ডেঙ্গু, করোনা ও নিপাহ ভাইরাসের পর এবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড করা হচ্ছে। ১২ শয্যাবিশিষ্ট এই ওয়ার্ডে সাপে কাটা রোগীদের তাৎক্ষণিক ও সমন্বিত চিকিৎসা প্রদান করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই চালু হবে এই ওয়ার্ড।

এটি হবে দেশের প্রথম কোনো হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড। সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা সম্প্রতি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় এর মৃত্যুহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্নেক বাইট ক্লিনিক করা হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সম্প্রসারিত অংশে সাপে কাটা রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু করা হচ্ছে। এই ওয়ার্ডের ‘ফোকাল পারসন’ হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু শাহীন মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। তিনি স্নেক বাইটের (রাসেলস ভাইপার) ওপরে পিএইচডি করছেন। তাঁর গবেষণা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আবু শাহীন মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানান, এরই মধ্যে এই ওয়ার্ডের জন্য আট নার্স বাছাই করা হয়েছে। ওয়ার্ডের চিকিৎসক ও নার্সদের স্নেক বাইটের ন্যাশনাল গাইড অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালটিতে সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৬ জন। এর মধ্যে বিষধর সাপে কাটা রোগী ছিলেন ২০৬ জন এবং অন্যান্য সাপে কাটা রোগী ছিলেন ৮০০ জন। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন ৩১ জন। রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে মারা গেছেন ১০ জন। কেউটে সাপের কামড়ে মারা গেছেন ১৩ জন। গোখরা সাপের কামড়ে মারা গেছেন ৫ জন। গোখরা বা অন্যান্য সাপের কামড়ে মারা গেছেন তিনজন।

মাহবুবুর রহমান জানান, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত হাসপাতালটিতে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মৃত্যুর হার ছিল ২৭ শতাংশ। চিকিৎসা দেওয়ার কারণে এ হার কমেছে। তিনি জানান, সাপে কাটা রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হওয়ার পর থেকে সাপে কাটা সব রোগী সেই ওয়ার্ডে ভর্তি হবেন। সেখানে তাঁদের চিকিৎসা ইন্টিগ্রেটেড (সমন্বিত) হবে, যাতে মৃত্যুর হার কমানো যায়, এই উদ্দেশ্যেই এটা করা হচ্ছে। ওই ওয়ার্ডে সার্বক্ষণিক নার্স ও চিকিৎসক থাকবেন। পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনমের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যার প্রতি ডোজের দাম পড়বে প্রায় ১৩ হাজার টাকা। এক ডোজের জন্য ১০ ভায়াল লাগে। কোনো কোনো রোগীর একাধিক ডোজের প্রয়োজন পড়ে। হাসপাতাল থেকে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ওষুধ পাবেন রোগীরা।

হাসপাতালে আসা রোগীদের তথ্য থেকে জানা যায়, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিতে আসা সাপে কাটা রোগীদের মধ্যে কেউটের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। এই সাপ রাতের বেলায় বিছানায় উঠে কামড়ায়। এ জন্য চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিচ্ছেন, রাতের বেলায় অবশ্যই মশারি টানিয়ে চৌকিতে ঘুমাতে। রাতের বেলায় বাইরে বের হলে টর্চলাইট জ্বেলে ও হাতে লাঠি নিয়ে শব্দ করতে করতে এগোতে। মাঠে কাজ করার সময় গামবুট পরে কাজ করতে। কোথাও কাজে হাত দেওয়ার সময় একটু দেখে নিতে, কিছু আছে কি না।

এ ছাড়া মাছ ধরার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা, কোনো গর্তে হাত না দেওয়া ও বাড়ির পাশে জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শও দিয়েছেন মাহবুবুর রহমান। এই চিকিৎসক জানান, তিনি প্রায় ২৫০ জন সাপে কাটা রোগী দেখেছেন, যাঁদের ৬৫ শতাংশ ধানখেতে রাসেলস ভাইপারের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। নদীর ধারে ও মাঠে এই সাপের উপদ্রব বেশি। ২০১৩ সালের আগে রাজশাহীতে রাসেলস ভাইপারের কোনো উৎপাত দেখা যেত না। তার পর থেকে এই সাপের উপদ্রব শুরু হয়েছে। একটি সাপ অনেকগুলো বাচ্চা দেয়। এ জন্য দ্রুত বংশবিস্তার হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাপে কাটা চার রোগী পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে আবদুল গাফফারের (৫০) বাড়ি পাবনা সদরে। শসাখেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন, তখন রাসেলস ভাইপার তাঁর হাতে কামড় দিয়েছে। গত সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় তাঁকে কামড় দেয়। তিনি একাই সাপ মেরে একটা বয়ামে করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। প্রথমে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে তাঁকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়েছে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

কথা হয় সাপে কাটা রোগী তাজউদ্দিন স্বপনের (৫০) সঙ্গে। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার বসন্তপুর গ্রামে। রাতে ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। বিছানাতেই সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে তাঁর হাতে কামড় দিয়েছে। ভোর সাড়ে পাঁচটায় হাসপাতালে এসেছেন। তাজউদ্দিন বলেন, রাতে মশারির ভেতরেই ঘুমিয়েছিলেন। হয়তো আগে থেকেই সাপ বালিশের নিচে ঢুকে ছিল। তাঁর অবস্থা অনেকটা শোচনীয়।
বিল্লাল (২২) পাবনা সদর থেকে এসেছেন। তাঁকেও রাতে ঘুমের মধ্যে সাপে কামড় দিয়েছে। তিনি মশারি ছাড়াই ঘুমিয়েছিলেন। গত রোববার দিবাগত রাতে কামড় দিয়েছে। সকাল ছয়টার দিকে পাবনা সদর হাসপাতালে গিয়েছিলেন। ওখানে এক ডোজ ওষুধ দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র গ দ র জন য চ ক ৎসক র সময

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ