ট্রাম্পের ওপর কেন হামাস এতটা আস্থা রাখছে
Published: 14th, October 2025 GMT
হামাস একসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘বর্ণবাদী’ ও ‘অরাজকতার কারিগর’ বলেছিল। গাজা সম্পর্কে তিনি ‘অযৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি’ পোষণ করেন বলেও আখ্যা দিয়েছিল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি।
তবে গত মাসে নজিরবিহীন এক ফোনালাপের পর হামাসের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছিল, তারা সব জিম্মিকে মুক্তি দিলে ট্রাম্প হয়তো ইসরায়েলকে শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করতে পারবেন। ইসরায়েলি এসব জিম্মি এত দিন গাজা যুদ্ধে হামাসের বড় হাতিয়ার ছিল। দুই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা এমনটা জানিয়েছেন।
সে সময় ওই ফোনালাপ ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল। গত সেপ্টেম্বরে হোয়াইট হাউসে এক বৈঠক শেষে ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে একটি টেলিফোন ধরিয়ে দেন এবং ফোনে কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন।
গত মাসের শুরুর দিকে কাতারের রাজধানী দোহায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এ হামলার লক্ষ্য ছিল গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে দোহায় অবস্থানরত খলিল আল–হায়াসহ হামাসের শীর্ষ মধ্যস্থতাকারীদের হত্যা করা। কিন্তু ইসরায়েলের এ লক্ষ্য সফল হয়নি। কাতারে হামলা চালানোর কারণেই নেতানিয়াহুকে ফোনালাপে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন।
ফিলিস্তিনি ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প কাতারের বিষয়টি ভালোভাবে সামাল দেওয়ায় হামাস নেতাদের মধ্যে বিশ্বাস আরও জোরালো হয়েছিল যে তিনি যুদ্ধের অবসানের বিষয়ে আন্তরিক এবং তিনিই নেতানিয়াহুকে মোকাবিলা করতে পারবেন।
আর গত বুধবার ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়ে যাওয়ার পর তাঁর প্রতি হামাসের বিশ্বাস আরও বেড়ে গেছে। অথচ এই ট্রাম্পই চলতি বছর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করে সেটিকে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত একটি ‘অবকাশযাপনকেন্দ্রে’ পরিণত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
আর গত বুধবার ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়ে যাওয়ার পর তাঁর প্রতি হামাসের বিশ্বাস আরও বেড়ে গেছে। অথচ এই ট্রাম্পই চলতি বছর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করে সেটিকে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত একটি ‘রিসোর্টে’ পরিণত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।গত শুক্রবার গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে। চুক্তিতে গাজা থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের কোনো নিশ্চয়তা ছাড়াই ইসরায়েলি সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হয় হামাস। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গতকাল সোমবার জীবিত ২০ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
হামাসের অন্য দুই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, চুক্তিতে রাজি হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাজি ধরেছে হামাস। পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে এই মনোভাবের ওপর—ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তির জন্য এত পরিশ্রম করেছেন যে তিনি এটি ভেস্তে যেতে দেবেন না।
এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেন, হামাস নেতারা ভালো করেই জানেন, এই বাজির দান উল্টে যেতে পারে। তাঁদের আশঙ্কা, একবার বন্দীরা মুক্তি পেলে ইসরায়েল আবারও সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে। গত জানুয়ারিতে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পর ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। ওই যুদ্ধবিরতির সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসন ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিল।
মিসরের শারম আল–শেখে গাজা শান্তি সম্মেলনে ইসরায়েলের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনায় ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ও বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে হামাসকে যথেষ্ট আশ্বস্ত করেছে। যদিও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পদক্ষেপসহ তাদের অনেক মৌলিক দাবি এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
মিসরের পর্যটন শহর শারম আল–শেখে ‘শান্তি সম্মেলনে’ ২০টির বেশি দেশের নেতাদের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৩ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গর্ভে একই সঙ্গে একাধিক সন্তান কেন আসে? এর ঝুঁকি কী?
প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে যত নারী মা হন, তাঁদের মধ্যে প্রতি ২৫০ জনের মধ্যে একজনের যমজ সন্তান হয়। অর্থাৎ দুটি সন্তান গর্ভে আসে। একই সঙ্গে তিন সন্তান গর্ভে আসার ঘটনা ঘটে আরও কম, প্রতি ১০ হাজার জনে একজন।
একই সঙ্গে চার সন্তান জন্মের ঘটনা বিরল। প্রতি সাত লাখ মায়ের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে এমনটা হয়। একবারে এর বেশি সন্তান জন্মের হার আরও কম। তবে একটির বেশি সন্তান গর্ভে থাকলেই তা মা ও সন্তানদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
স্বাভাবিক নিয়মে একজন নারীর মাসিক চক্রে একটিমাত্র ডিম্বাণুই পূর্ণতা পায়। এই ডিম্বাণু একটি শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ফলে একটি ভ্রুণ সৃষ্টি হয়। এটিই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ব্যতিক্রম হতে পারে দুইভাবে।
১. একাধিক ডিম্বাণু পূর্ণতা পেলে সে ক্ষেত্রে সেগুলো একাধিক শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে একাধিক ভ্রুণ সৃষ্টি হতে পারে। প্রকৃতির নিয়মেই অল্প কিছু নারীর গর্ভে এভাবে একাধিক সন্তান আসে। আবার বন্ধ্যত্বের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের প্রভাবেও একাধিক ডিম্বাণু পূর্ণতা পেতে পারে এবং ঘটতে পারে এমন ঘটনা।
২. একটি ডিম্বাণুর সঙ্গে একটি শুক্রাণু মিলিত হয়ে যে ভ্রুণ তৈরি হয়েছে, প্রাকৃতিকভাবেই তা বিভাজিত হয়ে দুটি ভ্রুণ তৈরি হতে পারে। তখন যমজ সন্তান হয়। এ ক্ষেত্রে সন্তানদের চেহারা ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য থাকে একই রকম।
আরও পড়ুনপ্রসব–পরবর্তী মানসিক সমস্যার কারণ, ঝুঁকি ও করণীয়০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫গর্ভের সন্তানদের ঝুঁকিএকাধিক সন্তান গর্ভে এলে গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
গর্ভকাল পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রসববেদনা শুরু হয়ে যেতে পারে, পানি ভাঙতে পারে।
প্রসবের সময় আগে মাথা না বেরিয়ে শরীরের অন্য অংশ, এমনকি নাড়িও বেরিয়ে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসব হয় না।
অপরিণত অবস্থায় জন্মানো শিশুর ওজনও থাকে কম, শ্বাসপ্রশ্বাসও ব্যাহত হতে পারে।
দীর্ঘদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হতে পারে এই শিশুদের, হতে পারে মৃত্যুও।
জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকিও থাকে এসব শিশুর।
গর্ভে থাকার সময়েও মারা যেতে পারে এই শিশুরা।
গর্ভফুলজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন‘ব্রেন ডেড’ নারী যেভাবে যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন০৫ জানুয়ারি ২০২৩মায়ের জটিলতাএকাধিক সন্তান গর্ভে থাকলে বমি বমি ভাব, বমি, দুর্বলতা, রক্তস্বল্পতা, ওজন বৃদ্ধি—সবই হয় অতিরিক্ত মাত্রায়।
তাই স্বাভাবিক চলাফেরা, এমনকি ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
হতে পারে শ্বাসকষ্ট।
রক্তচাপজনিত মারাত্মক জটিলতার ঝুঁকি বাড়ে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেশি থাকে এই মায়েদের।
একাধিক সন্তান গর্ভে এলে করণীয়একাধিক সন্তান গর্ভে আসা মানেই উচ্চ ঝুঁকি। তাই এমনটা হলে হবু মায়ের চাই বাড়তি যত্ন। অবশ্যই বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে মাকে। পরিবারের সদস্যদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে তাঁর প্রতি। পর্যাপ্ত পুষ্টি, পানি, বিশ্রাম ও হালকা ব্যায়াম—রোজকার জীবনে এসব বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। মায়ের মনেরও যত্ন নিতে হবে। প্রসবের পরিকল্পনা করা উচিত এমন হাসপাতালে, যেখানে প্রয়োজন হলে নবজাতকদেরকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখার সুযোগ আছে।
আরও পড়ুনযে ভাষায় কথা বলেন কেবল দুই যমজ ভাই০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫