ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ও হল সংসদ নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ করেছেন ৯ পোলিং এজেন্ট। তাদের অধিকাংশই বামপন্থি প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট।

অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) চিফ রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই পোলিং এজেন্টরা।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আপনি অবগত আছেন যে, গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের সময় অসংখ্য অনিয়ম প্রত্যক্ষ করেছেন প্রার্থী, ভোটার ও পোলিং এজেন্টরা। এসব ঘটনার মধ্যে ভোটকেন্দ্রে ইতোমধ্যে পূরণ করা ব্যালট পেপারের উপস্থিতি, জাল ভোটারের উপস্থিতি, পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নির্বাচনী কালি হিসেবে ভোটারদের আঙুলে যে কালি ব্যবহার করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই অমোচনীয় ছিল না। এই কালি সামান্য ঘষাতেই উঠে যাচ্ছিল। এমনকি, নির্বাচনের দিন জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীর মতো অসংখ্য মানুষ অবৈধভাবে ভুয়া প্রেস পাস ব্যবহারসহ নানা উপায়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করে নির্বাচন প্রভাবিত করেছে।

আরো বলা হয়েছে, ভোটার উপস্থিতির যে সংখ্যা নির্বাচন কমিশন উল্লেখ করছে, তা নিয়ে ব্যাপক সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক ভোটার যদি ভোট দিয়ে থাকেন, তাহলে আধাবেলার পর ভোটকেন্দ্র কীভাবে ফাঁকা পড়েছিল, এই প্রশ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীজনের তরফ থেকে পাওয়া যাচ্ছে।

অভিযোগপত্রে পোলিং এজেন্টরা বলেন, ভোট গ্রহণ সমাপ্ত হওয়ার পর, ভোট গণনার সময়ও বহুবিধ অনিয়ম পোলিং এজেন্টরা প্রত্যক্ষ করেছেন। ভোট গণনা শুরু করতে গড়িমসি, নির্দিষ্ট প্যানেলের প্রার্থীদের অবৈধভাবে গণনার স্থলে অবস্থান, গণনার মেশিন ও প্রোগ্রাম সম্পর্কিত ধোঁয়াশা, গণনার সময় পোলিং এজেন্টদের মেশিন থেকে দূরে রাখা আমাদের মনে নানান আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে।

অভিযোগকারী পোলিং এজেন্টরা নির্বাচনে অনিয়ম খতিয়ে দেখার জন্য চারটি দাবি জানান ওই অভিযোগপত্রে। সেগুলো হলো: 

১। নির্বাচনে অনিয়ম খতিয়ে দেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীজনের অংশগ্রহণে কমিটি গঠন।

১.

১। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের প্রতি প্রমাণাদি জমা দেওয়ার আহ্বান।

২। অনতিবিলম্বে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট পুনর্গণনা।

৩। ভোটার উপস্থিতির প্রকৃত তথ্য বের করার নিমিত্তে অংশগ্রহণকারী ভোটারদের তালিকা প্রকাশ।

৪। ভোট গণনার মেশিন ও প্রোগ্রাম কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে, কী প্রক্রিয়ায় নেওয়া হয়েছে এবং কারা সংশ্লিষ্ট ছিল, তা স্পষ্ট করা।

এ সময় মেঘমল্লার বসুর এজেন্ট সামিরা রহমান ও জাহরা নাজিফা, জাবির আহমেদ রুবেলের এজেন্ট মুশফিকুর রহমান, মালিহা তাবাসসুম মিমের এজেন্ট রাজ ধর প্রীতম, শেখ আনিয়া ফাহমিনের এজেন্ট সামিহা হায়দার কথা, ইসরাত জাহান ইমুর এজেন্ট শাহানা মমিন রাইসা ও বৈশাখী সুলতানা রিথী এবং মো. মোস্তাকিমের এজেন্ট ইসরাত জাহান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/সৌরভ/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ বব দ য র উপস থ ত গণন র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ