নারী বিশ্বকাপের আসরে আজ শুক্রবার গুয়াহাটিতে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও নিউ জিল্যান্ড। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ভিন্ন দুই মেজাজে আছে দল দুটো। বাংলাদেশ ক্রমে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে, আর নিউজিল্যান্ড যেন খুঁজে ফিরছে নিজের ছন্দ।

দুই ম্যাচ শেষে এখনো জয়ের দেখা পায়নি নিউ জিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হার তাদের চাপে রেখেছে। অধিনায়ক সোফি ডিভাইনের দুর্দান্ত দুই ইনিংসও বাঁচাতে পারেনি দলকে। বিশ্বকাপের আগে টানা ছয় মাস কোনো ওয়ানডে না খেলায় দলের মধ্যে দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট আড়ষ্টতা। ভারত ও ভারত ‘এ’-এর বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও তারা হার মানে। ব্যাটিংয়ে ডিভাইন একাই দলের মোট রান এর প্রায় ৪২ শতাংশ করেছেন। বাকি ব্যাটাররা পুরোপুরি ছন্দহীন। বোলিংয়েও ধার নেই, সঙ্গে ফিল্ডিংয়ে সাতটি মিসফিল্ড। সব মিলিয়ে একরাশ অগোছালো চেহারা।

অন্যদিকে বাংলাদেশ এখন মনোবল ও আত্মবিশ্বাসে উজ্জ্বল। পাকিস্তানকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও লড়েছে দারুণভাবে। ব্যাটিং এখনো পুরোপুরি জ্বলে না উঠলেও বোলাররা নিয়মিতই দারুণ কাজ করছেন। নতুন বলে মারুফা আক্তারের ধারাবাহিক আক্রমণ প্রতিপক্ষের ওপেনারদের চাপে রাখছে। আর মাঝের ওভারগুলোয় স্পিন ত্রয়ী নাহিদা আক্তার, ফাহিমা খাতুন ও রাবেয়া খান তৈরি করছেন ঘূর্ণির ফাঁদ।

বিশেষ করে এই ম্যাচে নাহিদার বাঁহাতি স্পিন বড় ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন–আপে একমাত্র বাঁহাতি ব্যাটার ব্রুক হলিডে ছাড়া সবাই ডানহাতি। অর্থাৎ, ঘূর্ণিতে পরাভূত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি।

বাংলাদেশ এখনো নিউ জিল্যান্ডকে ওয়ানডেতে হারাতে পারেনি। ২০২২ সালে হওয়া দুই ম্যাচেই হেরেছিল বড় ব্যবধানে। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। গুয়াহাটির উইকেটে ইতিমধ্যে স্পিনাররা নিয়েছেন মোট ৭৫ শতাংশ উইকেট (৩ ম্যাচে ৪৪ উইকেটের মধ্যে ৩৩টি)। তাই এই পিচ স্পিনারদের স্বর্গ হতে পারে। তাছাড়া এই মাঠে বিশ্বকাপে ইতিমধ্যেই একটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ। যা বাড়তি সুবিধা দেবে নিগার সুলতানাদের।

দলীয় পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম। ইংল্যান্ড ম্যাচে ক্র্যাম্পে মাঠ ছাড়লেও পেসার মারুফা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ এবং খেলতে প্রস্তুত, নিশ্চিত করেছেন নাহিদা আক্তার।

অন্যদিকে, নিউ জিল্যান্ডের ডানহাতি পেসার রোজমেরি মেয়ার যদি ফিট থাকেন, তবে তিনি ফিরতে পারেন দলে জেস কেরের পরিবর্তে।

আজকের ম্যাচে বৃষ্টির আশঙ্কা থাকলেও গুয়াহাটির দর্শকরা আশা করছে, দেখা যাবে এক টানটান লড়াই। যেখানে বাংলাদেশ চোখ রাখবে দ্বিতীয় জয়ের দিকে। আর নিউ জিল্যান্ড লড়বে নিজেদের বিশ্বকাপ আশা বাঁচিয়ে রাখতে।

বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ:
রুবিয়া হায়দার ঝিলিক, শারমিন আক্তার, নিগার সুলতানা (অধিনায়ক ও উইকেটকিপার), সোবহানা মোস্তারি, রিতু মনি, শর্ণা আক্তার, ফাহিমা খাতুন, নাহিদা আক্তার, রাবেয়া খান, মারুফা আক্তার ও সানজিদা আক্তার মেঘলা।

নিউ জিল্যান্ডের সম্ভাব্য একাদশ:
সুজি বেটস, জর্জিয়া প্লিমার, আমেলিয়া কের, সোফি ডিভাইন (অধিনায়ক), ব্রুক হলিডে, ম্যাডি গ্রিন, ইসাবেলা গেজ (উইকেটকিপার), জেস কের / রোজমেরি মেয়ার, লিয়া তাহুহু, ইডেন কারসন ও ব্রি ইলিং।
 

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ বক প উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

কেউ কি কখনো নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, জেনে নিন খুঁটিনাটি

চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বেলা তিনটার দিকে নরওয়ের রাজধানী অসলোর নোবেল ইনস্টিটিউট থেকে এবারের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়।

৫৮ বছর বয়সী মাচাদো শুধু ভেনেজুয়েলার একজন রাজনীতিক নন, তিনি একজন ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রকৌশলীও। ভেনেজুয়েলায় ২০২৪ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিকোলা মাদুরোর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে মাচাদো নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।

নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে নিরলস প্রচেষ্টা এবং ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণভাবে স্বৈরশাসনের উৎখাত করে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রামের জন্য মাচাদোকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

নোবেল শান্তি পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রাউন, যা প্রায় ১২ লাখ ডলারের সমান। আগামী ১০ ডিসেম্বর অসলোতে বিজয়ীর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

১৯০১ সাল থেকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। আলফ্রেড নোবেলের ‘কাজ ও ইচ্ছার’ ওপর ভিত্তি করে সারা বিশ্ব থেকে খুঁজে যোগ্য ব্যক্তিকেই মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তবে অনেক সময় পুরস্কার বিজয়ী নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এই পুরস্কারের কিছু খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া যাক।

পুরস্কার প্রত্যাখ্যান

নোবেল শান্তি পুরস্কার শুধু একবারই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনামের রাজনীতিবিদ লে ডুক থো এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসানের প্রচেষ্টার জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।

থো এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ হিসেবে তিনি ভিয়েতনামে চলমান সংঘাতের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, কিসিঞ্জার ও যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। কিসিঞ্জার অবশ্য পুরস্কারটি গ্রহণ করেছিলেন।

১৯৫০-এর দশকের শেষভাগ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলেছিল। ১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল সায়গনের পতনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শেষ হয়। ভিয়েতনাম যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ নিহত হন।

কেউ কি একাধিকবার পুরস্কার জিতেছেন

এই প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’ দুটিই হতে পারে। কারণ, কোনো ব্যক্তি দুইবার নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতেননি।

তবে দুটি সংস্থাকে একাধিকবার এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এসব সংস্থা হচ্ছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (১৯১৭, ১৯৪৪ ও ১৯৬৩ সাল) এবং জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (১৯৫৪ ও ১৯৮১ সাল)।

সব মিলিয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা সাতবার নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছে।

কখনো বিজয়ী ছিলেন না, এমন কি হয়েছিল

১৯০১ সালের শুরুর পর নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রতিবছর দেওয়া হয়নি।

১৯ বার এই পুরস্কার দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে ১৯১৪–১৯১৬, ১৯১৮, ১৯২৩, ১৯২৪, ১৯২৮, ১৯৩২, ১৯৩৯–১৯৪৩, ১৯৪৮, ১৯৫৫–১৯৫৬, ১৯৬৬–১৯৬৭ ও ১৯৭২ সালে। সাধারণত যুদ্ধ অথবা উপযুক্ত প্রার্থীর অভাবে এমনটা করা হয়েছে।

নোবেল ফাউন্ডেশনের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রার্থীর কাজ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে না হলে পুরস্কারটি স্থগিত রাখা যেতে পারে। এমন হলে পুরস্কারের অর্থ পরবর্তী বছরের জন্য জমা রাখা হবে। এরপরও যদি পুরস্কারটি দেওয়া সম্ভব না হয়, তবে সেই অর্থ ফাউন্ডেশনের সংরক্ষিত তহবিলে স্থানান্তর করা হবে।

উল্লেখযোগ্য একটি উদাহরণ হলো ১৯৪৮ সাল। ওই বছর মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করা হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অহিংস নেতৃত্বের জন্য গান্ধীকে বেশ কয়েকবার—১৯৩৭, ১৯৩৮, ১৯৩৯, ১৯৪৭ এবং আবার ১৯৪৮ সালে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে নোবেল কমিটি ‘কোনো উপযুক্ত জীবিত প্রার্থী নেই’ উল্লেখ করে পুরস্কারটি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কমিটির ওই সিদ্ধান্তকে ব্যাপকভাবে গান্ধীর প্রতি পরোক্ষ শ্রদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

নোবেল কমিটিতে কারা

নরওয়ের নোবেল কমিটির পাঁচজন সদস্যই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহু আকাঙ্ক্ষিত গৌরবের মুহূর্তের; অর্থাৎ এই বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হওয়ার চাবিকাঠি ধরে রেখেছেন।

নোবেল কমিটি ১৮৯৭ সালে নরওয়ের পার্লামেন্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কমিটির দায়িত্ব হলো নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম নির্বাচন করা।

কমিটির সদস্যরা ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হন। মেয়াদ শেষে আবারও নির্বাচিত হতে পারেন।

নোবেল শান্তি পুরস্কারের নিয়ম অনুযায়ী, কমিটির সদস্যরা নরওয়ের সংসদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শক্তির প্রতিনিধিত্ব করেন। তবে তাঁরা সংসদের বর্তমান সদস্য হতে পারবেন না। নির্বাচিত হওয়ার পর কমিটি তার নিজস্ব চেয়ারম্যান ও ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচন করে। নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউটের পরিচালক কমিটির সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এই বছরের নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান হলেন ইয়োর্গেন ভাটনে ফ্রিডনেস (৪১)। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আসলে তোয়ে (৫১), অ্যান এঙ্গার (৭৫), ক্রিস্টিন ক্লেমেট (৬৮) ও গ্রাই লারসেন (৪৯)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ