আল্লাহর কাছে নবীজির (সা.) দোয়া কবুলের কয়েকটি ঘটনা
Published: 16th, November 2025 GMT
দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। আর যখন দোয়া করেন মহানবী নিজে (সা.), তখন তা হয়ে ওঠে অলৌকিকতার প্রতীক। আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর দোয়া কবুল করেন তৎক্ষণাৎ, যা নবুয়তের সত্যতার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। আলমেগণ বলেন, ‘নবীর দোয়া কবুল হওয়া তাঁর নবুয়তের সুস্পষ্ট চিহ্ন। আল্লাহ মিথ্যাবাদীর দোয়া কবুল করেন না।’
নবীজির দোয়া কবুলের ঘটনা অসংখ্য। এখানে কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে দেখব, কীভাবে আল্লাহ তাঁর দোয়া শুনেছেন।
বৃষ্টির জন্য দোয়া: মেঘের পাহাড় উঠে আসামদিনায় দীর্ঘ খরা। সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, শিশুরা ক্ষুধায় কাঁদছে। জুমার খুতবায় এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে, পরিবার ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’
আনাস ইবনে মালিক (রা.
পরের জুমায় সেই বেদুঈন বা অন্য কেউ বললেন, ‘বাড়ি ধসে পড়ছে, সম্পদ ডুবে যাচ্ছে। দোয়া করুন।’ নবীজি হাত তুলে বললেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা’ (হে আল্লাহ, আমাদের চারপাশে, আমাদের ওপর নয়)।
আনাস বলেন, যে দিকে ইশারা করতেন, সে দিকের মেঘ সরে যেত। মদিনা যেন একটা গর্তের মতো হয়ে গেল, চারপাশে বৃষ্টি, মাঝে শুকনো। ওয়াদি কানাত এক মাস বইল। বাইরে থেকে যারা আসত, সবাই প্রচুর বৃষ্টির কথা বলত। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,০১৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৯৭)
আরও পড়ুনঅলসতা দূর করার জন্য নবীজির শেখানো দোয়া২১ অক্টোবর ২০২৫আবু হুরাইরার মায়ের হেদায়াতআবু হুরাইরা (রা.)-এর মা মুশরিক ছিলেন। তিনি তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন, কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করতেন এবং নবীজির বিরুদ্ধে কটু কথা বলতেন। একদিন আবু হুরাইরা কাঁদতে কাঁদতে নবীজির কাছে গেলেন।
বললেন, ‘আমি মাকে দাওয়াত দিই, তিনি আপনার বিরুদ্ধে খারাপ বলেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, তিনি হেদায়াত পান।’ নবীজি বললেন, ‘আল্লাহুম্মাহদি উম্মা আবি হুরাইরাহ’ (হে আল্লাহ, আবু হুরাইরার মাকে হেদায়াত দান করো)।
আবু হুরাইরা আনন্দে বাড়ি ফিরলেন। দরজায় পৌঁছে শুনলেন, দরজা বন্ধ। মা বললেন, ‘অপেক্ষা করো।’ তিনি পানির শব্দ শুনলেন। তারপর মা গোসল করে দরজা খুলে বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।’
আবু হুরাইরা আনন্দে কাঁদতে কাঁদতে নবীজির কাছে গেলেন। বললেন, ‘সুসংবাদ, আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করেছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৯১)।
আরেকবার আবু হুরাইরা বললেন, ‘আপনার অনেক হাদিস শুনি, ভুলে যাই।’ নবীজি বললেন, ‘চাদর বিছাও।’ তিনি হাতে কিছু নিয়ে চাদরে ঢেলে দিয়ে বললেন, ‘জড়াও।’ তারপর থেকে কিছু ভোলেননি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৯)
ইবনে আব্বাসের জন্য ফিকহ ও তাফসিরইবনে আব্বাস (রা.) নবীজির ওজুর পানি প্রস্তুত করে দিলেন। নবীজি বললেন, ‘আল্লাহুম্মা ফাককিহহু ফিদ দিন’ (হে আল্লাহ, তাকে দ্বীনের ফকিহ বানান)। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৪৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৪৭৭)
আরেক বর্ণনায় আছে, তিনি কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘আল্লাহুম্মা ফাককিহহু ফিদ দিন ওয়া আল্লিমহুত তা’ওয়িল’ (হে আল্লাহ, তাকে দ্বীনের ফকিহ বানান এবং তাকে কোরআনের তাফসির শেখান)। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ২,৩৯৩)।
ইবনে আব্বাস হলেন উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ মুফাসসির।
আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সাইব ইবনে ইয়াজিদের দীর্ঘায়ু ও স্বাস্থ্যসাইবকে নবীজির কাছে নিয়ে গেলেন তাঁর খালা। বললেন, ‘আমার ভাগ্নে অসুস্থ।’ নবীজি মাথায় হাত বুলিয়ে বরকতের দোয়া করলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৭৩৬)।
সাইব ৯৪ বছর বাঁচলেন, সুস্থ, সবল। বলতেন, ‘আমার কান-চোখের শক্তি নবীজির দোয়ার ফল।’
আবু কাতাদার যৌবন ও স্বাস্থ্যজু-কারদ যুদ্ধে আবু কাতাদা (রা.) মুসআদাকে হত্যা করেন। নবীজি বললেন, ‘আল্লাহ তোমার চুল-চামড়ায় বরকত দিন। তোমার চেহারা সফল হোক।’ তীরের আঘাতে জখম হলে থুতু লাগিয়ে দিলেন—কখনো ব্যথা হয়নি।
৭০ বছরে ১৫ বছরের যুবকের মতো দেখাতেন। (দালাইলুন নুবুওয়াহ লিল বাইহাকি, ৬/১০৮, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৯৬)
দাওস গোত্রের হেদায়াততুফাইল ইবনে আমর আদ-দাওসি (রা.) গোত্রকে দাওয়াত দিলেন, কিন্তু তারা অস্বীকার করল। নবীজির কাছে এসে বললেন, ‘তারা ব্যভিচারে লিপ্ত। তাদের বিরুদ্ধে দোয়া করুন।’
নবীজি বললেন, ‘আল্লাহুম্মাহদি দাওসা’ (হে আল্লাহ, দাওসকে হেদায়াত দাও)। তারপর বললেন, ‘ফিরে যাও, দাওয়াত দাও, নম্র হও।’ তুফাইল ফিরে গেলেন, দাওয়াত দিতে থাকলেন। খাইবারে ৭০-৮০ ঘর মুসলিম হয়ে নবীজির কাছে গেলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪,৩৯৩)।
এই ঘটনাগুলো দেখায়, নবীজির দোয়া কখনো বিফল হয়নি।
বৃষ্টি, হেদায়াত, স্মৃতি, স্বাস্থ্য, শক্তি সবকিছুতে আল্লাহ তাঁর দোয়ায় সাড়া দিয়েছেন। এটি নবুয়তের প্রমাণ। আমরা নবীজির সুন্নাহ অনুসরণ করে দোয়া করি, আল্লাহ আমাদেরও কবুল করুন।
আরও পড়ুনসাহাবিরা যেভাবে মহানবী (সা.)-কে মানতেন২৪ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সহ হ ব খ র আল ল হ ম ম নব জ র ক ছ আল ল হ ত নব জ র দ ত রপর বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
টিপু মুনশি, মুজিবুল হক, শাহরিয়ার আলমসহ সাতজনের আয়কর নথি জব্দের আদেশ
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকসহ সাত ব্যক্তির আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের ভারপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ শিহাবুল ইসলাম আজ রোববার এ আদেশ দেন।
অন্য যাঁদের আয়কর নথি জব্দের আদেশ হয়েছে, তাঁরা হলেন—টিপু মুনশির স্ত্রী মালবিকা মুনশি, সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রিয়াজ হোসেন জানান, দুদকের মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা পৃথক আবেদনে এই সাতজনের আয়কর নথি জব্দের আদেশ চান। আদালত সেসব আবেদন মঞ্জুর করেন।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এই সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা আছে। মামলা তদন্তের স্বার্থে তাঁদের আয়কর নথি জব্দ করা প্রয়োজন বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের আবেদনে উল্লেখ করা হয়।