কেন এবার হোয়াইট হাউসে এত খাতির পেলেন জেলেনস্কি
Published: 19th, August 2025 GMT
ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের পথ নিয়ে আলোচনা করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘প্রায় স্যুট’ পরে এদিন হোয়াইট হাউসে আসেন জেলেনস্কি।
ট্রাম্পকে খুশি করতেই কি নিজের স্বভাবের বিরুদ্ধে গিয়ে জেলেনস্কি এ পোশাক পরেছিলেন? গতকালের বৈঠক এটিসহ আরও কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
উষ্ণ পরিবেশ, কিন্তু অর্জন খুব সামান্যইসাত ইউরোপীয় নেতা, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট, তাঁদের গাড়িবহর, ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েক ডজন কর্মকর্তা এবং শতাধিক সাংবাদিক ওই বৈঠক সামনে রেখে গতকাল হোয়াইট হাউসে আসেন।
বৈঠক শুরুর আগে যে প্রশ্নগুলো সবচেয়ে জোরালো ছিল সেগুলোর অন্যতম ছিল—ট্রাম্প-জেলেনস্কি কি শান্তির পথে একমত হবেন? নাকি গত ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত বৈঠকের মতো এবারও বাগ্বিতণ্ডায় জড়াবেন?
গতকালের বৈঠকে এর কোনটিই ঘটেনি। ফেব্রুয়ারির বৈঠকে জেলেনস্কি তাঁর পোশাক ও আচরণের জন্য বড় তিরস্কারের মুখে পড়েছিলেন। এবার নিজের পোশাক ও আচরণ উভয়ই পরিবর্তন করেছেন তিনি।
জেলেনস্কিসহ হোয়াইট হাউসে যাওয়া ইউরোপীয় নেতারা সতর্কভাবে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁদের নীতিগত মতবিরোধ আড়াল করে রাখার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা তাঁদের বক্তব্য অস্পষ্ট রেখেছেন এবং ট্রাম্পকে প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়েছেন।জেলেনস্কি এবার অনেকটা আনুষ্ঠানিক পোশাক পরে এসেছেন এবং ট্রাম্পের প্রতি বারবার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। এর ফলাফলও পেয়েছেন। ফেব্রুয়ারির বৈঠকে ট্রাম্প তাঁর সঙ্গে যেটা করেছিলেন, এবার হোয়াইট হাউসে তার থেকে অনেক বেশি খাতির করেছেন।
বৈঠকে ট্রাম্প মস্কোর সঙ্গে কিয়েভের সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির পর ইউক্রেনের নিরাপত্তায় সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরপরও বলা যায়, ভূমি বিনিময়, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নিজেদের অবস্থানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের তাৎক্ষণিক কোনো ইঙ্গিত কোনো পক্ষই দেখায়নি।
পরিবর্তে ট্রাম্প এ বৈঠক শেষ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে পরবর্তী বৈঠক আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে; যে বৈঠকে বাকি অনেক বিষয়ের সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে।
প্রেসিডেন্ট আপনাকে অনেক ধন্যবাদ...আপনার মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ। এ হত্যাকাণ্ড থামাতে ও এই যুদ্ধ শেষ করতে আপনার প্রচেষ্টা, ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ধন্যবাদ।ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টপ্রশংসার ঝড়
‘আপনি কি একবারও “ধন্যবাদ” বলেছেন’—ফেব্রুয়ারির বৈঠকে আচমকা এ প্রশ্ন করে জেলেনস্কিকে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। ভ্যান্সের অভিযোগ ছিল, (রাশিয়ার বিরুদ্ধে) যুদ্ধে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের জন্য জেলেনস্কি যথাযথ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেননি।
ধন্যবাদ দেওয়া বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কমতি নিয়ে এবারের বৈঠকে যেন কোনো কথা না হয়, তা গতকাল নিশ্চিত করেছেন জেলেনস্কি। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে নিজের উদ্বোধনী বক্তব্যে জেলেনস্কি আটবার ‘ধন্যবাদ’ বলেছেন, বেশির ভাগই ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে। তা–ও আবার ১০ সেকেন্ডে চারবার ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আপনাকে অনেক ধন্যবাদ...আপনার মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ। এই হত্যাকাণ্ড থামাতে এবং এই যুদ্ধ শেষ করতে আপনার প্রচেষ্টা, ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ধন্যবাদ।’
জেলেনস্কি সোমবার যে পোশাক পরে হোয়াইট হাউসে উপস্থিত হন, সেটিকে এক ইউরোপীয় কূটনীতিক ‘প্রায় স্যুট’ বলে বর্ণনা করেন।জেলেনস্কি তাঁর বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকেও ধন্যবাদ দেন। এর আগে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকে মেলানিয়া ইউক্রেনে অপহৃত শিশুদের বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্টকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ করে জেলেনস্কি বলেন, ‘এ সুযোগ (ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের) ব্যবহার করে আপনার স্ত্রীকেও আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
বিবিসির খবরে বলা হয়, জেলেনস্কি এদিন ট্রাম্পের হাতে তাঁর স্ত্রী ওলেনা জেলেনস্কার লেখা একটি চিঠি তুলে দিয়ে বলেন, ‘এটা আপনার জন্য নয়, আপনার স্ত্রীর জন্য।’
সোমবারের বৈঠকে এমন খোশমেজাজে দেখা গেছে জেলেনস্কি ও ট্রাম্পকেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র কর ছ ন র জন য গতক ল ইউর প আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’