আইভীর সহযোগীদের রামরাজত্ব : ঠিকাদারী কাজ, দোকান ও স্থাপনা দখলের অভিযোগ
Published: 15th, October 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে জীবন কাটালেও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের অনেকে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
এদের মধ্যে অন্যতম জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান, আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন স্বপন এবং আইভীর সাবেক বডিগার্ড শফিকুল ইসলাম।
জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মেয়র আইভীর ঘনিষ্ঠতার সুযোগে এই তিনজন সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ঠিকাদারী কাজ, দোকান ও স্থাপনা নিজেদের দখলে নেন। বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তারা নিজেদের ও আত্মীয়-স্বজনদের নামে এসব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন।
তালিকা অনুযায়ী, শুধু টানবাজারের পদ্মা সিটি প্লাজা-১ এ অন্তত ৭টি দোকান রয়েছে আবু সুফিয়ানের দখলে, তার মা-বাবার নামে।
এছাড়া চাষাড়া সিটি মার্কেটে ৪টি দোকান, ১নং ডিআইটি সংলগ্ন সিটি বিপণি বিতান মার্কেটে ১টি দোকান এবং আরও কয়েকটি ফ্ল্যাট ও ব্যবসায়িক স্পেস তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানা গেছে।
একসময় ভবঘুরে জীবনের অধিকারী সুফিয়ান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আইভীর আশীর্বাদে পরিণত হন বিত্তশালী ব্যবসায়ীতে। এমনকি একসময় “বর্ষসেরা করদাতা” নির্বাচিত হওয়ায় শহরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
আইভীর ভাই উজ্জ্বলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত রুহুল আমিন স্বপনের বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক স্থাপনা ও ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ। শুরুতে তিনি নির্মাণাধীন ভবনে রড সরবরাহ করতেন, পরে নিজেই হয়ে ওঠেন ঠিকাদার।
বলা হয়, আইভীর ছত্রছায়ায় থেকে মন্ডলপাড়া সিটি কর্পোরেশনের গ্যারেজের পাশের জায়গাসহ একাধিক দোকান ও ফ্ল্যাট দখল করেন তিনি।
স্থানীয়দের ভাষায়, একসময় বিদেশ ফেরত স্বপনের অবস্থা ছিল শোচনীয়। কিন্তু আইভীর ঘনিষ্ঠ হওয়ার পর তার ভাগ্য বদলে যায়। আজ তিনি কোটি টাকার মালিক, যার সম্পদের পরিমাণ তিনি নিজেও জানেন না এমনটাই বলছে বাবুরাইলের মানুষজন।
সাবেক মেয়র আইভীর বডিগার্ড শফিকুল ইসলাম সরকারি বেতনভুক্ত হলেও আইভী মেয়র না থাকা অবস্থাতেও তাকে নিয়মিত অনুসরণ করতে দেখা গেছে।
এই ঘনিষ্ঠতার সুযোগে নিজের স্ত্রী, ভাই শরিফুল ইসলাম ও আত্মীয়দের নামে সিটি কর্পোরেশনের বেশ কয়েকটি দোকান ও ফ্ল্যাট দখল করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মিন্নত আলী মাজার সংলগ্ন মার্কেটে কয়েকটি দোকান, দিগু বাবুর বাজারে একাধিক স্পেস, এমনকি নগরভবনের সামনে ওয়ান ব্যাংকের পাশের দোকানটিও এখনো শফিকুলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
৫ আগস্টের পর থেকে আবু সুফিয়ান, স্বপন ও শফিকুল আত্মগোপনে চলে যান। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া একাধিক মামলায়ও তারা আসামি বলে জানা গেছে। তবুও তাদের প্রভাব এখনও বিদ্যমান বলে অভিযোগ করেছেন নগরবাসী।
নগরবাসীর অভিযোগ, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর এই তিনজন এখনো সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন স্থাপনায় দখল করে রেখেছেন। তারা এসব দখলদারদের হাত থেকে স্থাপনা মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
নাসিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, “সিটি কর্পোরেশনের কোনো সম্পত্তি ব্যক্তিগতভাবে দখলে রাখা যাবে না। অভিযোগ পেলে আমরা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেব।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৯ মে সকালে শ্রমিক সজল মিয়া হত্যা মামলাসহ হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ছয়টি মামলায় সাবেক মেয়র আইভীকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ অপর ধ র ঘন ষ ঠ এক ধ ক আওয় ম আইভ র স বপন
এছাড়াও পড়ুন:
যে উদ্ভিদের জন্য মাছ ধরা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেটাই এখন রফিকুলদের আয়ের উৎস
শেরপুরের নকলা উপজেলার গণপদ্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। তিনি একসময় পাশের পেকুয়া বিলে মাছ ধরতেন। সেই আয়েই চলত তাঁর সংসার। তবে একসময় বিলজুড়ে কচুরিপানা ও শ্যাওলা জাতীয় ভাসমান উদ্ভিদ ‘ঝাই’ ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যায়। তবে যেই ‘ঝাই’ একসময় তাঁর জীবিকায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল, সেই ‘ঝাই’ নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে তাঁর জীবনে। এখন এটাই তাঁর আয়ের উৎস।
শুধু রফিকুল নন; উপজেলার পেকুয়া বিলঘেঁষা গণপদ্দি, জালালপুর ও গজারিয়া—এই তিন গ্রামের শতাধিক পরিবার এখন ‘ঝাই’ সংগ্রহ ও বিক্রিতে যুক্ত। এর আয়েই চলে তাদের সংসার।
এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক ভ্যান ঝাইয়ের ওজন ৮ থেকে ১০ মণ হয়। আকারভেদে এই পরিমাণ ঝাই ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্থানীয় লোকজন নৌকা নিয়ে বিলে গিয়ে ঝাই তোলেন। নৌকায় ভরে ডাঙায় নিয়ে আসেন। পরে ভ্যানে করে বিক্রি করেন। গত ১০ বছর ধরে তাঁরা ঝাই বিক্রি করছেন। এলাকায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় তাঁরা খুশি।
ঝাই একধরনের ভাসমান সবুজ উদ্ভিদ। এটি বিল বা খালের পানির ওপর চাদরের মতো ভেসে থাকে। অনেক এলাকায় একে ‘তরুলতা’ বা ‘জলঢাকনা’ নামেও ডাকা হয়। রুই, কাতলা, মৃগেল, শিং, মাগুর ও তেলাপিয়া মাছ ঝাই খায়। প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় বলে এটি মাছের সাশ্রয়ী খাবার হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
গণপদ্দি গ্রামের আবদুর রফ বলেন, আগে মাছ ধরে তাঁর সংসার চলত। ঝাই বাড়ায় মাছ ধরা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে বিল থেকে ঝাই তুলে বিক্রি শুরু করেন। এখন দিনে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হয় তাঁর। এখন ভালোভাবেই সংসার চলে।
গজারিয়া গ্রামের আশরাফ আলী বলেন, তাঁরা তিন–চারজন মিলে দিনে চার ভ্যান ঝাই তোলেন। ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা পাওয়া যায়। অনেকেই এখন এই ঝাই বিক্রি করে সংসার চালান।
প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় বলে ঝাই মাছের সাশ্রয়ী খাবার হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে