ছাদবাগানের সরঞ্জাম কোথায় পাবেন, দাম কত
Published: 15th, October 2025 GMT
শহরমুখী মানুষের চাপে রাজধানী শহর ঢাকায় গাছগাছালির পরিমাণ ক্রমেই কমছে। তবে কিছুটা সবুজের ছোঁয়া নিতে মানুষ এখন ছাদে কিংবা বারান্দায় ছোট পরিসরে বাগান তৈরি করছেন। এমন ছাদবাগানের ধারণা দ্রুতই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এমন বাগান করতে কী কী লাগে, কোথায় পাওয়া যায় বা সরঞ্জামের দাম কত, তা জানা প্রয়োজন।
ছাদবাগান করতে গাছের পাশাপাশি নানা ধরনের সামগ্রী লাগে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক নার্সারি। এসব নার্সারিতে ছোট চারাগাছের পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে বাগানের যাবতীয় সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি। যেমন গাছ লাগানোর মাটি থেকে শুরু করে গাছের টব, পানি দেওয়ার স্প্রে মেশিন, পাতা কাটার কাঁচি, বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক, সার ইত্যাদি।
দাম কত
সম্প্রতি এসব যন্ত্রের দাম নিয়ে কথা হয় আগারগাঁও, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন বিক্রেতাদের সঙ্গে। তাঁরা জানান, প্লাস্টিকের টব পাওয়া যায় ৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। পানি দেওয়ার যন্ত্রের দাম ১০০ থেকে ৫০০ টাকা। আগাছা নিড়ানি পাওয়া যায় ২৫০ টাকার মধ্যে। পাতা কাটার কাঁচির দাম পড়বে ৪০০ টাকা ও এর আশপাশে।
এ ছাড়া বিভিন্ন জাতের পোকার ওষুধ পাওয়া যায় ১০০ থেকে ২০০ টাকায়। সারের ছোট প্যাকেট পাওয়া যায় ২০ থেকে ৫০ টাকায়। ২৫০ টাকার মধ্যেই পাবেন কীটনাশকের প্যাকেট। আর এক বস্তা মাটির দাম ১০০ টাকা।
অনেকে প্লাস্টিকের টবের পরিবর্তে মাটির টব ব্যবহার করেন। ছোট মাটির টব পাওয়া যায় ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়। আর বিভিন্ন নকশা করা মাটির টবের দাম ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।
গাছের ক্যালসিয়ামের জন্য হাড়ের গুঁড়া দেন অনেকে। এই হাড়ের গুঁড়া বিক্রি হয় প্যাকেটের সাইজ অনুসারে ৯০ থেকে ১৫০ টাকায়। আবার একই কাজে নারকেলের ছোবড়া বিক্রি হয় প্রতি প্যাকেট ১৫০ টাকায়।
গাছের চেয়ে এসব আনুষঙ্গিক জিনিসের দাম বেশি বলে জানান মোহাম্মদপুর এলাকার মায়ের দোয়া গার্ডেনের মালিক জিএম সাকিব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি ছোট গাছের দাম ৫০ টাকা। টবসহ গাছের দাম পড়বে আরও ১০০ টাকা। আবার সার নিলে যোগ হবে আরও ৫০ টাকা। এর মানে হলো, ৫০ টাকার গাছে আপনার ১৫০ টাকার জিনিস লাগবে।’ তবে এখন প্রতি এলাকায় নার্সারি গড়ে ওঠায় ব্যবসা আগের তুলনায় কম বলে জানান এ তরুণ বিক্রেতা।
কোথায় পাবেন
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার শহীদ পার্কের বিপরীত পাশে ১৩টি ছোট নার্সারি আছে। এসব নার্সারিতে গাছ লাগানোর সব উপকরণ ও সরঞ্জাম পাওয়া যায়। প্রায় এক যুগ ধরে এ এলাকায় নার্সারি ও সরঞ্জামের ব্যবসা করছেন আল-আমিন। তিনি বলেন, মাসে প্রায় ১ লাখ টাকার টব বিক্রি হয়। বাগান করার অন্য জিনিস বিক্রি করে আয় প্রায় দেড় লাখ টাকা।
নার্সারির মালিকেরা জানান, বর্তমানে ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায় ছোট, মাঝারি ও বড় মিলিয়ে প্রায় ৮০০ নার্সারি আছে। এর মধ্যে ছোট আকারের ৪৫০ ও মাঝারি ২৫০টি। বাকিগুলো বড় আকারের। ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় নার্সারি আছে প্রায় ৩০০টি। ঢাকার আগারগাঁও, ৩০০ ফুট, ১০০ ফুট, দিয়াবাড়ি, দোয়েল চত্বর, বেইলি রোড, কাকরাইল ও বেড়িবাঁধ এলাকায় অধিকাংশ নার্সারি গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু নার্সারি আছে। এ ছাড়া বিমানবন্দর এলাকার আশপাশে কয়েকটি নার্সারি আছে।
অন্যদিকে সাভার, আশুলিয়া, রূপগঞ্জ, গাজীপুরসহ ঢাকার আশপাশের এলাকায় আছে প্রায় ৫০০টি নার্সারি। এসব নার্সারিকে কেন্দ্র করে গাছ পরিচর্যার বিভিন্ন উপকরণ ও যন্ত্রপাতির ব্যবসাও রয়েছে। সব মিলিয়ে এই খাতে প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। আর মোহাম্মদপুর রায়েরবাজার বধ্যভূমির রাস্তার পাশে বেশ কয়েকটি নার্সারি রয়েছে। প্রতি সোমবার এখানে গাছের মেলা হয়। এখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে বৃক্ষপ্রেমীরা আসেন। এখানে সব জিনিসের পাশাপাশি দামও কিছুটা কম পাওয়া যায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ভ ন ন এল ক ম হ ম মদপ র ৫০ ট ক র সরঞ জ ম এল ক য় র এল ক এল ক র আশপ শ
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনার ভেঙে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণ, সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-প্রতিবাদ
পুকুরপাড়ে ছায়াঘেরা চত্বর। চত্বরের মাঝখানে কিছু জায়গায় চারদিকে পাকা দেয়াল। উত্তর পাশের দেয়ালের মাঝামাঝি সবুজ বৃত্তের মধ্যে লাল সূর্য। লাল-সবুজের সামনেই বেদি। এটি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শহীদ মিনার। ভাষা শহীদদের স্মরণে ১৯৬৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল।
প্রায় ৬০ বছরের পুরোনো এ শহীদ মিনার এখন ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি স্মারকস্তম্ভ। বিষয়টি জানাজানির পর ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কলেজের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। কলেজ ছাত্রদলের পক্ষ থেকে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণকাজ বন্ধ এবং শহীদ মিনার আগের অবস্থায় পুনঃস্থাপনের দাবিতে অধ্যক্ষের কাছে গতকাল মঙ্গলবার স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার একই দাবিতে কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করবেন কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাছননগর এলাকায় ১৯৪৪ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। সরকারীকরণ করা হয় ১৯৮০ সালে। কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২০ সালের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী উৎসব হয়। এ উৎসবের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তখন ক্যাম্পাসে একটি স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সরকারি কলেজে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণকাজ শুরু হয় মাসখানেক আগে।
এখন শহীদ মিনার ভাঙার প্রতিবাদে অনেকেই সরব হওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষ এর দায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। আর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, তারা কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করে দেওয়া স্থানে এটি নির্মাণ করছে। স্থান নির্ধারণে তাদের কোনো ভূমিকা নেই।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ১৯৭৩-৭৪ সালে সহসভাপতি (ভিপি) ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান। শহীদ মিনার ভাঙার খবর পেয়ে গতকাল বিকেলে ছুটে যান কলেজে; কথা বলেন অধ্যক্ষের সঙ্গে। তিনি জানান, ভাষাশহীদদের স্মরণে ১৯৬৬ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে এ শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এটিই জেলায় ভাষাশহীদদের স্মরণে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী এটি ভেঙে ফেলে। দেশ স্বাধীনের পর ছাত্রনেতারা এটি আবার নির্মাণ করেন।
সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই শহীদ মিনারেই আমরা সভা–সমাবেশ করতাম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর আবেগ, স্মৃতি জড়িয়ে আছে এটির সঙ্গে। কলেজে এত জায়গা থাকতে শহীদ মিনার ভেঙে তার ভেতরে কেন স্মারকস্তম্ভ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, এটিই বুঝতে পারছি না। এতে খুবই মর্মাহত হয়েছি।’
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান জানান, ‘সুনাম ফলক’ নামের এ স্মারকস্তম্ভের নকশা করেছেন ভাস্কর হামিদুজ্জামান। একইভাবে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের ১২৫ বছর পূর্তির একটি স্মারক নির্মাণ করা হয়েছে। এখন শহরের সরকার সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ৭৫ বছর পূর্তির দুটি স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি কলেজের স্মারকটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা।
কামরুজ্জামান বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষই স্থানটি নির্ধারণ করেছে। কলেজে আরেকটি শহীদ মিনার নির্মাণ করায় পুরোনোটা ভেঙে সেখানে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত কলেজ কর্তৃপক্ষের। এখানে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা নেই। তাঁদের পরামর্শ ছিল কলেজের প্রধান ফটকের পাশে ভেতরে উত্তর পাশে এটি নির্মাণের, কিন্তু এতে কলেজ কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়াও তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপর কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর করছে। তারাই স্থান নির্ধারণ করেছে। এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশলীর মন্তব্য জানানোর পর তিনি আবার বলেন,‘আসলে আমরাই তাদের বলেছি, এখানে কাজ করা যাবে কি না। তারা রাজি হওয়ায় এখন কাজ হচ্ছে। এত দিন কেউ কিছু বলেনি। এখন অনেকেই কথা বলছে। আমি ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে নই। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলব।’