সপ্তাহখানেক আগে প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত একটি লেখার শিরোনাম ছিল ‘ উপদেষ্টারা কীভাবে আখের গুছিয়েছেন’, ‘কেন সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন’। লেখাটি শুরু হয়েছিল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের একটি সাক্ষাৎকারের সূত্র ধরে। লেখাটি শেষ হয়েছিল, ‘আখের গোছানো’ এবং ‘সেফ এক্সিট’ নিতে চাওয়া উপদেষ্টাদের নাম প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে।

নাহিদ ইসলামের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন উপদেষ্টা প্রকাশ্যে তাদের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে.

জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। তাঁদের মধ্যে রিজওয়ানা হাসান ‘সেফ এক্সিট’ নিতে চাওয়া উপদেষ্টাদের নাম প্রকাশের জন্য নাহিদ ইসলামের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনউপদেষ্টারা কীভাবে ‘আখের গুছিয়েছে’, কেন ‘সেফ এক্সিটের কথা ভাবতেছে’০৮ অক্টোবর ২০২৫

‘সেফ এক্সিট কারা চাইছেন, শিগগিরই তালিকা প্রকাশ করবে এনসিপি’—এই রকম শিরোনামের একটি খবর নজরে এসেছে (যুগান্তর অনলাইন, ১৪ অক্টোবর ২০২৫)। এরপর এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্থা শারমিনও এ বিষয়ে কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট নিয়ে যা বলেছেন, তা নিছক কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নয়। তিনি (নাহিদ) নিজেও উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন। সরকারের ভেতর থেকে তিনি অনেকের ভূমিকা পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। তবে কোন কোন উপদেষ্টা সেফ এক্সিট চান, তাঁদের নামের তালিকা হয়তো তার কাছে আছে।’ (সরকারকে সতর্কবার্তা: কে কোন দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরে পড়তে চান, জাতিকে জানাবে এনসিপি, যুগান্তর অনলাইন ১৪ অক্টোবর ২০২৫)

নাহিদ ইসলাম তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, অনেক উপদেষ্টা নিজেদের আখের গুছিয়েছেন এবং সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন। (উপদেষ্টাদের অনেকেই সেফ এক্সিটের কথা ভাবতেছে, নাহিদ ইসলামের এ বক্তব্য নিয়ে আলোচনা, প্রথম আলো অনলাইন, ৫ অক্টোবর ২০২৫)

লক্ষণীয় হলো, সপ্তাহখানেক পরে সামান্তা শারমিন বললেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রত্যেক উপদেষ্টা নিজের আখের গোছানোর কাজ করে রেখেছেন।….’ (প্রত্যেক উপদেষ্টা আখের গোছানোর কাজ করে রেখেছেন: সামান্তা শারমিন, সমকাল অনলাইন, ১২ অক্টোবর ২০২৫)

অল্প কয়েক দিনের মধ্য ‘অনেক’ থেকে সরে এসে ‘প্রত্যেক’ উপদেষ্টার বিরুদ্ধে আখের গোছানোর অভিযোগ করা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এটা কি এনসিপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব আরও বেড়ে যাওয়ার কোন ইঙ্গিত দিচ্ছে?

২.

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কোন কোন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ‘মহা ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘...সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে ভূমিকা রাখতে হয়; কিন্তু আমরা দেখছি, সেই নিরপেক্ষ প্রশাসন, সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনকে আবার দলীয়করণের জন্য এক মহা ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’ (কোন কোন উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে, তাঁদের নাম ও কণ্ঠ রেকর্ড আছে: জামায়াত নেতা তাহের, প্রথম আলো অনলাইন, ১৪ অক্টোবর ২০২৫)

পুলিশ–প্রশাসনে নিজ দলীয় আদর্শের লোক বসানো যদি ‘ষড়যন্ত্র’ হয়, তাহলে সে ধরনের অভিযোগ জামায়াতের বিরুদ্ধেও উঠেছে। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনে খুঁজে খুঁজে ‘‘শিবির ক্যাডার ও জামায়াতে ইসলামী মতাদর্শের লোকজনকে’’ বসানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।’ (প্রশাসনে খুঁজে খুঁজে ‘জামায়াত-শিবিরের’ লোক বসানো হচ্ছে: রিজভী, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫)

এর আগে অবশ্য তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বিএনপি এবং জামায়াত দুই বলের বিরুদ্ধেই প্রশাসনে লোক নিয়োগের অভিযোগ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কাড়াকাড়ি করে প্রশাসনিক জায়গাগুলোতে তাদের লোক নিয়োগ করিয়েছে।’ (কাড়াকাড়ি করে প্রশাসনে লোক নিয়োগ করিয়েছে বিএনপি-জামায়াত: তথ্য উপদেষ্টা, প্রথম আলো অনলাইন, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫)

অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিএনপি ও জামায়াত–সমর্থিত ব্যক্তিরা রয়েছেন, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। লক্ষণীয় হলো ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে যে দুজন উপদেষ্টা এখনো সরকারে আছেন, তাঁদের আবার এনসিপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে সরকারে এ তিনটি দলেরই লোক রয়েছে—এটা বলাই যেতে পারে। বিভিন্ন সময়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে  এ তিনটি দলকে ‘দৃষ্টিকটুভাবে’ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এমনকি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী  হিসেবে শুধু এই দলগুলো থেকেই প্রতিনিধি নেওয়া হয়েছিল। এর ফলে সরকারে সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টা দৃশ্যমান হয়েছে।

তাহলে জামায়াত এবং এনসিপি এখন কেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ‘আখের গোছানো’, ‘সেফ এক্সিট নেওয়া’ কিংবা ‘ষড়যন্ত্র’ করার মতো গুরুতর সব অভিযোগ উত্থাপন করছে? এসব অভিযোগের মাধ্যমে  সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নও উঠেছে। কেউ কেউ পাল্টা ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত করার কথাও বলছেন।

‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার গভীর চক্রান্ত শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তাঁর ভাষ্য, উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিটের আলোচনা সামনে এনে সরকারের প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরির চেষ্টা চলছে।’ (অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে : রাশেদ খান, কালের কণ্ঠ অনলাইন, ১৪ অক্টোবর ২০২৫)

শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে, অনেকেই এমন প্রত্যাশা করেছিলেন; কিন্তু সেটি যে হয়নি, পুরোনো নানা প্রবণতা ও দৃষ্টান্ত থেকে তা স্পষ্ট। এরই অংশ হিসেবে পুলিশ–প্রশাসনে নিজেদের লোক বসানো থেকে শুরু করে উপদেষ্টাদের ‘ব্ল্যাকমেল’ করার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। পরিহাসের বিষয় হলো, এসব অনেক কিছুই হচ্ছে ‘নতুন বন্দোবস্তের’ নামে।৩.

রাজনীতিতে ‘কন্সপিরেসি থিওরি’ বা ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ খুবই জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত একটি বিষয়। রাজনীতিবিদেরা কারণে-অকারণে, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ষড়যন্ত্র বা চক্রান্তের কথা বলে থাকেন। এগুলো কতটা সত্যি আর কতটা প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করা, বেকায়দায় বা চাপে ফেলা কিংবা নিজেদের সুবিধা আদায়ের জন্য ব্যবহৃত হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ কারণেই ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ থেকে একটু বাস্তব পরিস্থিতির দিকে ফিরে তাকানো দরকার।

এক-দেড় দশকের দীর্ঘ স্বৈরাচারী শাসনের পর বাংলাদেশে এখন একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন এই গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রধান উপলক্ষ হবে বলে অনেকেই প্রত্যাশা করছেন। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল অবশ্য এ নির্বাচনে জয়ী হওয়া নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নয়। সরকারে নিজেদের লোক থাকার কারণে এখন তারা যেভাবে সুবিধা পাচ্ছে বা ক্ষমতার চর্চা করতে পারছে, নির্বাচনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেটি যে সম্ভব হবে না, এটাও তারা বুঝতে পেরেছে।

এ কারণেই নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া কিংবা সেটি সম্ভব না হলে নির্বাচনের সময় বিশেষ কোনো সুবিধা পাওয়ার উদ্দেশ্য থেকে তারা সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ বিষয়টি স্পষ্ট করেই বলেছেন। (জামায়াত পিআর ও গণভোটের কথা বলে নির্বাচন পেছাতে চায়: রিজভী, ৭১টিভি অনলাইন, ১৪ অক্টোবর ২০২৫)

এ ক্ষেত্রে যে বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয়, তা হলো—অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা যেসব উপদেষ্টা নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, কোনো কোনো দলের পক্ষ থেকে তাঁদের অনৈতিক ও বেআইনি পন্থায় চাপ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। জামায়াত নেতা তাহের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে শুধু ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি বলেছেন, ‘...কোন কোন উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, আমাদের কাছে নাম আছে। তাঁদের কণ্ঠ রেকর্ড আছে। মিটিংয়ে তাঁরা কী বক্তব্য দেন, এর খবর আছে।…’ ( প্রথম আলো অনলাইন, ১৪ অক্টোবর ২০২৫)

অনুমতি ছাড়া যেকোনো ব্যক্তির কণ্ঠ বা ভয়েস রেকর্ড করা একই সঙ্গে অনৈতিক ও বেআইনি কাজ। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থার এ ধরনের অনুমতি রয়েছে। একইভাবে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া উপদেষ্টাদের বৈঠকের বিষয়টিও ‘কনফিডেনশিয়াল’ বা গোপনীয়। এখন প্রশ্ন উঠছে, উপদেষ্টাদের কণ্ঠ বা ভয়েস কোন কৌশলে রেকর্ড করা হলো? কারা এই কল রেকর্ড করল? মিটিংয়ে দেওয়া উপদেষ্টাদের বক্তব্যের খবর কীভাবে জামায়াত নেতার কাছে গেল?

গোপনে কল রেকর্ড করার এ বিষয়টি বিগত স্বৈরাচারী আমলের একটি প্রবনতা ছিল। সেই সময় গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে কল রেকর্ড করে কাউকে কাউকে ব্ল্যাকমেল করা হয়েছে, এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। আগের আমলের সেই প্রবণতা বহাল রাখা এবং একজন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যে সেই ধরনের ইঙ্গিত থাকার বিষয়টি খুবই আশঙ্কাজনক।

শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে, অনেকেই এমন প্রত্যাশা করেছিলেন; কিন্তু সেটি যে হয়নি, পুরোনো নানা প্রবণতা ও দৃষ্টান্ত থেকে তা স্পষ্ট। এরই অংশ হিসেবে পুলিশ–প্রশাসনে নিজেদের লোক বসানো থেকে শুরু করে উপদেষ্টাদের ‘ব্ল্যাকমেল’ করার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। পরিহাসের বিষয় হলো, এসব অনেক কিছুই হচ্ছে ‘নতুন বন্দোবস্তের’ নামে।

মনজুরুল ইসলাম  প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক

*মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ন ক ন উপদ ষ ট ন হ দ ইসল ম র উপদ ষ ট দ র র কর ড কর উপদ ষ ট র প রথম আল ষড়যন ত র র জন ত ক ল ক বস ন সরক র র অন ক ই কর র চ প রক শ র পর ব বল ছ ন ব ষয়ট ধরন র এনস প ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেলেন যারা

এ বছর নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা শেষ হয়েছে। প্রতি বছর অক্টোবরের প্রথম সোমবার থেকে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। ২০২৫ সালে যারা নোবেল পুরস্কার পেলেন তাদের নিয়ে বিস্তারিত রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

চিকিৎসাবিজ্ঞান
২০২৫ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মেরি ই ব্রাঙ্কো, ফ্রেড রামসডেল এবং শিমন সাগাগুচি। পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স সম্পর্কিত মৌলিক আবিষ্কারের এই তিন বিজ্ঞানীকে যৌথভাবে এ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন ৩ জন

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মাচাদো কি আসলেই শান্তিকামী?

৬ অক্টোবর এই তিন বিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করে সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের নোবেল অ্যাসেমব্লি। মেরি ই ব্রাঙ্কো যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটেলের ইনস্টিটিউট ফর সিস্টেমস বায়োলজির গবেষক, ফ্রেড র‍্যামসডেল যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর সোনোমা বায়োথেরাপিউটিক্সের গবেষক এবং শিমন সাকাগুচি জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক।

দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কেমন করে নিজের অঙ্গপ্রতঙ্গের ক্ষতি না করে জীবাণু থেকে সুরক্ষা দেয়, সেই কৌশল উদঘাটনের স্বীকৃতিতে এই তিন গবেষক এ বছর চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পেলেন।

চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে নোবেল পেয়েছেন মেরি ই ব্রাঙ্কো, ফ্রেড রামসডেল এবং শিমন সাগাগুচি

ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের নোবেল অ্যাসেমব্লি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘তাদের আবিষ্কার গবেষণার একটি নতুন ক্ষেত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং নতুন চিকিৎসার বিকাশকে উৎসাহিত করেছে, উদাহরণস্বরূপ ক্যানসার ও অটোইমিউন রোগের জন্য।’

পদার্থবিজ্ঞান
২০২৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে তিন জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ৭ অক্টোবর সুইডিশ রয়েল একাডেমি অব সায়েন্স এবারের বিজয়ী হিসেবে জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ. ডেভোরেট এবং জন এম. মার্টিনিসের নাম ঘোষণা করেছে। তারা ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষক।

‘ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং এবং ইলেকট্রিক সার্কিটে এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন’ আবিষ্কারের এই তিন বিজ্ঞানীকে যৌথভাবে এ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে।

 পদার্থবিজ্ঞানে জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ. ডেভোরেট এবং জন এম. মার্টিনিস নোবেল পেয়েছেন

রসায়ন
২০২৫ সালে রসায়নে তিন জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ৮ অক্টোবর   সুইডিশ রয়েল একাডেমি অব সায়েন্স এবারের বিজয়ী হিসেবে জাপানের কিউটো বিশ্ববিদ্যালয়ের সুসুমু কিতাগাওয়া, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিচার্ড রবসন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওমর এম. ইয়াগির নাম ঘোষণা করে।

‘ধাতব জৈব-কাঠামো’ উন্নয়নের জন্য এই তিন বিজ্ঞানীকে যৌথভাবে এ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে। তাদের উদ্ভাবিত এই আণবিক কাঠামো এত বড় যে এর মধ্য দিয়ে গ্যাস ও তরল প্রবাহিত হতে পারে।

রসায়নে সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন এবং ওমর এম. ইয়াগির নোবেল পেয়েছেন

সাহিত্য
২০২৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাজলো ক্রাজনাহরকাইকে। ৯ অক্টোবর সুইডিশ একাডেমি তার নাম ঘোষণা করে।

সুইডিশ অ্যাকাডেমি বলেছে, আকর্ষণীয় এবং দুরদর্শী রচনার জন্য তাকে এ বছর সাহিত্যে নোবেল দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, তার লেখনি বৈশ্বিক ভয়াবহতার মধ্যে শিল্পের শক্তিকে পুনরায় নিশ্চিত করেছে।

লাজলো ক্রাজনাহরকাই ডিস্টোপিয়ান ও বিষণ্ণতাময় উপন্যাসগুলোর জন্য খ্যাত। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে আছে, সাটানট্যাঙ্গো, দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স। এগুলো পরবর্তীতে চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। তিনি ২০১৫ সালে ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার এবং ২০১৯ সালে ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড ফর ট্রান্সলেটেড লিটারেচার জেতেন।

হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাজলো ক্রাজনাহরকাই

শান্তি
ভেনিজুয়েলায় জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অবিচল সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২৫ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান দেশটির রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকারকর্মী মারিয়া কোরিনা মাচাদো।

১০ অক্টোবর শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। নোবেল কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “২০২৫ সালের শান্তি পুরস্কার যাচ্ছে এক সাহসী ও নিবেদিতপ্রাণ শান্তির নেত্রীর কাছে। তিনি এমন এক নারী, যিনি ক্রমবর্ধমান অন্ধকারের মধ্যেও গণতন্ত্রের শিখা জ্বালিয়ে রেখেছেন।”

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, “ভেনেজুয়েলার ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসের নেতা হিসেবে মারিয়া কোরিনা মাচাদো লাতিন আমেরিকার নাগরিক সাহসিকতার অন্যতম অসাধারণ উদাহরণ।”

অর্থনীতি
২০২৫ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জোয়েল ময়কার, ফ্রান্সের ফিলিপ এজিওঁ এবং পিটার হাউইট। মূলত ‘উদ্ভাবননির্ভর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাখ্যা করার জন্য’ তাদের দুজনকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস ১৩ নভেম্বর এই পুরস্কার ঘোষণা করে।

জোয়েল ময়কার যুক্তরাষ্ট্র ইলিনয়ের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষক। ফিলিপ এজিওঁ ফ্রান্সের নাগরিক এবং তিনি কলেজ দে ফ্রান্স এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের সঙ্গে যুক্ত। পিটার হাউইট যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটি, প্রভিডেন্সের অধ্যাপক।

নোবেল কমিটি বিবৃতিতে বলেছে, গত দুই শতাব্দীতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্ব দেখেছে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এর ফলে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ, আর এর ওপরই গড়ে উঠেছে আমাদের সমৃদ্ধির ভিত্তি। এ বছরের অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী তিন বিজ্ঞানী-জোয়েল ময়কার, ফিলিপ এজিওঁ ও পিটার হাউইট-দেখিয়েছেন, কীভাবে উদ্ভাবন আরো অগ্রগতির প্রেরণা জোগায়।

ফিলিপ এজিওঁ ও পিটার হাউইটও টেকসই প্রবৃদ্ধির প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করেছেন। ১৯৯২ সালে তারা তৈরি করেন এক গাণিতিক মডেল, যার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয় ‘সৃষ্টিশীল ধ্বংস’ প্রক্রিয়াকে। অর্থাৎ, যখন কোনো নতুন ও উন্নত পণ্য বাজারে আসে, তখন পুরোনো পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় হার মানে। নতুন উদ্ভাবন তাই যেমন সৃষ্টিশীল, তেমনি ধ্বংসাত্মকও-কারণ এটি পুরোনো প্রযুক্তিকে অচল করে দেয়।

বিভিন্নভাবে এই নোবেলজয়ীরা দেখিয়েছেন, সৃষ্টিশীল ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া সংঘাতও সৃষ্টি করে, যা গঠনমূলকভাবে সামলাতে হয়। অন্যথায়, বড় কোম্পানি বা প্রভাবশালী স্বার্থগোষ্ঠী নিজেদের ক্ষতির আশঙ্কায় নতুন উদ্ভাবনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

অর্থনীতিতে নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান জন হাসলার বলেন, “নোবেলজয়ীদের গবেষণা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়-অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্বয়ংক্রিয় কিছু নয়। আমাদের অবশ্যই সেই প্রক্রিয়াগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে, যা সৃষ্টিশীল ধ্বংসকে সম্ভব করে তোলে। তা না হলে আমরা আবার স্থবিরতার যুগে ফিরে যেতে পারি।”

তথ্যসূত্র: নোবেল প্রাইজ ডট অর্গ, বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স

/এসবি/

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুবিতে আন্তঃবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতা উদ্বোধন
  • প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি ইস্যুতে সভা ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, যারা থাকবেন
  • বিইউপির ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু ১০ নভেম্বর
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৫ অক্টোবর ২০২৫)
  • ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেলেন যারা
  • কোন কোন উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে, তাঁদের নাম ও কণ্ঠ রেকর্ড আছে: জামায়েত নেতা তাহের
  • একটি দল নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে: আমানউল্লাহ আমান
  • দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সজাগ থাকতে হবে : সাখাওয়াত