হোয়াইট হাউসে ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনার সময় নিজেকে তথাকথিত ‘প্রধান শান্তিদূত’ হিসেবে উপস্থাপন করতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুটি বড় দাবি করেছেন। একটি হলো, তিনি যুদ্ধবিরতি নয়, বরং স্থায়ী শান্তিচুক্তি চান। আর আরেকটি হলো, চলতি বছর তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইতিমধ্যে ছয়টি যুদ্ধ থামিয়েছেন।

তবে ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য তাড়াহুড়ায় থাকা ট্রাম্প এতটাই দ্রুত চলছেন যে তিনি কখনো কখনো সত্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন।

ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসন দাবি করেছে, তারা ইসরায়েল ও ইরান, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডা, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তান, সার্বিয়া ও কসোভো এবং মিসর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে সংঘাত মীমাংসায় ভূমিকা রেখেছে।

তবে ট্রাম্প প্রশাসন এ দাবিগুলোকে অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করছে। কিছু ক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিগুলো পুরোপুরি সত্যও নয়। যেমন কঙ্গোর মতো দেশগুলোয় সহিংসতা চলছেই। কাতারের দোহায় শান্তিচুক্তির জন্য গতকাল সোমবারের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তবে রুয়ান্ডা–সমর্থিত বিদ্রোহীরা তাতে সাড়া দেননি।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ইরানে সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এরপর ইরানকে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে চাপ দিয়েছে তারা। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে গত মে মাসের সংঘাত থামাতে ট্রাম্পের কোনো ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছে নয়াদিল্লি।

ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসন দাবি করেছে, তারা ইসরায়েল ও ইরান, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডা, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তান, সার্বিয়া ও কসোভো এবং মিসর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে সংঘাত মীমাংসায় ভূমিকা রেখেছে।

মিসর ও ইথিওপিয়াও তাদের সংঘাতের মূল কারণ সমাধানে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। নীল নদে ইথিওপিয়া নির্মিত একটি বাঁধ নিয়েই মূলত দুই দেশের বিরোধ চলছে। আর সার্বিয়ার দাবি, কসোভোর সঙ্গে যুদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনাই তাদের ছিল না। অথচ ট্রাম্প সার্বিয়া ও কসোভোর মধ্যে সংঘাত ঠেকানোর জন্য নিজের কৃতিত্ব দাবি করে থাকেন।

যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ট্রাম্প নিজেই বিভিন্ন সময়ে বলেছেন যে তিনি এসব সংঘাতের সমাধানে যুদ্ধবিরতি চান। কিন্তু এখন তিনি তাঁর সুর পাল্টাতে চাইছেন এবং ইউক্রেনের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন।

ট্রাম্প যে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি চাইছেন না, সে ঘোষণা এসেছে আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের পর। সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাথমিকভাবে দাবি করেছেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনার আগে ইউক্রেনকে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করতে হবে।

ইউক্রেনে চূড়ান্ত শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এ প্রশ্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ। পুতিন চান রাশিয়া কোন কোন এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখবে, তা নির্ধারণ করতে। আর কিয়েভ চায়, কোনো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হোক।

গতকাল সোমবার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এখন আর যুদ্ধবিরতি চাইছেন না।

১৮ আগস্ট ওভাল অফিসে বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভলোদিমির জেলেনস্কি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ