কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা, কেমন সুফল মিলতে পারে
Published: 13th, October 2025 GMT
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রোববার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিএ-১ শাখার যুগ্ম সচিব আহমেদ জামিল স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর কক্সবাজার বিমানবন্দর দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মর্যাদা লাভ করল।
বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষেই কক্সবাজার বিমানবন্দরের অবস্থান। রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৭০০ ফুট। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০০ ফুট নির্মাণ করা হয়েছে সাগরবক্ষে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র বলছে, এই প্রজ্ঞাপন জারির ফলে কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হতে আর বাধা থাকল না। এই বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতি চলছে।
বেবিচকের দেওয়া তথ্যমতে, বিমানবন্দরের ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন নতুন টার্মিনাল ভবনের নির্মাণকাজ শেষের পথে। যার আয়তন ১০ হাজার ৯১২ দশমিক ৪৯ বর্গফুট।
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হওয়ায় কক্সবাজারের মানুষ খুশি। তাঁরা বলছেন, এর ফলে বিদেশি পর্যটক বাড়বে। এতে কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসাও চাঙা হবে। তবে এর সুফল নিয়ে সংশয় রয়েছে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের পরিচালক গোলাম মুর্তজা হোসেন বলেন, কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন–সুবিধা প্রস্তুত করা হয়েছে। কিছু কাজ বাকি আছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে চলতি মাসেই কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু করা সম্ভব।
গত ১৪ মার্চ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কক্সবাজার বিমানবন্দরের চলমান নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আমিনুল হাসিব প্রধান উপদেষ্টাকে কক্সবাজার বিমানবন্দরের নির্মাণকাজের অগ্রগতি ও সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি চালু হলে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি বিমান এই বিমানবন্দর থেকে ওঠানামা করবে বলে প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়। তখন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০১৭ সালে কক্সবাজারে মিয়ানমারে সামরিক জান্তার নিপীড়ন এড়াতে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। রোহিঙ্গা ঢলের কারণে কক্সবাজারে অনেক দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থার কার্যক্রম শুরু হয় তখন। এসব এনজিওতে দেশের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক বিদেশিও কর্মরত আছেন। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হওয়ায় বিদেশি এসব কর্মকর্তা কক্সবাজারে সরাসরি আসতে পারবেন।
সাগরপারের মানুষের উচ্ছ্বাস
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষিত হওয়ায় কক্সবাজারবাসী খুশি বলে জানান কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটবে। হোটেল–রেস্তোরাঁসহ পর্যটন খাতের ব্যবসা চাঙা হবে।
কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে পর্যটন ব্যবসায় নতুন গতি আসবে এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলন, করপোরেট ইভেন্ট ও সাংস্কৃতিক আয়োজন সহজ হবে—যা স্থানীয় লোকজনের কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি গতিশীল হবে।’
৬ হাজার কোটি টাকার ৩ প্রকল্প
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। চলমান থাকা প্রকল্পগুলোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এসব প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৬ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ১৫ কোটি টাকা। কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ৩ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। আর কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন নির্মাণ প্রকল্পে অর্থ ব্যয় হচ্ছে ২৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ২০০৯ সালে। যার কাজ এখনো চলমান। বাকি দুটি প্রকল্প নেওয়া হয় যথাক্রমে ২০১৯ ও ২০১৭ সালে।
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে কী লাগে
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হওয়ার জন্য কী কী মানদণ্ড অনুসরণ করতে হয়, তার একটি চিত্র প্রথম আলোর কাছে তুলে ধরেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য প্রথমে প্রয়োজন পর্যাপ্তসংখ্যক যাত্রী। অর্থাৎ বিদেশে আসা-যাওয়া করার মতো যাত্রী থাকতে হবে। যদি যাত্রী না থাকে, তাহলে বিমানবন্দর চলবে না।
এরপর বিমানবন্দরের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে বলে জানান এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। যাতে বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে। বিমানবন্দরে নির্বিঘ্নে অবস্থান করতে পারে তাদের বিমান। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মধ্যে বিমানবন্দরে বিমানগুলোর রিফুয়েলিং করার সুযোগ থাকতে হবে।
কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবন। সম্প্রতি তোলা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘চরিত্ররা কেউ কথা বলে না, শুধু হাঁটে আর চিন্তা করে!’
বুদাপেস্টের এক বিষণ্ন বিকেল। শহরের বুকজুড়ে নীরবতা, বৃষ্টি পড়ছে অনবরত, আর এক তরুণ লেখক কাঁধে একটি ছেঁড়া ব্যাগ ঝুলিয়ে হাঁটছেন প্রকাশনা অফিসের দিকে। ব্যাগে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘সাতানট্যাঙ্গো’র পাণ্ডুলিপি। ১৯৮৩ সাল। হাঙ্গেরিতে তখন কঠোর সমাজতান্ত্রিক শাসন, সাহিত্যে কেবল উজ্জ্বল ভবিষ্যতের নিশানা দেখানো ছাড়া অন্য বয়ান সরকারের কাছে ‘অনুচিত’ মনে করা হয়।
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই তখনো একেবারেই অজানা নাম। প্যারিস রিভিউকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লাসলোর ভাষায়, ‘আমি কেবল চেয়েছিলাম মানুষকে তার নিজের ভয়টার সামনে দাঁড় করাতে। প্রকাশক পাণ্ডুলিপি দেখে দ্বিধায় পড়েছিলেন। তিনি বলেন, এই বইয়ে তো কেউ কথা বলে না, শুধু হাঁটে আর চিন্তা করে! পাঠক কি ঘুমাবে না?’
লাসলো শান্তভাবে জবাব দেন, ‘তারা ঘুমাবে না, তারা ভয় পাবে।’ সংলাপটি প্রথম উল্লেখ করেন লেখকের জীবনীকার জর্জ শির্তেশ (George Szirtes), যিনি ‘সাতানট্যাঙ্গো’র ইংরেজি অনুবাদকও।
সাতানট্যাঙ্গো বইয়ের প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ