এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ইরানি জাতি সর্বদা পাকিস্তানের সংহতি প্রদর্শনের কথা মনে রাখবে।
শাহবাজ ইসরায়েলি বর্বরতার মুখে ফিলিস্তিনিদের প্রতি দৃঢ় ও সোচ্চার সমর্থনের জন্য ইরানি নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুসারে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রতি পাকিস্তানের অটল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং অবরুদ্ধ জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরি মানবিক সহায়তার পাশাপাশি গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানান।
উভয় নেতাই সংকট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান। শাহবাজ ভারতের অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের নিপীড়িত জনগণের প্রতি ইরানের ধারাবাহিক সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
দুই নেতাই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অধিকারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে পাকিস্তান।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র জন য ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস