জন্মদিনে ‘বন্ধু’ মোদিকে ট্রাম্পের ফোন, কী কথা হলো
Published: 17th, September 2025 GMT
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল মঙ্গলবার রাতে মোদিকে তাঁর ৭৫তম জন্মদিনের আগে এ শুভেচ্ছা জানান তিনি।
এর আগে একই দিন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা হয়েছে। পরে দুই পক্ষই ওই আলোচনাকে ‘ইতিবাচক’ বলে উল্লেখ করে।
গত মাসে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক শীতল হওয়ার পর এটি দুই নেতার মধ্যে প্রথম ফোনালাপ। রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত তেল কেনার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে দেশটির ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেন ট্রাম্প। এ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে বরফ জমে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো গতকাল মোদি ও ট্রাম্প দুজনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে তাঁদের অবস্থান প্রকাশ করেছেন। মোদি আরও বলেছেন, তিনি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্বকে ‘নতুন উচ্চতায়’ উন্নীত করার জন্য পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলার প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় ৬ সেপ্টেম্বর। সেদিন ট্রাম্প বলেন, দুই দেশের মধ্যে একটি ‘বিশেষ সম্পর্ক’ রয়েছে এবং ‘দুশ্চিন্তার কিছু নেই’। এর কয়েক ঘণ্টা পর মোদি বলেছিলেন, তিনি ট্রাম্পের সদিচ্ছা ও সম্পর্কের ইতিবাচক মূল্যায়নকে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানান এবং তিনিও একই অনুভূতি প্রকাশ করেন।নিজস্ব মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘এইমাত্র আমার বন্ধু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এক অসাধারণ ফোনালাপ করলাম। আমি তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালাম! তিনি দারুণ কাজ করছেন। নরেন্দ্র: রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টায় আপনার সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।’
মোদি নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘আমার ৭৫তম জন্মদিনে ফোনকল ও আন্তরিক শুভেচ্ছার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আপনার মতো আমিও ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বিত ও বৈশ্বিক অংশীদারত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আরও পড়ুনট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সাহস নেই মোদির০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির হওয়া সাম্প্রতিক বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে মোদি বলেন, ‘ইউক্রেন সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে আপনার উদ্যোগগুলোও আমরা সমর্থন করি।’
সম্প্রতি আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে ও ওয়াশিংটনে জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হয়।
গতকাল ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে হওয়া ফোনালাপটি ছিল ১৭ জুনের পর দুই নেতার মধ্যে প্রথম আলাপ। ১৭ জুন মোদির সঙ্গে ফোনালাপে ট্রাম্প বারবার দাবি করছিলেন যে তিনি গত মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি করিয়ে দিয়েছেন। তিনি তাঁর এ তৎপরতার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার সংযোগ রয়েছে বলে দাবি করেন।
তবে পরে মোদি ট্রাম্পের সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। মোদি তখন পাল্টা বলেছিলেন, কোনো স্তরেই কখনো ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়নি। আর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার কোনো প্রস্তাবও আলোচনায় ওঠেনি।
আরও পড়ুনএকসময় ট্রাম্প ছিলেন ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, হঠাৎ সব ওলট–পালট হওয়ার রহস্য কী ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ওই সময় মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে ফোনালাপের তথ্য দিয়েছিলেন।
এরপর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলার প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায় ৬ সেপ্টেম্বর। সেদিন ট্রাম্প বলেন, দুই দেশের মধ্যে একটি ‘বিশেষ সম্পর্ক’ রয়েছে এবং ‘দুশ্চিন্তার কিছু নেই’। এর কয়েক ঘণ্টা পর মোদি বলেন, তিনি ট্রাম্পের সদিচ্ছা ও সম্পর্কের ইতিবাচক মূল্যায়নকে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানান এবং তিনিও একই অনুভূতি প্রকাশ করেন।
কয়েক দিন পর ১০ সেপ্টেম্বর দুই দেশের বাণিজ্য উত্তেজনা কমার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এ আলোচনা ‘কোনো সমস্যা ছাড়াই’ সফল হবে বলে নিশ্চিত তিনি। জবাবে মোদি বলেন, দুই দেশই পরস্পরের ‘সহযোগী’ এবং আরও উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে তারা একসঙ্গে কাজ করবে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের ‘সন্ধির প্রস্তাব’, পুরোপুরি প্রতিদান দেবেন মোদি০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ট্রাম্প তখন আরও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তিনি তাঁর ‘খুবই ভালো বন্ধু’ মোদির সঙ্গে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কথা বলার অপেক্ষায় আছেন। তাঁর এ কথার মধ্য দিয়ে দুই নেতার মধ্যে সম্ভাব্য এক ফোনালাপ হওয়ার আশা তৈরি হয়।
আরও পড়ুনডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির সম্পর্কের বরফ কি গলছে১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প ট ম বর ইউক র ন ১৭ জ ন প রথম গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
আরো ৩ ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দিল হামাস
ইসরায়েলের কাছে আরো তিন জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। গতকাল রবিবার রাতে মরদেহগুলো রেডক্রসের হাতে তুলে দেয় তারা।
আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
আরো পড়ুন:
যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় হামলা, ৭৫ শতাংশ ত্রাণ প্রবেশে বাধা
পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, “রেডক্রসের মাধ্যমে ইসরায়েল তিন মৃত জিম্মির কফিন গ্রহণ করেছে। যেগুলো গাজায় থাকা প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা শিনবেতের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিচয় শনাক্তে মরদেহগুলো শনাক্ত কেন্দ্রে পাঠানো হবে।”
যদি এই জিম্মির পরিচয় শনাক্ত হয় তাহলে যুদ্ধবিরতির পর হামাসের হস্তান্তর করা মরদেহের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছাবে। গত মাসে যখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় তখন তাদের কাছে ২৮ জিম্মির মরদেহ ছিল।
ইসরায়েলের অভিযোগ, হামাস ইচ্ছাকৃতভাবে মরদেহগুলো ফেরত দিতে দেরি করছে। কিন্তু সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বলেছে, মরদেহগুলো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ায় এগুলো উদ্ধার করতে তাদের সময় লাগছে।
হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড জানায়, রবিবার সকালে দক্ষিণ গাজার একটি সুড়ঙ্গ থেকে তারা মরদেহগুলো উদ্ধার করেছে।
পরে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে বলা হয়, “সব জিম্মিদের পরিবারকে সেই অনুযায়ী আপডেট করা হয়েছে এবং এই কঠিন সময়ে আমাদের হৃদয় তাদের সাথে রয়েছে। আমাদের জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং শেষ জিম্মিটি ফিরে না আসা পর্যন্ত থামবে না।”
হোস্টেজ এবং মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম গাজা থেকে বাকি সব মৃত জিম্মিকে উদ্ধারের জন্য নেতানিয়াহুকে জরুরিভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।
হামাস ও ইসরায়েল একে অপরকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।
হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, রবিবার উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা তাদের সৈন্যদের জন্য হুমকিস্বরূপ এক সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে।
গত ১৩ অক্টোবর যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে গাজা থেকে জীবিত সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস।
ঢাকা/ফিরোজ