চট্টগ্রাম চেম্বারের আসন্ন পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে অতীতের ফ্যাসিবাদী পরিবারতন্ত্র পুনর্বহালের অপচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন চেম্বারের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এস এম নুরুল হক। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের আব্দুল খালেক মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চট্টগ্রামের সচেতন ব্যবসায়ী সমাজ ও ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (আইবিডব্লিউএফ)।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ব্যবসায়ী সমাজের আহ্বায়ক এস এম নুরুল হক, আইবিডব্লিউএফের সেক্রেটারি শাহজাহান মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ নন প্যাকার্স ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি মাহবুব রানা প্রমুখ। এতে বক্তারা বলেন, টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ সদস্যদের পুনর্বহাল করে; অতীতে চেম্বারকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সংগঠন হিসেবে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে যোগসাজশে একটি চক্র আবারও সংগঠনটি দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এস এম নুরুল হক বলেন, প্রাথমিক ভোটার তালিকা থেকে টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ সদস্যদের বাদ পড়ার পরও বানোয়াট কাগজপত্র দিয়ে আপিল করে আপিল বোর্ডকে অনেকটা বাধ্য করেছেন তাদের ভোটার করতে। আর এ কাজে সক্রিয় রয়েছেন চেম্বারের একজন সাবেক সভাপতি। তিনি চেষ্টা করছেন যাতে এসব সদস্যকে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

উল্লেখ্য, আগামী ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে চেম্বারের নির্বাচন। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিতরণ। গতকাল বুধবার পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আগ্রহী ১৬ জন প্রার্থী। এ বছর চেম্বারের মোট ভোটার ৬ হাজার ৭৮০। এর মধ্যে সাধারণ সদস্য ৪ হাজার ১ জন, সহযোগী সদস্য ২ হাজার ৭৬৪ জন, ট্রেড গ্রুপ প্রতিনিধি ১০ এবং টাউন অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধি ৫ জন।

মূলত টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ প্রতিনিধি নিয়ে সাবেক সভাপতি এম এ লতিফের সময় থেকে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ চেম্বারে ২০০৮-০৯ মেয়াদে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই চেম্বারে তাঁর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়। চেম্বারে সর্বশেষ সরাসরি ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালে। ওই নির্বাচনে এম এ লতিফ সমর্থিত প্যানেল বিজয়ী হয়। এরপর এক দশকের বেশি সময় বিনা ভোটে চট্টগ্রাম চেম্বার লতিফের পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনদের দখলে ছিল।

নিয়ম অনুযায়ী, চট্টগ্রাম চেম্বারের ২৪ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের ১২ জন পরিচালক সাধারণ সদস্যদের ভোটে, ৬ জন সহযোগী সদস্যদের ভোটে, ৩ জন টাউন অ্যাসোসিয়েশন থেকে ও ৩ জন পরিচালক ট্রেড গ্রুপ থেকে নির্বাচিত হন। ব্যবসায়ীদের এক পক্ষের দাবি টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ থেকে বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এম এ লতিফ ও তাঁর ছেলেও ট্রেড গ্রুপ থেকেই চেম্বারের নেতৃত্বে এসেছিলেন।

গত বছরের আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। তার আগে চেম্বারের বেশির ভাগ পরিচালক পদত্যাগ করেন। শুরুতে চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসক করা হয় তৎকালীন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশাকে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত বছর প্রশাসক নিয়োগের পর টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপকে বাদ দেওয়ার জন্য সে বছরের ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন এস এম নুরুল হক। চলতি বছরের ২০ আগস্ট তাঁদের ভোট প্রদানে সুযোগ না দিতে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগ। এরপর চারটি টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও চারটি ট্রেড গ্রুপকে অকার্যকর ঘোষণা করা হয়। সেগুলো হলো পটিয়া, বোয়ালখালী, হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়া অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকা শিল্প মালিক গ্রুপ, চট্টগ্রাম টায়ার টিউব ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স গ্রুপ, চিটাগাং ডাইজ অ্যান্ড কেমিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার গ্রুপ ও চিটাগাং মিল্ক ফুড ইমপোর্টার্স গ্রুপ।

এই দুই শ্রেণিকে বাদ দেওয়ার পর ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ অভিযোগ করে, যে আটটি সংগঠনকে অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে, সেটি কিসের ভিত্তিতে, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। তাই এই দুই গ্রুপকে বাদ দেওয়া ঠিক হয়নি। এ কারণে গ্রুপ দুটিকে অন্তর্ভুক্ত করার আপিল করা হয়।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক ও চেম্বারের নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান মনোয়ারা বেগম বলেন, গ্রুপ দুটি আপিল বোর্ডে আবেদন করেছে, যাচাই-বাছাই শেষে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় য গ কর বছর র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে বাসদ কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান, আটক ২২

ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলন কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সিলেট কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ২২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে নগরের আম্বরখানাস্থ বাসদ কার্যালয় থেকে তাদের আটক করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। 

বাসদ নেতারা অভিযোগ করেছেন, সকালে নিয়মিত পাঠচক্র চলাকালে হঠাৎ পুলিশ কার্যালয় ঘেরাও করে নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে যায়। 

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অর্থ সহায়তা দিল শিবির

বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে এগিয়ে নিতে সিকৃবি উপাচার্যের অঙ্গীকার

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আজ (শনিবার) ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকরা নগরে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছিল। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে অভিযোগের সত্যতা মিললে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে। গ্রেপ্তারদের নাম পরবর্তীতে জানানো হবে।’’ 

বাসদের সিলেট জেলা সভাপতি আবু জাফর বলেন, ‘‘ব্যাটারিচালিত রিকশার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ (শনিবার) চৌহাট্টা থেকে আমাদের পূর্বঘোষিত ‘ভুখা মিছিল’ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাতে পুলিশ নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর আমরা কর্মসূচি স্থগিত করি। তবে সব শ্রমিককে তা জানানো সম্ভব হয়নি। সকালে শহীদ মিনার এলাকায় কয়েকজন শ্রমিক জড়ো হন। কিন্তু কার্যালয়ে শুধু পাঠচক্র চলছিল। সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ২২ নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে গেছে।’’

এর আগে একই ইস্যুতে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) মধ্যরাতে নগরের আখালিয়া কালীবাড়ী এলাকার বাসা থেকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সিলেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সুমনকেও আটক করে পুলিশ।

গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকরা। ওই সময় আনোয়ার হোসেন সুমনসহ কয়েকজন বামঘরানার রাজনীতিকও আন্দোলনে অংশ নেন। আন্দোলনকারীরা ব্যাটারি রিকশা চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরে তা মেনে নিতে রবিবার (২ নভেম্বর) পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। সেই আলটিমেটাম শেষ হওয়ার একদিন আগে সিপিবির সুমন ও বাসদের ২২ নেতাকর্মীকে আটক করা হলো।

শনিবার (১ নভেম্বর) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী বলেন, ‘‘ব্যাটারি রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ইন্ধন দিচ্ছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে সংঘাতের আশঙ্কায় রবিবারের কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।’’ 

গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সিলেট মহানগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে অভিযান শুরু করে পুলিশ। পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরীর উদ্যোগে পরিচালিত এই অভিযানে শতাধিক রিকশা জব্দ ও একাধিক চার্জিং পয়েন্টের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর থেকে নগরে ব্যাটারি রিকশা চলাচল বন্ধ রয়েছে। 
 

ঢাকা/নুর/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিলাসবহুল প্রমোদতরিতে খুন, এরপর...
  • ফাইনালে দ. আফ্রিকাকে ২৯৯ রানের টার্গেট দিল ভারত
  • শাহরুখকে ‘কুৎসিত’ বলেছিলেন হেমা মালিনী, এরপর...
  • প্রথম দেখায় প্রেম নাকি ঝগড়া? আসছে ইয়াশ–তটিনীর ‘তোমার জন্য মন’
  • জেমিনিতে যুক্ত হলো গুগল স্লাইডস তৈরির সুবিধা, করবেন যেভাবে
  • নড়াইলে ৩ দিন ধরে স্কুলছাত্রী নিখোঁজ
  • রোহিতের পর কোহলির রেকর্ডও কাড়লেন বাবর, পাকিস্তানের সিরিজ জয়
  • নাজমুলই থাকছেন টেস্ট অধিনায়ক
  • বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার
  • সিলেটে বাসদ কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান, আটক ২২