কাতার ও ভারতের প্রতি ট্রাম্পের অবমাননা নতুন অস্থিরতা তৈরি করছে
Published: 16th, September 2025 GMT
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা হঠাৎ করে জরুরি বৈঠক ও সম্মেলনে মিলিত হচ্ছেন। কারণ, কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে ইসরায়েল দোহায় হামাস নেতাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। কাতার শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রই নয়, দেশটি গাজার শান্তি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুও।
এ হামলার পর উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন। যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান দোহায় এসে কাতারের আমিরকে আলিঙ্গন করেছেন। কয়েক বছর আগে যখন এ দুই দেশের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব ছিল, তখন এমন দৃশ্য ভাবাও সম্ভব ছিল না।
এ ছাড়া সৌদি আরব ইসরায়েলি হামলার পর প্রতিক্রিয়া দেখাতে আরব, ইসলামি ও আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এবং ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে অপরাধ বলে নিন্দা জানিয়েছে।
সম্প্রতি আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে চীনের তিয়ানজিনে একত্র হতে দেখলাম। সেখানে তাঁরা হাসিমুখে কথা বলেছেন। এটি এই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি প্রতিচ্ছবি। এই সমাবেশের পেছনে কারণ হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণের কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি কিছুটা দূরত্বে চলে গেছেন।
আরও পড়ুনট্রাম্পের ধাক্কায় হতভম্ব মোদি যে কঠিন শিক্ষা নিচ্ছেন০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই যেসব বিদেশি নেতা ওয়াশিংটনে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে গিয়েছিলেন, মোদি তাঁদের একজন। তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে গিয়ে ট্রাম্পকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। সেখানে ট্রাম্প মোদিকে ‘মহান বন্ধু’ বলেছিলেন। সেখানে তাঁরা দুই দেশের মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যবসা দ্বিগুণ করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু মাস কয়েক পরই ট্রাম্প ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপান।
ইসরায়েলের দোহা হামলার কয়েক মাস আগে ট্রাম্প কাতারের রাজধানীতে সফর করার সময় বলেছিলেন, ‘আমাদের এই বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক।’ এখন বোঝা যাচ্ছে, ট্রাম্প কাউকে ‘বন্ধু’ বললে তার মানে কিন্তু সম্পর্কের নিশ্চয়তাকে বোঝায় না; বরং এতে সেই ‘বন্ধুর’ বিপদে পড়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে।
আসলে এসব সমাবেশ, নতুন একতার প্রকাশ ও আঞ্চলিক জোটের দৃঢ়তা কিছু ক্ষেত্রে কেবল দেখানোর জন্য। ভারত বা কাতারের ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সরাসরি যাওয়ার সত্যিই আগ্রহ নেই। তাদের অসন্তোষ কিংবা বন্ধুত্ব দেখানো মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানোর জন্য যে তারা বিশ্বাসঘাতক নয় এবং তাদের কাছে অন্য বিকল্পও আছে।
আরও পড়ুনচার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড: ট্রাম্প কি দাঙ্গা–ফ্যাসাদকেই নীতি হিসেবে নিয়েছেন১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫তবে এসব আয়োজনকে সত্যিকারের শক্তিশালী জোট তৈরি করার চেষ্টা হিসেবেও দেখা যেতে পারে। ট্রাম্পের মতো সম্ভবত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও মনে করেন, তাঁরা এমন ‘মূল্য নির্ধারক’ হিসেবে থাকতে পারেন, যাঁদের হাতে বাজারে পণ্যের দাম ঠিক করার ক্ষমতা আছে। ইসরায়েল সম্ভবত মনে করে, তারা যাকে ইচ্ছা তাকে বোমা মেরে শেষ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ভাবে, তারা যখন-তখন নিরাপত্তাচুক্তি ভঙ্গ করতে পারে এবং নিজের শর্ত যে কারও ওপর চাপিয়ে দিতে পারে।
কিন্তু যদি এটা খুব দীর্ঘ সময় ধরে চলে, তখন যুক্তি মেনে চলা দেশগুলো এই অসংগত পরিস্থিতির সমাধান খুঁজতে শুরু করবেই। এটা এ কারণে নয় যে তারা যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইসরায়েলকে শক্তিধর দেখতে অপছন্দ করে। উপসাগরীয় দেশগুলোও এর আগে যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করেছে এবং সেখানকার কোনো কোনো দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। এখন এই দেশগুলোও মনে করছে, ট্রাম্প খামখেয়ালি এবং ইসরায়েল লাগামহীন। এ কারণে দেশগুলো তাদের নিজেদের ক্ষমতা যাচাই করছে এবং কীভাবে এক হওয়া যায়, সে চেষ্টা করছে। যখন কোনো ঘনিষ্ঠ মিত্রকে ধোঁকা দেওয়া হয়, তখন সবাই বুঝতে পারে, কেউ নিরাপদ নয়।
উদাহরণস্বরূপ, আব্রাহাম চুক্তির অংশীদার সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতারে হামলার পর ইসরায়েলের প্রতি আগের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ ভাষায় কথা বলেনি। তারা এর তীব্র সমালোচনা করছে। এই চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ ইতিমধ্যে সন্দেহের মুখে পড়ে গেছে।
ট্রাম্পের বিদেশনীতি এখন যেভাবে চলছে, তাতে তাঁর খামখেয়ালি ধরনটিকে বোঝা জরুরি। ট্রাম্পের এখন খুব একটা বিশ্বাসযোগ্যতা নেই এবং তাঁর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সেই আস্থা ফেরাতে খুব একটা কাজে দেবে না।
নাসরিন মালিক দ্য গার্ডিয়ান–এর কলামিস্ট
দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস