নিখোঁজের ১৫ দিন পর মরুভূমি থেকে সৌদিপ্রবাসী মাদারীপুরের তরুণ সবুজ মাতুব্বরের (২৪) মরদেহ উদ্ধার করেছে সৌদি পুলিশ। গত সোমবার দেশটির আল কাসিম এলাকায় মরুভূমিতে বালু ও পাথরচাপা অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। সবুজের লাশ উদ্ধারের খবরে দেশে তাঁর পরিবারে মাতম চলছে। স্বজনেরা কেউ তাঁর মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না।

সবুজ মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের মানিকপুর এলাকার ভ্যানচালক আবদুল জলিল মাতুব্বরের একমাত্র ছেলে। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় আট মাস আগে তিনি সৌদি আরবে পাড়ি দিয়েছিলেন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সবুজ প্রথমে সৌদি আরবের রিয়াদে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করতেন। পরে উন্নত কাজের খোঁজে আল কাসিম এলাকায় থাকা শুরু করেন। সেখানকার একটি বাগানে কাজ করতেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত আটটার দিকে সবুজের সঙ্গে তাঁর বাবা জলিল মাতুব্বরের সর্বশেষ কথা হয়। বাড়িতে মিলাদ পড়ানোর জন্য টাকা পাঠানোর কথা জানিয়ে ফোন রাখেন সবুজ। ১ অক্টোবর সকালে তাঁর টাকা পাঠানোর কথা ছিল। টাকা না আসায় ওই দিন দুপুরে সবুজের নম্বরে কল দিলে নম্বর বন্ধ পায় পরিবার। পরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁর খোঁজ না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন স্বজনেরা।

পরে সৌদিতে থাকা অন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে স্বজনেরা খবর পান, ১ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি সবুজ। এরপর প্রবাসী বাংলাদেশিরা সবুজের সন্ধান চেয়ে সৌদি পুলিশের সহযোগিতা চান। পরে সৌদি পুলিশ গত সোমবার আল কাসিম এলাকায় মরুভূমিতে বালু ও পাথরচাপা এক মরদেহ খুঁজে পায়। মরদেহটি সবুজের বলে নিশ্চিত করেছেন সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সেই খবর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সবুজের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে মাতম শুরু হয়।

আজ বুধবার সকালে সবুজের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা বাড়ির আঙিনায় ভিড় করছেন। উঠানে বিছানো মাদুরে নির্বাক বসে আছেন বাবা-মা। কিছুক্ষণ পরপর ডুকরে কেঁদে উঠছেন। কান্না ছুঁয়ে গেছে পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যেও। সবুজের এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না। যারা সবুজের মৃত্যুর জন্য দায়ী তাদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

সবুজের বাবা জলিল মাতুব্বর আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘বাবায় আমারে মিলাদের জন্য ১০ হাজার টাকা পাঠাইতে চাইছিল। আমার সঙ্গে ওইটাই তার শেষ কথা। এত দিন নিখোঁজ ছিল। গতকাল ওখানে লাশ পাইছে। সৌদি থেকে জানাইছে লাশ সবুজের! সবুজ আর বাঁইচা নাই। আমরা এখন কী করমু, কার কাছে যামু? একটাই পোলা আমার। সবকিছু শেষ হইয়া গেল।’

সবুজ মাতব্বর.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ত ব বর প রব স সব জ র স বজন

এছাড়াও পড়ুন:

ইবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ, রেহায় পায়নি রোগীরা

সড়ক সংস্কারের দাবিতে খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে আগ্রাসনবিরোধী শিক্ষার্থী জোটের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন  সড়ক অবরোধ করেন তারা। পরে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরুর আশ্বাস দিলে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কর্মসূচি স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা। 

আরো পড়ুন:

ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং কমিশন গঠনের আহ্বান ডাকসু ভিপির

‎জাতীয় পলিসি হ্যাকাথনে চ্যাম্পিয়ন বেরোবি শিক্ষার্থীরা

এদিকে, সড়ক অবরোধ চলাকালে আটকে ছিল জরুরি রোগী বহনের কাজে নিয়োজিত খুলনা বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের একটি পরিবহন। চালক ও হেলপার তাদের ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও ১ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে গাড়িটি আটকে রাখেন আন্দোলনকারীরা।

এতে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চক্ষু রোগী ও তাদের স্বজনরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সংস্কারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘সড়ক প্রশাসনের হয়রানি, মানি না মানবো না’, ‘প্রশাসনের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এ সময় জরুরি রোগী বহনের কাজে নিয়োজিত খুলনা বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের একটি পরিবহন আটকে থাকতে দেখা যায়।

আন্দোলনকারীরা বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ পর্যন্ত উভয় সড়কের অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দে ভরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়েন। এই সড়ক সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা দাবি জানালেও সংস্কারের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অথচ প্রতিনিয়ত হাজার হাজার শিক্ষার্থী মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তায় চলাচল করছে।

তারা বলেন, এর আগে কয়েক দফায় আমরা মিটিং মিটিং খেলা খেলেছি। কিন্তু কাজ হয়নি। এবার আমরা দুই জেলার প্রশাসনকে বাধ্য করে আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায় করে নিতে চাই। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা চাচ্ছি কোনোরকম তালবাহানা না করে দ্রুত এই সড়ক সংস্কার করা হোক।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন মুঠোফোনে আন্দোলকারীদের জানান, আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে রাস্তার গর্তগুলো সংস্কার করা হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হবে। পরবর্তীতে রাস্তা পুরোপুরি সংস্কার করা হবে।

এদিকে গাড়ি আটকে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগী চক্ষু রোগীরা বলেন, আমরা খুলনার শিরোমনি হাসপাতাল থেকে আসছি। সকালে হালকা নাস্তা করছি আর ডাক্তাররা আমাদের অপারেশন করেছে। আমাদের এত ক্ষুধা লেগেছে যে, আমরা এখন চলতেই পারছি না। রোগী বহনের গাড়ি হওয়ার পরও আমাদের গাড়িটি যেতে দিচ্ছে না। 

সড়ক অবরোধে ক্ষোভ প্রকাশ করে গাড়ি চালকরা বলেন, এ রকম হুটহাট রাস্তা আটকে দেওয়ায় আমরা ভোগান্তিতে পড়ি। দূরদূরান্তের গাড়ি ও যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমরাও চাই এই সড়ক সংস্কার করা হোক। কিন্তু এই অবরোধের কথা আমাদের আগেই জানিয়ে দিলে আমরা গাড়ি নিয়ে এই সড়কে আসতাম না। ফলে আমাদের ভোগান্তি হত না।

এ বিষয়ে আগ্রাসনবিরোধী শিক্ষার্থী জোটের প্রধান এসএম সুইট বলেন, “আমাদের এখানে আসার ১০-১২ মিনিট পরে আমরা গাড়িটা ছেড়ে দেই। কখন থেকে ছিল সেটা আমাদের নজরে আসেনি।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ