প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে শরীয়তপুর জেলা অন্তর্ভুক্ত না করে ঢাকা বিভাগেই রাখার দাবিতে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার সামনে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে ‘জাগো শরীয়তপুর’ নামে একটি সংগঠন। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলা এই কর্মসূচির জন্য পদ্মা সেতুতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে।

জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। অবরোধের কারণে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে নাওডোবা এলাকায় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে যানজট সৃষ্টি হয়। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

কয়েক দিন আগে সরকার দুটি নতুন বিভাগ গঠনের ঘোষণা দেয়—একটি ফরিদপুর ও অন্যটি কুমিল্লা। ফরিদপুর বিভাগে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবের পর থেকেই শরীয়তপুরে শুরু হয় আন্দোলন।

২০১৫ সালেও ফরিদপুর বিভাগ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলে শরীয়তপুরকে ঢাকা বিভাগেই রাখার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ‘জাগো শরীয়তপুর’ নামে একটি সংগঠন। এবারও সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ‘জাগো শরীয়তপুর’ নামে সংগঠনটি মাঠে নামে। গত এক মাস ধরে তারা সংবাদ সম্মেলন, বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ ও মহাসমাবেশের মতো কর্মসূচি পালন করছে। প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবদের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে।

৫ অক্টোবর শরীয়তপুর জেলা শহরে জাগো শরীয়তপুরের উদ্যোগে এক মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শরীয়তপুরকে ঢাকা বিভাগে রাখার দাবি জানিয়ে সিদ্ধান্ত না মানা হলে পদ্মা সেতু অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারের অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।

আজ সকাল ১০টার দিকে জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে সাধারণ মানুষ জড়ো হতে শুরু করেন। প্রথমে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে মানববন্ধন কর্মসূচি হয়, যেখানে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। পরে বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা টোল প্লাজার অদূরে সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন।

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ফরিদপুর বিভাগ হবে—এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে আমরা শরীয়তপুরের মানুষ ফরিদপুরের সঙ্গে যেতে চাই না। আমরা ঢাকায় রয়েছি, ঢাকাতেই থাকতে চাই। আমাদের ঢাকা থেকে আলাদা করা হলে আন্দোলন চালিয়ে যাব। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

জাগো শরীয়তপুরের আহ্বায়ক আমিন মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা ঢাকা বিভাগেই থাকতে চাই। ভৌগোলিক অবস্থান ও দূরত্বের দিক থেকে শরীয়তপুর ঢাকার কাছাকাছি। নাগরিক ও প্রশাসনিক সেবা পেতে ঢাকা আমাদের জন্য সুবিধাজনক। তাই শরীয়তপুরকে কোনোভাবেই ঢাকা থেকে আলাদা করা যাবে না। আজ আমরা স্বল্প সময়ের জন্য পদ্মা সেতু ব্লক করেছি, দাবি না মানা হলে দীর্ঘ সময়ের জন্য সেতু ব্লক করে রাখা হবে।’

জাজিরার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রসূল বলেন, ‘পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার সামনে একটি সংগঠন শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছে। আমাদের অনুরোধ ও যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। পরে সেতু দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র ট ল প ল জ র স মন র জন য আম দ র অবর ধ স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে কোচিং সেন্টারে ‘মব’, শিক্ষককে চড়-থাপ্পড়

রাজশাহীর তানোরে কোচিং সেন্টারে গিয়ে ‘মব’ সৃষ্টি করে এক শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন কয়েকজন যুবক। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কোচিং সেন্টারের ছাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপে আপত্তিকর বার্তা পাঠান। তবে, এ অভিযোগের কোনো প্রমাণ পায়নি পুলিশ।

তানোরের মুণ্ডুমালায় ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার। সোমবার (১৩ অক্টোবর) একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, কোচিংয়ের শিক্ষক রোকনুজ্জামান রোকন তার চেয়ারে বসে আছেন। কয়েকজন যুবক তাকে অশ্লীল ভাষায় গালি দিচ্ছেন। একপর্যায়ে মো. শাকিব নামের এক যুবক তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুণ্ডুমালা বাজারে অবস্থিত অ্যাডভান্স কোচিং সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। এখানে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষকের নাম রোকনুজ্জামান রোকন। মুণ্ডুমালা পৌরসভার মোহাম্মদপুর মহল্লায় তার বাড়ি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও কোচিং সেন্টারের পরিচালক।

অভিযুক্ত শাকিবের বাড়ি পৌর এলাকার কাদিপুর মহল্লায়। ভিডিও ভাইরালের পর থেকে তিনি এলাকায় নেই। কোচিং সেন্টারও বন্ধ আছে। শতাধিক শিক্ষার্থী এ কোচিং সেন্টারে পড়েন।

ভুক্তভোগী শিক্ষক রোকনুজ্জামান রোকন বলেছেন, “আমরা কয়েকজন মিলে কোচিং সেন্টারটি চালাই। মুণ্ডুমালায় আরো কয়েকটি কোচিং সেন্টার থাকলেও আমাদেরটি ভালো চলত। সেজন্য ষড়যন্ত্র করে আমাদের কোচিং সেন্টারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমি নাকি ছাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপে আপত্তিকর ম্যাসেজ দিয়েছি। কিন্তু এর কোনো প্রমাণ নেই। এই ছেলেগুলো আগে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ করত। ৫ আগস্টের পর তারা বিএনপি-যুবদল হয়ে গেছে। তারা মব সৃষ্টি করে আমাকে মারধর করে এবং কোচিং সেন্টারটি বন্ধ করে দেয়। আসলে তাদের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। তাহলে মারধরের সময় তো মেয়েরাও থাকত। সেখানে কোনো মেয়ে ছিল না।”

তিনি আরো বলেন, “যখন আমাকে মারধর করা হয়, তখনো তিনজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছিলেন। তারা মুণ্ডুমালা পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেন। পুলিশ এসে আমাকে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। কিন্তু, অভিযোগের কোনো প্রমাণ পায়নি বলে আমাকে ছেড়ে দেয়। এখন আমি আমার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে মামলা-মোকদ্দমা করতে যাইনি। ভয়ে কোচিং সেন্টারও খুলতে পারছি না।”

মুণ্ডুমালা পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক রেজাউল ইসলাম বলেছেন, “রোকনুজ্জামান আমার পরিচিত। তাকে ভালোই মনে হয়। কেন এ ঘটনা ঘটল, তা জানি না। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিএনপি বা যুবদলে কোনো পদ নেই। এমনিই তারা ওঠা-বসা করতে পারে।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাকিবকে কয়েক দফায় ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তার বাবা মো. ভুট্টু বলেছেন, “ঘটনার ব্যাপারে লোকমুখে শুনেছি। কী হয়েছে, সঠিক বলতে পারছি না। যারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, তারাই বলতে পারবে। আমার ছেলে তো নাই। সে রাজশাহীতে আছে।”

মুণ্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ কমলেশ হেমব্রম বলেছেন, ‘রোকনুজ্জামান মব জাস্টিসের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। পুলিশ গিয়ে তাকে নিরাপদে বের করে এনেছে। আপাতত কোচিং সেন্টার বন্ধ আছে। তবে, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার সত্যতা আমরা পাইনি। এ ব্যাপারে কোনো পক্ষ অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ