ট্রাম্পের ‘বন্ধুত্বের হাত’: এবার ইরানের সঙ্গে নতুন চুক্তির আশা কি সত্যি
Published: 15th, October 2025 GMT
গাজায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মধ্যপ্রাচ্য সফরে এ অঞ্চলের আরেকটি সংকটের দিকে নজর দিয়েছেন। আর তা হলো, তেহরান–ওয়াশিংটন সম্পর্কের উত্তেজনা বা টানাপোড়েন।
সোমবার ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে ভাষণ দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য এক চুক্তি নিয়ে তিনি ‘বন্ধুত্বের হাত’ বাড়াতে চান।
বছরের মাঝামাঝি ১২ দিনের ইরান–ইসরায়েল যুদ্ধের মধ্যে ট্রাম্প প্রথমবারের মতো তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় বোমাবর্ষণের নজির স্থাপন করেন।
‘আমরা প্রস্তুত, যখন তোমরাও প্রস্তুত হবে। এটাই হবে ইরানের নেওয়া সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত এবং এটি ঘটবেই’, তেহরানের সঙ্গে সম্ভাব্য এক চুক্তি নিয়ে বলেন ট্রাম্প। তিনি আরও বলেন, ‘বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার হাত খোলা রয়েছে। আমি বলছি, তারা (ইরান) একটি চুক্তি করতে চায়। আমরা যদি চুক্তি করতে পারি, তা হবে দারুণ।’
তবে ট্রাম্পের এই শান্তিপূর্ণ কথাবার্তার আড়ালে তাঁর প্রশাসন ইরানের প্রতি কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুই দেশের সম্পর্কে উন্নতির পথ এখনো নানা বাধায় ভরা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্রাফটের নির্বাহী সহসভাপতি ত্রিতা পারসি বলেন, যখন ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছিল, সেই সময় অর্থাৎ গত জুনে তেহরানে যৌথ হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। এ ঘটনা ইরানে কূটনীতির পক্ষে মানুষের অবস্থানকে দুর্বল করে দিয়েছে।
ত্রিতা বলেন, ‘ইরানে এখন এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র আসলে কূটনীতির কথা বলে ইরানকে মিথ্যা নিরাপত্তাবোধে আচ্ছন্ন করছে।’
যখন ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছিল, সেই সময় অর্থাৎ গত জুনে তেহরানে যৌথ হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। এটি ইরানে কূটনীতির পক্ষে থাকা মহলের অবস্থান দুর্বল করে দিয়েছে। ইরানে এখন এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র আসলে কূটনীতির কথা বলে ইরানকে মিথ্যা নিরাপত্তাবোধে আচ্ছন্ন করছে।‘ইরান চুক্তির জন্য প্রস্তুত’
ইরান এখনো কূটনীতির দরজা পুরোপুরি বন্ধ করেনি। তবে দেশটির নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ফেরার ব্যাপারে তেমন তাড়াহুড়া করছেন না।
গত শনিবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, ‘আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যুক্তিসংগত, ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য কোনো প্রস্তাব পাই, তা অবশ্যই বিবেচনা করব।’
তবে সোমবার ইরান মিসরের শারম আল–শেখে গাজা যুদ্ধ নিয়ে আয়োজিত এক সম্মেলনে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। দেশটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ও নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে না।
ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণ করার পর থেকে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা স্থগিত হয়ে আছে। ইসরায়েল গত জুনে আগে বেড়ে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করে। এর কয়েক দিন পরই যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানি কর্মকর্তাদের নতুন দফা আলোচনায় বসার কথা ছিল।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার চুক্তি থেকে সরে গিয়েছিল। এবার ওয়াশিংটন বলছে, নতুন কোনো চুক্তিতে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
আরও পড়ুনইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী২৭ জুন ২০২৫‘বেহেশত জাহরা’ কবরস্থানের দেয়ালে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইরানি সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও অন্যান্য ব্যক্তিদের ছবি। দক্ষিণ তেহরান, ইরান, ১১ জুলাই ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ক টন ত র ইসর য় ল প রস ত
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনার ভেঙে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণ, সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-প্রতিবাদ
পুকুরপাড়ে ছায়াঘেরা চত্বর। চত্বরের মাঝখানে কিছু জায়গায় চারদিকে পাকা দেয়াল। উত্তর পাশের দেয়ালের মাঝামাঝি সবুজ বৃত্তের মধ্যে লাল সূর্য। লাল-সবুজের সামনেই বেদি। এটি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শহীদ মিনার। ভাষা শহীদদের স্মরণে ১৯৬৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল।
প্রায় ৬০ বছরের পুরোনো এ শহীদ মিনার এখন ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি স্মারকস্তম্ভ। বিষয়টি জানাজানির পর ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কলেজের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। কলেজ ছাত্রদলের পক্ষ থেকে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণকাজ বন্ধ এবং শহীদ মিনার আগের অবস্থায় পুনঃস্থাপনের দাবিতে অধ্যক্ষের কাছে গতকাল মঙ্গলবার স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার একই দাবিতে কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করবেন কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাছননগর এলাকায় ১৯৪৪ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। সরকারীকরণ করা হয় ১৯৮০ সালে। কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২০ সালের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী উৎসব হয়। এ উৎসবের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তখন ক্যাম্পাসে একটি স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সরকারি কলেজে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণকাজ শুরু হয় মাসখানেক আগে।
এখন শহীদ মিনার ভাঙার প্রতিবাদে অনেকেই সরব হওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষ এর দায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। আর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, তারা কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করে দেওয়া স্থানে এটি নির্মাণ করছে। স্থান নির্ধারণে তাদের কোনো ভূমিকা নেই।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ১৯৭৩-৭৪ সালে সহসভাপতি (ভিপি) ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান। শহীদ মিনার ভাঙার খবর পেয়ে গতকাল বিকেলে ছুটে যান কলেজে; কথা বলেন অধ্যক্ষের সঙ্গে। তিনি জানান, ভাষাশহীদদের স্মরণে ১৯৬৬ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে এ শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এটিই জেলায় ভাষাশহীদদের স্মরণে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী এটি ভেঙে ফেলে। দেশ স্বাধীনের পর ছাত্রনেতারা এটি আবার নির্মাণ করেন।
সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই শহীদ মিনারেই আমরা সভা–সমাবেশ করতাম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর আবেগ, স্মৃতি জড়িয়ে আছে এটির সঙ্গে। কলেজে এত জায়গা থাকতে শহীদ মিনার ভেঙে তার ভেতরে কেন স্মারকস্তম্ভ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, এটিই বুঝতে পারছি না। এতে খুবই মর্মাহত হয়েছি।’
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান জানান, ‘সুনাম ফলক’ নামের এ স্মারকস্তম্ভের নকশা করেছেন ভাস্কর হামিদুজ্জামান। একইভাবে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের ১২৫ বছর পূর্তির একটি স্মারক নির্মাণ করা হয়েছে। এখন শহরের সরকার সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ৭৫ বছর পূর্তির দুটি স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি কলেজের স্মারকটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা।
কামরুজ্জামান বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষই স্থানটি নির্ধারণ করেছে। কলেজে আরেকটি শহীদ মিনার নির্মাণ করায় পুরোনোটা ভেঙে সেখানে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত কলেজ কর্তৃপক্ষের। এখানে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা নেই। তাঁদের পরামর্শ ছিল কলেজের প্রধান ফটকের পাশে ভেতরে উত্তর পাশে এটি নির্মাণের, কিন্তু এতে কলেজ কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়াও তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপর কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর করছে। তারাই স্থান নির্ধারণ করেছে। এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশলীর মন্তব্য জানানোর পর তিনি আবার বলেন,‘আসলে আমরাই তাদের বলেছি, এখানে কাজ করা যাবে কি না। তারা রাজি হওয়ায় এখন কাজ হচ্ছে। এত দিন কেউ কিছু বলেনি। এখন অনেকেই কথা বলছে। আমি ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে নই। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলব।’